“যে হৃদয় শাহাদাতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা লালন করে, সে হৃদয় কখনো হতাশ হয় না,” লেখা আছে তার ফেইসবুক প্রোফাইলের পরিচিতিতে।
Published : 17 Jul 2024, 12:37 AM
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে চট্টগ্রামে আন্দোলনে যোগ দিয়ে সংঘর্ষে নিহত ফয়সাল আহমদ শান্তর মা হাসপাতালে এলেও কারো সঙ্গে কোনো কথা বলেননি তিনি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শান্তর নাম সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারার তথ্য দিয়েছেন।
চমেক কর্তৃপক্ষ বলেছে, শান্তর মা ও তার কয়েকজন স্বজন রাতে হাসপাতালে এসেছিলেন। তবে তারা কোনো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।
শান্তর ফেইসবুক প্রোফাইলে গিয়ে দেখা যায়, তিনি ওমরগণি এমইএস কলেজের ছাত্র। কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে সোমবার একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তিনি।
সেখানে শান্ত লেখেন, “সশস্ত্র ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হামলায় রক্তাক্ত হল অসংখ্য নারী শিক্ষার্থীরা। এই সন্ত্রাসীদের হাতে নিরাপদ নয় আমাদের মা-বোনেরা। এই সন্ত্রাসীদের হাতে নিরাপদ নয় আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এই সন্ত্রাসীদের হাতে নিরাপদ নয় আমাদের দেশ।”
তারপরই তিনি লেখেন, “ছাত্রলীগ হটাও, দেশ বাঁচাও। স্বৈরাচার হটাও, দেশ বাঁচাও।”
শান্ত ফেইসবুক প্রোফাইলে নিজের পরিচিতিতে লেখা রয়েছে, “যে হৃদয় শাহাদাতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা লালন করে, সে হৃদয় কখনো হতাশ হয় না।”
মঙ্গলবার চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষে যে তিনজন নিহত হয়েছেন, তার মধ্যে একজন শান্ত (২০)। তিনি বিকালে মারা যান, তবে রাত ১০টা পর্যন্ত তার বিস্তারিত পরিচয় মেলেনি।
কলেজের সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে যতটুকু জানা যাচ্ছে, শান্ত ওমরগণি এমইএস কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড এলাকায় থাকতে তিনি। তার বাবার নাম জাকির।
মঙ্গলবার বিকালে নগরীর মুরাদপুর থেকে ষোলশহর পর্যন্ত এলাকায় দফায় দফায় আন্দোলনকারী, ছাত্রলীগ ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। সেখানে শান্ত নিহত হন।
কোটাবিরোধীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে এবং গুলি চালায়।
ছাত্রলীগের পাল্টা অভিযোগ, কোটা আন্দোলনকারীদের মধ্যে বহিরাগত ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অস্ত্র নিয়ে যোগ দেয় এবং তারা গুলি চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা এ দিন দুপুরে ষোলশহর রেল স্টেশনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে। সেখানে আগেই অবস্থান নিয়েছিলেন সরকারদলীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আন্দোলনকারীরা ষোলশহর রেল স্টেশন এলাকায় অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে মুরাদপুর মোড়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা হয়। পরে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
দুই পক্ষের মধ্যে ঢিল ছোড়াছুড়ি শুরু হলে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সড়কে বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। পুলিশ দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে।
আরও পড়ুন
‘চলে আসুন ষোলশহর’ পোস্ট দেওয়ার ৪ ঘণ্টা পর ওয়াসিমের মৃত্যু
হোটেলে ভাত খেয়ে ফিরছিলেন কাজে, সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে প্রাণ গেল ফারুকের