আন্দোলনকারীরা অবশ্য এখনও অনড়, অনগ্রসরদের জন্য ৫ শতাংশ কোটার বেশি মানতে রাজি নয় তারা।
Published : 12 Jul 2024, 01:39 AM
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের যে রায়ের পর রাজপথে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই রায়ের মূল অংশ প্রকাশের মধ্য দিয়েই প্রশস্ত হল কোটা পদ্ধতি সংস্কারের পথ।
২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে আদালত বলেছে, সব কোটাই ফিরিয়ে আনতে হবে এবং সরকার চাইলে কোটার হার পরিবর্তন করতে পারবে।
অর্থাৎ, কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের যে কথা সরকার এবং আন্দোলনকারীদের তরফে বলা হচ্ছিল, তা বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি হল রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের সামনে।
যদিও অনগ্রসরদের জন্য ন্যূনতম কোটা রেখে বাকি সব কোটা বাতিলের যে দাবি নিয়ে চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা আন্দোলন করছিলেন, তার পুরোটা পূরণ হল না।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী তরুণদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’এর অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটা রেখে কোটা সংস্কার করতে হবে। আমাদের এক দফা দাবি, সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে আইন পাস করতে হবে।”
অন্যদিকে সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, "আমার মনে হয় কোটার সংস্কার থাকা দরকার। আলোচনার ভিত্তিতে যৌক্তিক সমাধান দরকার। কোটা কতটুকু থাকবে সেটা ঠিক করা দরকার। এই আলোচনা, যুক্তিতর্ক কোর্টে হওয়া দরকার।
কোন কোটার হার কত ছিল?
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা ছিল। তবে এর হার এবং ধরন বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে।
২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫৬ শতাংশ পদে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা ছিল।
ওই বছর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারীরা। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাদ দেওয়া ছিল তাদের মূল দাবি।
শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব কোটা বাতিলের অনুশাসন দেন। পরে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে এখনো ৫৬ শতাংশ কোটা বহাল আছে।
হাই কোর্ট কী বলেছে
বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল গত ৫ জুন। সেই রায়ের অপারেটিভ বা বাস্তবায়নের অংশ প্রকাশিত হয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়।
সেখানে হাই কোর্ট বলেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব কোটা বাতিল করে যে ২০১৮ সালে যে পরিপত্র সরকার জারি করেছিল, তা ‘অবৈধ এবং আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত’।
মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং তাদের নাতি-নাতনিদের জন্য যে কোটা সরকার বাতিল করেছিল, তা পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে।
সেই সঙ্গে জেলা কোটা, নারী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা এবং উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও জাতিগোষ্ঠীর জন্যও কোটা বহাল করতে হবে।
এই এ রায় পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে কোটা পুনর্বহালে আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সেই সঙ্গে হাই কোর্ট বলেছে, সরকার যদি ওইসব কোটার শতকরা হার বা অনুপাত বাড়াতে, কমাতে বা পরিবর্তন করতে চায়, এই রায় সেক্ষেত্রে কোনো বাধা হবে না।
পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে কোনো নির্ধারিত কোটা পূরণ না হলে সরকার মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ দিয়ে সেই পদ পূরণ করতে পারবে।
কেন আন্দোলন
২০১৮ সালের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। গত ৫ জুন সেই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাই কোর্ট বেঞ্চ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।
এরপর থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে আন্দোলনে নামেন চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা। প্রথম কয়েক দিন মিছিল, মানববন্ধনের মত কর্মসূচি থাকলেও এ সপ্তাহের শুরু থেকে শুরু হয় তাদের অবরোধ কর্মসূচি, যার নাম তারা দিয়েছে ‘বাংলা ব্লকেড’।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা শুরুতে চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ করলেও পরে মাঠে নামেন এক দফা নিয়ে।
তাদের দাবি হল- সব গ্রেডে সব ধরনের ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে৷
আন্দোলনকারীরা গত রবি ও সোমবার বিকালে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন। এরপর বুধবার সকাল-সন্ধ্যা সারা দেশে তাদের একই কর্মসূচি চলে। তাতে যানজট এবং পরিবহন না পেয়ে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ।
আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থা এবং হাই কোর্টের রায়
২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। পরে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত দুজন শিক্ষার্থীও সেই মামলায় পক্ষভুক্ত হন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানি হয়। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ সব পক্ষকে চার সপ্তাহ স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেয়।
কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলে, কোটা নিয়ে এখন কোনো কথা বলা যাবে না। হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আপিল বিভাগ আবার বিষয়টি শুনবে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৭ অগাস্ট।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপিল বিভাগ সাবজেক্ট ম্যাটারে স্থিতাবস্থা জারি করেছে। ফলে হাই কোর্টের রায়ের আগে যেমন ছিল, সব তেমন থাকবে। তার আগে কোটা বাতিল-সংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্র কার্যকর ছিল, সেটা থাকবে।”
প্রধান বিচারপতি তার আদেশের সঙ্গে তিনটি পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিনি ক্লাসে ফিরে যেতে বলেন। শিক্ষকদের বলেন ছাত্রদের বুঝিয়ে ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে। আর সংক্ষুব্ধদের উদ্দেশে বলেন, কোনো শিক্ষার্থী যদি মামলায় যুক্ত হতে চান, আইনজীবীর মাধ্যমে যুক্ত হতে পারবেন, শুনানি হলে তখন তাদের কথাও শোনা হবে।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আপিল বিভাগ প্রয়োজনে সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাই কোর্টের রায় সংশোধন কিংবা এ বিষয়টি নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটিও করতে পারে।
রাষ্ট্রপক্ষ এখন কী করবে
সর্বোচ্চ আদালতের ওই আদেশের পরদিনই হাই কোর্টের রায়ের অপারেটিভ অংশ প্রকাশিত হল, যেখানে ২০১৮ সালের আগের সব কোটা পুনর্বহালের আদেশের পাশাপাশি প্রয়োজনে সংস্কারে সুযোগ দেওয়া হল সরকারকে।
রাষ্ট্রপক্ষ এখন কী পদক্ষেপ নেবে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদের কাছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “হাই কোর্ট পূর্ণাঙ্গ রায় এখনও দেয়নি, আজ অপারেটিভ পার্ট প্রকাশ করেছে। পূর্ণাঙ্গ রায় না পেলে আমাদের দিক থেকে কিছু করা যাবে না, কারণ অবজার্ভেশনে আদালত কী বলেছে. তা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
তাহলে রাষ্ট্রপক্ষ কী স্থিতাবস্থার পুরো চার সপ্তাহ অপেক্ষা করবে? এই প্রশ্নে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “তা নয়। হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় যদি তার আগেই প্রকাশিত হয়, সেটা দেখে আমরা আগেও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতে পারি।”
আন্দোলনকারীরা অনড়
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতরা আগের ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবারও রাস্তায় নেমেছে। তবে আগের কয়েকদিনের মত পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ থাকেনি।
পুলিশের পক্ষ থেকে আগেই তাদের সতর্ক করা হয়েছিল, বলা হয়েছিল, আদালতের স্থিতাবস্থা মেনে তারা যেন জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মসূচি না দেয়। তা না হলে পুলিশ কঠোর হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও আসাদুজ্জামান খানও একই ধরনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
তবে তা উপেক্ষা করে বিকালে বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। ঢাকায় পুলিশের বাধার মুখেই তারা তিন ঘণ্টার বেশি সময় শাহবাগে অবস্থান করে। তবে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান আন্দোলনকারীরা। তাতে কয়েকজন আহতও হন।
ঢাকার আন্দোলনকারীরা রাত সাড়ে ৯টার দিকে শাহবাগ মোড় ছাড়ে। তার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে এসে শুক্রবার সারাদেশে মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, “আজকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করা হয়েছে, বাধা দেওয়া হয়েছে। এই হামলার প্রতিবাদ ও এক দফা দাবিতে আগামীকাল বিকেল ৪ টায় সারাদেশে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।”
হাই কোর্টের রায়ের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে নাহিদ বলেন, সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটা রেখে কোটা সংস্কার করতে হবে, এটাই তাদের দাবি।
“হাই কোর্ট বলেছে সরকার কোটা পরিবর্তন পরিবর্ধন করতে পারবে। এতদিন কোর্টের ঘাড়ে বন্দুক রেখে আমাদের সামনে মূলা ঝুলাচ্ছিল কেন? আমরা প্রথম থেকেই বলছি কোটা সরকারের নীতির বিষয়। কোটা কত শতাংশ থাকবে এটা একমাত্র সরকারই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।”
তবে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বৃহস্পতিবার অন্য এক মামলার শুনানিতে এ বিষয়ে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, “কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন- তাদের পরামর্শ দিন, তারা কেন নির্বাহী বিভাগের কথা বলে? নির্বাহী বিভাগের যে কোনো সিদ্ধান্ত তো আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কোটা আন্দোলনকারীদের জন্য আদালতের দরজা সবসময় খোলা।
“তারা তাদের দাবিগুলো আইনজীবীদের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারেন। আমরা সেটি গুরুত্ব সহকারে শুনব।”
সংস্কার কীভাবে
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। আর সবশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা এক শতাংশ।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির ‘সংস্কার’ করতে বেশ কয়েকবার সুপারিশ করেছিল সরকারি কর্ম কমিশন- পিএসসি।
২০০৯ ও ২০১১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে পিএসসি বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ করে বলে, “বর্তমানের কোটা সংক্রান্ত নীতিমালা প্রয়োগ অত্যন্ত জটিল, দুরূহ ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।”
তাতে বলা হয়, “প্রচলিত কোটা পদ্ধতির জটিলতার কারণে উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন শতভাগ নিখুঁতভাবে সম্পাদন করা প্রায় অসম্ভব। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়নের জন্য বর্তমানে প্রচলিত কোটা পদ্ধতির সরলীকরণ অপরিহার্য।”
এর আগে ১৯৭৭ সালে তৎকালীন পে ও সার্ভিস কমিশনের একজন সদস্য বাদে সবাই সরকারি নিয়োগে কোটাব্যবস্থার বিরোধিতা করেন।
কোটার পক্ষে অবস্থা নেওয়া এম এম জামান প্রচলিত কোটাগুলো প্রথম ১০ বছর বহাল রেখে ১৯৮৭ সাল থেকে পরবর্তী ১০ বছরে ধীরে ধীরে কমিয়ে দশম বছরে তা বিলুপ্ত করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কোটা নিয়ে অর্ধ যুগ আগে সরকারের ‘ভুল সিদ্ধান্তের’ কারণেই কোটার পক্ষে-বিপক্ষে দেশকে আরেক দফা বিতর্কের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান মনে করেন, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল না।
তিনি বলেন, “আমাদের পাশের দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে কোটা প্রথার প্রচলন রয়েছে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠী যারা রয়েছে, যেমন- আদিবাসী, প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা রাখার যৌক্তিকতা রয়েছে। কিন্তু কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সময় কোটা তুলে নেওয়া হয়।
“সরকার কেন হঠাৎ করে কোটা তুলে নিল- আমি এখনও এটা বুঝতে পারি না। সেই সিদ্ধান্তের কারণেই মামলা ও এই পরিস্থিতি। কিছু কোটা রাখার যৌক্তিকতা রয়েছে। তবে কোটা মেধার চেয়ে বেশি হয়ে যাবে না।”
মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযুদ্ধে এদেশের শিক্ষিত, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের চেয়ে কৃষক, শ্রমিক, তাঁতি, মজুর- তাদের অংশগ্রহণ বেশি ছিল। তখনকার অনগ্রসরমান মানুষেরা অংশ নিয়েছিল। তাদের জন্য যদি কোনো কোটা থাকে, থাকতেই পারে।
“কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কোটাটা তাদের সন্তান পর্যন্ত থাকবে, নাতি-নাতনি পর্যন্ত যাবে কি না, একবার এক পরিবার কোটা ব্যবহার করলে সেই পরিবার আবার ব্যবহার করতে পারবে কি না, এগুলো নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।”
শহীদ খান বলেন, “আমাদের লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধা যারা আছেন, তাদের কয়জন এই কোটার সুবিধা ভোগ করতে পারছেন, সেটাও দেখতে হবে। এই কোটাটা দিয়ে কী আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের কোনো উন্নয়ন করতে পারছি কি না- তাও দেখতে হবে।
“অনেকগুলো বিষয় আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা প্রয়োজন। সরকারকে বুঝে-শুনে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
দেশের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে কোটার সিদ্ধান্ত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে পুনর্বিবেচনা হতে পারে বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিগত ৫টি বিসিএসের ফল পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের মধ্যে অ্যাপিয়ার্ড করেছে ৫ শতাংশের মত। আর রিটেনে পাস করেছে ২-৩ শতাংশের মত। কাজেই সবক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থীও পাওয়া যায় না।
“কাজেই এসব পরিসংখ্যান দেখে কী পরিমাণ কোটা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বা নাতিদের জন্য রাখা যায়, সেটা সরকার নিশ্চয়ই পুনর্বিবেচনা করবে এবং এটা নিশ্চিত হতে হবে যে, এই সংখ্যাটি মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য থাকবে, সেখানে কাউকে নিয়োগ দেওয়া সঠিক হবে না।”
তবে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষার বলছেন, ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কোটা ব্যবস্থা চালু হলেও তা দীর্ঘদিন কার্যকর ছিল না, ফলে মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘদিন বঞ্চিত হয়েছে।
“যেহেতু মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাই হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। যখন তালিকা করে তখন মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়স নাই। তখন স্বাভাবিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা তাদের পরিবার পাবে। দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাস্তবায়ন থাকলে আজকে নাতি-নাতনিদের কোটা না দিলেও হত।”
সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান মনে করেন, সব কোটা বাতিল করে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ১২ শতাংশ কোটা রাখা দরকার। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কিংবা কৃষকদের মধ্যে যারা হতদরিদ্র, তারাও ওই কোটার অন্তর্ভুক্ত হবে। তাহলে জেলা কোটা, নারী কোটা বা ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদা কোটার প্রয়োজন হবে না।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৫ শতাংশ কোটাই যথেষ্ট মত দিয়েয় তিনি বলেন, “আগের গতানুগতিক কোটার মত কোটা রাখতে হলে দেখতে হবে কারা স্বাভাবিকভাবে কোটার মাধ্যমে উঠে আসছে। যারা পিছিয়ে পড়ছে, তাদের কোটা দিতে হবে। আর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা থাকবে তাদের অবদানের জন্য।
“আমার কাছে জেলা কোটা যৌক্তিক নয়। কারণ যে জেলায় জনসংখ্যা বেশি, সে কোটা পাবে। আবার জেলা কোটার মধ্যে যদি কেউ ধনী হয়, তাহলে সে কেন কোটা পাবে?”
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানের মতে, সরকারকে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে যৌক্তিকভাবে কোটা প্রথার সংস্কার করতে হবে।
“সরকার বিধি পরিবর্তন কীভাবে করবে, সেটা সরকারের ব্যাপার। সব স্টেক হোল্ডার যারা আছেন, নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী, নারী আন্দোলনের সঙ্গে যারা জড়িত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যারা আছেন, তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দিতে পারে সরকার। একটি বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তির মাধ্যমে কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে।”
পৃথিবীর সব দেশেই কোটা প্রথার প্রচলন রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে কোটার বিষয়টি সংবিধানের ২৮ ও ২৯ ধারায় কোটার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। সংবিধানের ধারার পরিবর্তন করা যায় না। অনগ্রসর জনগোষ্ঠী- সেটা নারী হতে পারে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাওর-বাওরের জনগোষ্ঠী হতে পারে, আমাদের ছিটমহলে জনগোষ্ঠী সব অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। তারা স্কুলে যেতে পারতো না। অনগ্রসর গোষ্ঠীদের একটি সুবিধা দিয়ে সামনে আনার চেষ্টা করা হয়।”
১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি কর্ম কমিশনের ‘এক্সটার্নাল এক্সামিনার’ হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক মান্নান।
তিনি বলেন, অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা কোটা সুবিধার কারণে উঠে এসেছে।
“নারীরা এখন যে পর্যায়ে, ৫০ বছর আগে সেটা চিন্তাও করা যেত না। নারীরা এখনকার পর্যায়ে আসার পেছনে অনেকগুলো বিষয়- সরকারের সুবিধা দেওয়ার ফলেই হয়েছে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে ৩১ বছর মুক্তিযোদ্ধারা কোন কোটার তো সুবিধা পায়-ই নি বরং মুক্তিযুদ্ধ করার কারণে অনেক সরকারি চাকরিজীবীর চাকরি চলে গেছে।
“কোটা দিলেই যে সবাই সেই কোটার সুবিধা পেয়ে যাবে, তাও ঠিক না। কারণ প্রাথমিক পরীক্ষাগুলোতে তাকে পাস করতে হবে। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাস করলে সে কোটার সুবিধা পাবে।”
যেভাবে কোটা, প্রয়োগ যতটা
সংবিধানের ২৯ এর ৩(ক) উপধারা অনুযায়ী, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে নাগরিকদের ‘অনগ্রসর অংশের প্রতিনিধিত্বের জন্য’ কোটা সুবিধা রয়েছে।
১৯৭২ সালে সরকারি চাকরির ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য, ১০ শতাংশ যুদ্ধবিধ্বস্ত নারীদের জন্য ও ৪০ শতাংশ জেলা কোটায় সংরক্ষণ করে মেধা কোটার জন্য ২০ শতাংশ পদ রাখা হয়েছিল। ১৯৭৬ সালে জেলা কোটা ২০ শতাংশ কমিয়ে মেধা কোটা ৪০ শতাংশ করা হয়।
১৯৮৫ সালে মেধা কোটা ৪৫ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ৫ শতাংশ এবং মুক্তিযোদ্ধার জন্য ৩০ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালেই এই কোটা ব্যবস্থাকে আরও সম্প্রসারিত করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এর আওতাভুক্ত করা হয়।
২০১৮ সালে এই ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার আগে ৫৬ শতাংশ পদে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ ছিল। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে এখনো ৫৬ শতাংশ কোটা বহাল আছে।
অবশ্য ওই সিদ্ধান্তের আগে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে বিপুল সংখ্যক আসন কোটাধারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হলেও সেই অনুযায়ী প্রার্থী মেলেনি। ফলে লাখ লাখ চাকরিপ্রত্যাশী চাকরির পরীক্ষায় লড়লেও পদ খালি রেখেই চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে হত সরকারি কর্ম কমিশনকে।
এক পর্যায়ে কোটার শূন্যপদে মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়। ফলে ৫৬ শতাংশ কোটার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা প্রয়োগের হার আরও কম।
বিসিএসের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২১, ২২ ও ২৫তম বিসিএসে ৩০ শতাংশ সংরক্ষিত পদের বিপরীতে আলোচিত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ দেওয়া গেছে যথাক্রমে ১০ দশমিক ৮, ২ দশমিক ২ ও ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রার্থীকে।
এছাড়া কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় ২৮তম বিসিএসে ৮১৩টি, ২৯তম বিসিএসের ৭৯২টি, ৩০তম বিসিএসে ৭৮৪টি, ৩১তম বিসিএসে ৭৭৩টি পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া যায়নি।
এসব পদে নিয়োগ দিতে কোটাধারীদের জন্য ৩২তম বিশেষ বিসিএস হয়, তাতেও এক হাজার ১২৫টি আসন ফাঁকা থাকে। পরে ৩৩তম বিসিএস থেকে কোটার শূন্যপদে মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়।
তাতে ৩৩তম বিসিএসে ৭৭ দশমিক ৪০ শতাংশ, ৩৫তম বিসিএসে ৬৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ৩৬তম বিসিএসে ৭০ দশমিক ৩৮ শতাংশ পদে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।
২০২০ সালে ৩৮তম বিসিএসের ফল প্রকাশের মাধ্যমে চার যুগ ধরে চলে আসা কোটা ব্যবস্থায় শেষ নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগেও কারিগরি ক্যাডারে কোটায় নির্ধারিত প্রার্থী না পাওয়ায় মেধাতালিকা থেকে পদ পূরণ করা হয়।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা তুলে দেওয়ার কী প্রভাব পড়েছে সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, কোটাযুক্ত বিসিএস-এর তুলনায় কোটামুক্ত বিসিএস-এ নারীরা পিছিয়ে পড়েছে ৩.৪৩ শতাংশ।
“একটি বিসিএস-এ কোটা না থাকায় পুলিশের ক্যাডারে মাত্র চার জন নারী অফিসার সুযোগ পেয়েছেন। ফরেন সার্ভিসে সুযোগ পেয়েছে মাত্র দুই জন নারী। কোটামুক্ত একটি বিসিএস-এ ২৪টি জেলার কোনো প্রার্থী পুলিশ ক্যাডারে চাকরি পায়নি, ৫০টি জেলায় নারীরা সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছে।”
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সব চাকরির হিসাব দিয়ে তিনি বলেন, “কোটা পদ্ধতি থাকা অবস্থায় শতকরা ২৬ ভাগের উপরে নারী প্রার্থীরা চাকরি পেয়েছিল। এরপর কোটা তুলে দেওয়ায় এই হার শতকরা ১৯ ভাগে নেমে এসেছে।”
কোটা পদ্ধতি বাতিল হওয়ায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থীরা সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে কাদের বলেন, “পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কোনো কোনো পরীক্ষায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একজন প্রার্থীও নিয়োগ লাভের সুযোগ পায়নি।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ নিয়েও যে সমস্ত তথ্য আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে তা অবাস্তব এবং বিভ্রান্তিকর। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কোটাযুক্ত পদ্ধতিতে মেধায় নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল শতকরা ৪৪ ভাগ। কিন্তু বিভিন্ন কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী না থাকায় শতকরা ৬৬.২ ভাগ প্রার্থী মেধাভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছে।“
কোটায় নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীরাও প্রায় সমান মেধাবী মন্তব্য করে সড়ক মন্ত্রী বলেন, “বিভিন্ন কোটায় যারা চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছে তারাও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের একই মানদণ্ডে অর্থাৎ একই প্রিলিমিনারি প্রশ্ন, লিখিত পরীক্ষা দিয়ে সমান যোগ্যতার ভিত্তিতে উত্তীর্ণ হয়েছে।”
অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা বলছেন, বিপুল সংখ্যক তরুণের জন্য দেশের শ্রমবাজারে সীমিত সুযোগ থাকায় বহু বছর ধরেই চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপে দেখা যায়, দেশে ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ বা ২৫ লাখ ৮২ হাজার মানুষ বেকার, যাদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষিতদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
সরকারি এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় ও সমপর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সনদধারীদের মধ্যে বেকারের হার ১২ শতাংশ। জরিপে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের মধ্যে প্রায় আট লাখ বেকারের তথ্য থাকলেও বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা বেকারের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
এ পরিস্থিতির মধ্যে কোটা ব্যবস্থাকে বৈষম্যমূলক বলে আসছেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলছেন, সংবিধানে সুযোগের সমতা, চাকরিতে সম-অধিকারের কথা থাকলেও কোটা ব্যবস্থা বৈষম্য করার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কোটা নিয়ে যদি কোনো পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন পড়ে, একটা কমিশন গঠন করতে পারে। সেখানে যেসব কোটা অযৌক্তিক সেগুলো বাতিল করা হোক। তবে সংবিধানের কথা অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা রাখা যেতে পারে।”