এদের মধ্যে কয়েকজনকে মাঝে মাঝে মুখে রুমাল কিংবা মাস্ক দিয়ে এসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেত দেখা গেছে।
Published : 17 Jul 2024, 12:22 AM
সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার ও কোটা প্রথার সংস্কারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি আবাসিক হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হল, মাদার বখস্ হল, জিয়া হল, মতিহার হল ও শাহ মখদুম হলের অন্তত ২০টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। আন্দোলনকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে কক্ষগুলোতে থাকা জিনিসপত্র বাইরে বের করে এনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেন, “বিকাল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে কয়েকজনকে মাঝে মধ্যে রুমাল কিংবা মাস্ক পড়ে ভাঙচুরসহ, অগ্নিকাণ্ড করতে দেখা যায়।”
এদিকে ক্যাম্পাসের বিশেষ করে ছেলেদের অধিকাংশ আবাসিক হল থেকে অনেক শিক্ষার্থীরাই চলে যাচ্ছেন। ফলে হলগুলোতে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
তবে হলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আন্দোলনকারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম রেজা রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জিয়া হলের শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন শুরু করে তখন ছাত্রলীগের সঙ্গে তাদের সমস্যা হয়। সেটা থেকেও ক্ষোভ থাকতে পারে।
“আন্দোলনে প্রচুর শিক্ষার্থী ছিল। তবু কীভাবে এটা হল, কী থেকে কী হয়ে গেল; এটা আমরা নিজেরাও বুঝতে পারছি না।”
সরজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগের বিভিন্ন কক্ষে ভাঙচুর চালাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তারা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান বাবুর ২৩০ নম্বর কক্ষে তল্লাশি চালায়।
এ ছাড়া ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের ২২৮ নম্বর কক্ষেও তল্লাশি চালানো হয়।
এর আগে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ করে। পরে তারা একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেইটে ঢাকা-রাজশাহী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরে আবার তারা ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।
এদিকে সন্ধ্যার পর পরই শিক্ষার্থীদের অবরোধ শেষে অনেককেই হল ত্যাগ করতে দেখা গেছে।
তাদের দাবি, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাই কেউ কেউ বাড়ি চলে যাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ নিকটবর্তী কোনো সহপাঠী, বড় ভাইয়ের মেসে আশ্রয় নিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলের বাসিন্দা ও ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল সরকার বলেন, “আমার হলের রুমের যে ব্লক সেখানে কোনো শিক্ষার্থীই নেই। সহপাঠী, বড় ভাই অনেকেই বলছেন হল ছাড়ার কথা, কারণ রাতে হামলা হতে পারে। তারাও চলে গেছেন। তাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি৷ এজন্য নওগাঁয় চলে যাচ্ছি।”
]
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক ছাত্র পুশরাম চন্দ্র রায় বলেন, “প্রায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আমার হল কেমন চুপচাপ হয়ে গেলো। অনেকে বলাবলি করছে, রাতে হামলা হতে পারে। এক রকম বাধ্য হয়েই এক বন্ধুর মেসে অবস্থান করতে হবে এখন।”
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, “প্রাধ্যক্ষ পরিষদের মিটিং শেষে হলের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করব। অস্ত্রধারী নেতা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, “ক্যাম্পাসে রাতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় প্রাধ্যক্ষরা হলে হলে অবস্থান করবেন এবং ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও থাকবে। তাই আতঙ্কের কিছু নেই।”
এ ব্যাপারে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান বাবু এবং সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা তা রিসিভ করেননি।
আরও পড়ুন:
রাবি ছাত্রলীগকে অবাঞ্চিত ঘোষণাসহ ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি
সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ