সাত মাসের শিশুকে হারিয়ে গোটা বাড়ি জুড়ে চলছে বিলাপ।
Published : 19 Apr 2025, 10:29 PM
পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখা সাত মাসের শেহরিজকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ গোটা পরিবার। তার মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছে না কেউ।
ফুটফুটে শিশুটি শুক্রবার ফুফুর বাসায় যাওয়ার পথে নালায় পড়ে তলিয়ে যায়। ১৪ ঘণ্টা পর তার বাড়ির কাছ থেকেই উদ্ধার করা হয় নিথর দেহ।
চট্টগ্রামের কাপাসগোলার এ ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে সবাইকে। শোকে বারবার অচেতন হয়ে পড়ছেন শিশুটির মা, ফুফু আর দাদি। তাদের বিলাপ থামছেই না।
নগরীর আসাদগঞ্জ শুঁটকিপট্টি এলাকার মসজিদ গলিতে ইব্রাহীম সওদাগর ভবনে থাকে শেহরিজের পরিবার। এ বাড়িটি তাদেরই। এ ছাড়া মূল বাড়ি রয়েছে নগরীর বাকলিয়া এলাকার বজ্রঘোনায়।
শেহেরিজের বাবা মোহাম্মদ শহিদুল চাক্তাই এলাকার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। মা উম্মে সালমা গৃহিনী।
শুক্রবার মা ও দাদির সঙ্গে শেহেরিজের যাওয়ার কথা ছিল কাপাসগোলায় ফুফুর বাসায়। কিন্তু গলিতে পানি ওঠায় অটোরিকশা থেকে নেমে ব্যাটারির রিকশায় ওঠেন সালমারা। একপর্যায়ে সড়কের পাশেই খোলা বড় নালায় পড়ে যায় রিকশাটি। এতে সালমা ও তার মা উঠে আসলেও স্রোতে তলিয়ে যায় শিশুটি।
শহিদুলের বোন জামাই শাওন মারুফ তুহিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদের এক দিন পর শেহেরিজের ছয় মাস পূর্তিতে বাসায় কেক কাটা হয়েছিল। সে ছিল পরিবারের সবার আদরের। তার মৃত্যু পরিবারের সবাইকে শোকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। শেহরিজের মা, দুই ফুফু ও দাদি দফায় দফায় অচেতন হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসার জন্য তাদের হাসপাতালেও নেওয়া হয়।”
শুক্রবার রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তুহিন বলেন, “তারা আসাদগঞ্জ থেকে সিএনজি করে কাপাসগোলা এলাকায় আমার বাসায় যাচ্ছিল। কিন্তু নবাব হোটেল পাশের গলিতে পানি ওঠায় তারা একটি ব্যাটারির রিকশায় ওঠে। সেটাতে শেহেরিজের মা ও দাদি ছিল। সঙ্গে আরেক ফুফু থাকলেও সে রিকশায় ওঠেনি।”
তিনি বলেন, গলি দিয়ে যাবার সময় রিকশাটি পাশের ড্রেনে পড়ে গিয়ে শেহেরিজ নিখোঁজ হয়। পরে শনিবার সকালে তার লাশ বাড়ির কাছেই চাক্তাই খালের আসাদগঞ্জ এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
“এ ধরনের ঘটনার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। এটা আমাদের বিশেষ করে তার বাবা-মায়ের জন্য অনেক ভারী।”
শিশুটির লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে যান কোতয়ালী থানার এসআই খায়রুল বাশার। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। সবাই শোকস্তব্ধ। পরিবারের কেউই কথা বলার অবস্থায় নেই।
তিনি বলেন, কাপাসগোলা এলাকার হিজড়া খালে নিখোঁজ হলেও তার লাশ পাওয়া যায় চাক্তাই খালের আসাদগঞ্জ শুঁটকিপট্টি অংশের মুখ থেকে। তাদের বাসাও শুঁটকিপট্টিতে। বাসার কাছ থেকে ২০০ মিটার দূরে লাশ পাওয়া যায়।
“লাশ উদ্ধারের খবরে শহিদুলের পরিবারের লোকজন ছুটে যান। সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি তৈরি হয়।”
বিকালে নগরীর বাকলিয়া এলাকায় শেহেরিজকে দাফন করা হয়।
আরও পড়ুন-
নালায় শিশু মৃত্যুর দায় এড়াতে পারি না: মেয়র শাহাদাত