দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঢাকাসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রংপুরের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
Published : 12 Jul 2024, 09:39 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ১ নম্বর গেইটে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, একটা যৌক্তিক দাবিতে তারা আন্দোলনে নেমেছেন। কিন্তু তাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে।
পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করছেন দাবি করে তারা হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঢাকাসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে রংপুরের শিক্ষার্থীরাও রাজপথে থাকবেন বলে জানান তারা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। এক রিট আবেদনের রায়ে গত ৫ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্ট।
এরপর থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে আন্দোলনে নামেন চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা। প্রথম কয়েক দিন মিছিল, মানববন্ধনের মত কর্মসূচি থাকলেও সপ্তাহের শুরু থেকে শুরু হয় তাদের অবরোধ কর্মসূচি, যার নাম তারা দিয়েছে ‘বাংলা ব্লকেড’।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা শুরুতে চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ করলেও এখন তারা মাঠে রয়েছে এক দফা নিয়ে।
তাদের দাবি হল- সব গ্রেডে সব ধরনের ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে৷
ওই ‘ন্যূনতম পর্যায়’ বলতে প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ অনগ্রসর লোকদের জন্য ৫ শতাংশ পর্যন্ত কোটা ‘গ্রহণযোগ্য’ মনে করছেন তারা।
আন্দোলনকারীরা গত রবি ও সোমবার বিকালে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন। এরপর বুধবার সকাল-সন্ধ্যা সারা দেশে তাদের একই কর্মসূচি চলে।
এই আন্দোলনের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বুধবার কোটা নিয়ে স্থিতাবস্থা জারির আদেশ দেয়।
কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, কোটা নিয়ে এখন কোনো কথা বলা যাবে না। হাই কোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আপিল বিভাগ আবার বিষয়টি শুনবে।
বৃহস্পতিবার সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে দুটি গ্রেডে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের মূল বা বাস্তবায়নের অংশ প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট।
সেখানে বলা হয়েছে, এ রায় পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পাশাপাশি আগে থাকা অন্যান্য কোটাও বহাল করতে হবে। তবে সরকার চাইলে বিভিন্ন কোটার হার কমাতে, বাড়াতে বা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারবে।
আন্দোলনকারী ও সরকারের তরফে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের যে কথা বলা হচ্ছে, এই রায়ের মধ্য দিয়ে তার পথ প্রশস্ত হল।
আরও পড়ুন:
কোটা সংস্কারের পথ খুলল হাই কোর্টের রায়ে
কোটা আন্দোলন: স্থিতাবস্থা প্রত্যাখ্যান করে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ