কোটা সংস্কারের দাবিতে রংপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ মারা যান।
Published : 17 Jul 2024, 12:26 AM
“হামার ভাইকে ওরা মেরে ফেলল ক্যান? হামার ভাই বেঁচে থাকলে হামার হেরে স্বপ্ন পূরণ হলো হয়। ও ভাইও হামাক এনা বোন কয়া ডাকো রে।”
মঙ্গলবার দুপুরে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত আবু সাঈদের বোন সুমি বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন।
নিহত আবু সাঈদ (২৫) রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছোট ছেলে।
স্বজনরা জানান, নয় ভাই-বোনের মধ্যে আবু সাঈদ নিজের ইচ্ছায় লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। অভাবের কারণে অন্য ভাই-বোন লেখাপড়া করাতে না পারলেও সাঈদ খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পান। পরে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে একই ফল নিয়ে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
দুপুরের পর গ্রামের বাড়িতে আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর পৌঁছালে পরিবারে কান্নার রোল পড়ে। ছোট বোন সুমির আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে চারপাশ।
বিলাপ করতে করতে তিনি বলছিলেন, “হামার ভাইকে ওরা মেরে ফেলল ক্যান? হামার ভাই বেঁচে থাকলে হামার হেরে স্বপ্ন পূরণ হলো হয়। ও ভাইও হামাক এনা বোন কয়া ডাকো রে।”
পাশেই সাঈদের মা মনোয়ারা বাকরুদ্ধ হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে সবার দিয়ে চেয়ে আছেন। মাঝে মাঝে ‘বাবা, বাবা’ বলে ডাকছেন। আর ছেলে হারানোর শোকে বাবা মকবুল হোসেন নির্বাক হয়ে গেছেন।
সাঈদের প্রতিবেশী এক ভাবি বলেন, “ওর বাবা দিনমজুর হওয়ায় লেখাপড়ার টাকা ঠিকমতো বহন করতে পারত না। অভাবের কারণে আমার ছেলের লেখাপড়ার সরঞ্জাম ও পোশাক ব্যবহার করে চলেছে সাঈদ। সে নিজেকে মেধাবী ছাত্র হিসেবে গড়ে তুলেছিল। বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করত।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা দুপুর ১টার দিকে রংপুর জেলা স্কুল মোড়ে থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়। লালবাগ খামার মোড়ে শিক্ষার্থীদের আরেকটি মিছিল তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।
ওই মিছিল নিয়ে তারা রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে যান। তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। এতে আবু সাঈদসহ পুলিশ ও বেশ কয়েক শিক্ষার্থী আহত হয়।
পরে আবু সাঈদকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।
আবু সাইদ কোটা আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমন্বয়ক ছিলেন বলে জানান সহপাঠীরা।
আরও পড়ুন:
কোটা আন্দোলন: রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহত, আহত শতাধিক
সংঘাত-মৃত্যুর পর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা