“আমরা বেশ কয়েকদিন শান্তিপূর্ণ করেছি। এরপরও আমাদের ওপর ছাত্রলীগের নৃশংস হামলার প্রতিবাদেই শিক্ষার্থীরা এমনটা করতে বাধ্য হয়েছে।”
Published : 16 Jul 2024, 05:35 PM
সারা দেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার ও কোটা প্রথার যৌক্তিক সমাধানের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীর সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে মঙ্গলবার বিকাল ৩টা থেকে এ কর্মসূচি পালন করে তারা। এ সময় প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভে অংশ নেয়।
এর আগে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ঘুরে প্যারিস রোডে অবস্থান নেয়। এ সময় জিয়া হল গেইট, বঙ্গবন্ধু হল গেইট ও ছাত্রীদের মন্নুজান হল গেইটে ছাত্রলীগের মারা তালা ভেঙে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করা হয়।
একই সময় বঙ্গবন্ধু হলের তালা ভেঙে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রায় ১০-১২টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রুবেল পারভেজ বলেন, “শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু হল গেইটের তালা ভেঙে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের পাশাপাশি সেখানে থাকা নেতাকর্মীদের ১০-১২ টি বাইক পুড়িয়ে দেয়।”
“আমরা বেশ কয়েকদিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছি। এরপরও আমাদের ওপর ছাত্রলীগের নৃশংস হামলার প্রতিবাদেই শিক্ষার্থীরা এমনটা করতে বাধ্য হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ফয়সাল কবীর বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে শুরু করে মঙ্গলবার রাত ৪টা পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে নৃশংসতা ঘটেছে, তাতে আমি সাধারণ মানুষ হিসেবে রুমে থাকতে পারিনি।
“একটা সাধারণ ন্যায্য দাবি থেকে কিভাবে এতো বড় ঘটনা ঘটতে পারে তার নজির সবাই দেখলো।”
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের ভাই-বোনের ওপর হামলার বিচার চাই এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রত্যাহার চাই।"
এ সময় শিক্ষার্থীদের 'তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার', ‘চেয়েছিলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে সরকার সরকার’ 'আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই' এসব স্লোগান দিতে দেখা যায়।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “আমাদের আজকে কোনো কর্মসূচি দেওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আন্দোলন নিয়ে যে বক্তব্যটি দিয়েছেন সেটি শুনে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলকারীদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। এর প্রতিবাদেই আজকের কর্মসূচি।"
রোববার বিকালে চীন সফরের বিষয় তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? তাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? এটা আমার দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন।”
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এরপর মধ্যরাতে সারাদেশে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছে। তারা প্রথমে সেই পরিপত্র ফিরিয়ে আনা অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার দাবি জানালেও পরে সংস্কারের দাবি তুলেছে।
গত সপ্তাহে মঙ্গলবার বাদ দিয়ে প্রতিটি কর্মদিবসেই বাংলা ব্লকেড নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন করায় যান চলাচলে তীব্র ভোগান্তি হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করলেও বৃহস্পতিবার থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে, একাধিক এলাকায় বাধাও দেওয়া হয়েছে।
পরে এক আদেশে কোটা আন্দোলন নিয়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। সেই শুনানিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
তবে শিক্ষার্থীরা সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে কোটার বিষয়ে ফয়সালা চাইছেন, আর ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন।
রোববার শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মেনে নিতে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেন। এতে জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটা সংস্কারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলে নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।
এদিন বিকালে প্রধানমন্ত্রী চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “কোটার বিষয়টি ফয়সালা হবে আদালতেই। আর রাস্তায় ধ্বংসাত্মক কিছু হলে আইন ‘নিজস্ব গতিতে চলবে’।”