এর মধ্য দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হল।
Published : 16 Jul 2024, 11:22 PM
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার দিনভর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের পর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন রাতে এক চিঠিতে এই সিদ্ধান্ত জানায়।
ইউজিসি'র সচিব ফেরদৌস জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, “সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় দেশের সকল পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য কলেজসহ সকল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
“একই সাথে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশনা দিয়ে নিরাপদ আবাসস্থলে অবস্থানের নির্দেশনা প্রদানের নিমিত্ত নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হল।”
মঞ্জুরী কমিশনের ওই চিঠি দেশের সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হল।
এর আগে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিদ্যালয় ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।”
এছাড়াও সব শিক্ষা বোর্ডের বৃহস্পতিবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি।
স্থগিত হওয়া পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে। আর আগামী রোববার থেকে পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা যথারীতিতে চলবে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জানানো হয়নি।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা দুই সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছে। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার পর মঙ্গলবার তা সহিংসত রূপ পায়।
আগে কেবল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে দেখা গেলেও সোমবার থেকে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেয়। মঙ্গলবার তাদের সঙ্গে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদেরও দেখা যায়।
মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। তাদের অবরোধের কারণে রাজধানী একপ্রকার অচল হয়ে পড়ে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশাপাশি দেশের এ দুই বড় শহরে রেলপথও অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা। সব মিলিয়ে নিদারুণ ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।
এই বিক্ষোভ-অবরোধের মধ্যে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকারসমর্থক সংগঠনের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে শিক্ষার্থী, পথচারীসহ ছয়জন নিহত হন, আহত হন কয়েকশ মানুষ।
এর মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন এবং ঢাকায় দুইজন এবং রংপুরে একজন করে মারা গেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুর, গাজীপুর, রাজশাহী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিজিবি নামানো হয়েছে।