কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সপরিবারে উপাচার্যসহ সাত শিক্ষককে অবরুদ্ধ করলে তাদের উদ্ধার করে র্যাব-১৩ এর সদস্যরা।
Published : 17 Jul 2024, 01:02 AM
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দিনভর পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ-সংঘাত ও এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যর বাসভবনে ভাঙচুর ও দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পুড়িয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলসহ আরও পাঁচটি মোটরসাইকেল।
এছাড়া, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সপরিবারে উপাচার্যসহ সাত শিক্ষককে অবরুদ্ধ করলে তাদের উদ্ধার করেছে র্যাব-১৩ এর সদস্যরা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব-১৩ জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য ও তার পরিবার এবং আরও ছয় শিক্ষককে চার ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে এবং বাসভবনের কাছে থাকা দুটি সরকারি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
খবর পেয়ে র্যাব সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুসারে উপাচার্য ও শিক্ষকদের উদ্ধারে ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক, উপ-অধিনায়ক এবং অপস অফিসারের নেতৃত্বে র্যাব-১৩ এর একটি দল সেখানে যায়।
দলটি শুরুতে মর্ডান মোড়ে গেলেও ছাত্রদের শক্ত অবস্থানের কারণে পরিকল্পনা পরিবর্তন করে। পরে মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যের সঙ্গে নিয়ে দর্শনা মোড় থেকে লালবাগ এলাকা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের গেইট দিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশ করে।
পরে উপাচার্য, তার পরিবার এবং শিক্ষকরা র্যাবের গাড়িতে উঠলে ছাত্ররা পেছনের গেটটি বন্ধ করে দেয় এবং ব্যারিকেড দেয়।
এ সময় র্যাব সদস্যরা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহায়তায় দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং উপাচার্যকে নিরাপদে রংপুর সার্কিট হাউজে নিয়ে যায়।
তবে পথে শিক্ষকদের বহন করা উপ-অধিনায়কের গাড়িটি এবং অপস অফিসের গাড়িটি ছাত্রদের রোষানলে পড়ে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান।
পরে মিছিলকারীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে রাখা ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়ার প্রাইভেট কার ও একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন।
এ সময় সঙ্গে থাকা আরও পাঁচটি মোটরসাইকেলেও আগুন দেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন, “আমার ছোট ভাই আবু সাইদকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। সে মহান উদ্দেশ্যে জীবন দিল। তার এই আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়।”
এর আগে দুপুর ২টার দিকে রংপুরের খামার মোড় থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে।
শিক্ষার্থীদের ঢিলের জবাবে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সঙ্গে মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যুক্ত হয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। পরে আন্দোলনকারীরাও পাল্টা-ধাওয়া দেয়।
বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সেখানে সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে পুলিশ প্রায় ২০০ গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে।
এর মধ্যে পুলিশের গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাইদ নিহত হন। আবু সাইদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরের বাসিন্দা মকবুল হোসেনের ছেলে ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
এ ঘটনার পর থেকে উত্তাল হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। এরপর পুরো ক্যাম্পাস দখলে নেয় আন্দোলনকারীরা।
আরও পড়ুন:
সংঘাত-মৃত্যুর পর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
কোটা আন্দোলন: রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহত, আহত শতাধিক