মেয়র পদপ্রার্থী এহতেশামুল আলম বলেন, “একটি পক্ষ বলছে, আমি টজুকে সমর্থন দিয়ে বসে পড়েছি। আমি বলতে চাই, ৯ তারিখ পর্যন্ত মাঠে আছি, থাকব। ঘোড়ার পক্ষে জোয়ার উঠেছে।”
Published : 01 Mar 2024, 07:44 PM
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে কোনো কোনো মেয়র পদপ্রার্থীর প্রচারে গতি পাচ্ছে; ঠিক তেমনি কেউ কেউ আবার প্রচারে পিছিয়েও পড়ছেন।
ভোটাররা বলছেন, সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু (দেওয়াল ঘড়ি), শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু (হাতি) এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলমের (ঘোড়া) প্রচারে গতি পেয়েছে।
সেই তুলনায় কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ রেজাউল হক রেজা (হরিণ) এবং জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডলের (লাঙ্গল) প্রচার কম দেখা যাচ্ছে।
তবে এই দুই প্রার্থীই বলছেন, আর্থিক কারণে তারা সীমিত পরিসরে আচারণবিধি মেনে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
৯ মার্চের ভোটকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহ নগরী এখন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারে সরগরম। প্রচারের পাশাপাশি চলছে প্রার্থী-সমর্থকদের কথার লড়াই। প্রতিটি পাড়া-মহল্লা ছেয়ে গেছে পোস্টারে-পোস্টারে। প্রচারপত্র বিলির পাশাপাশি মাইকিংয়ে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাচ্ছেন প্রার্থীরা। সবমিলিয়ে ময়মনসিংহ এখন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশবাড়ি কলোনির ভোটার আবুল হাশেম বলেন, “বাঁশবাড়িতে এলেই উপলব্ধি করা যায় কতোটা উৎসবমুখর পরিবেশে এবারের নির্বাচন হচ্ছে। মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার কেন্দ্রগুলো পোস্টারে পোস্টারে সাজানো হয়েছে।
“সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে চা আপ্যায়ন। বিকাল থেকে সাউন্ড সিস্টেমে চলে প্রার্থীদের নিয়ে তৈরি করা গান-গজল।”
আবুল হাশেমের দাবি, “মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রচারে এগিয়ে আছেন টিটু ভাই। তারপর টজু ভাইকে ধরা যেতে পারে। তবে ভোটের দুই-একদিন আগে বলা যাবে কে জয়ী হচ্ছেন।”
১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার রুকন উদ্দিন বলেন, “প্রচারে শুরু থেকে টিটু এগিয়ে থাকলেও টজুকে এমপি শান্তর লোকজন সমর্থন করায় এখন তিনিও এগোচ্ছেন। আর কয়েকদিন গেলেই বুঝা যাবে, কার অবস্থান কতটা শক্তিশালী। তবে এবার ভোটে উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।”
শুক্রবার ছুটির দিন দুপুরে প্রচারে বের হন ইকরামুল হক টিটু। তিনি নগরীর ট্রাংক পট্টি, পন্ডিতপাড়ায় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রচার চালান।
টিটু বলেন, “৩৩টি ওয়ার্ডে আমার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। প্রতিদিন একটি করে ওয়ার্ডে যাচ্ছি। ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি। চেষ্টা করছি প্রচারে থাকার। চলমান উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে মানুষ আমাকেই বেছে নেবেন।”
চরপাড়া এলাকায় প্রচার শেষে হাতি প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু বলেন, “পুরোপুরি এমপি শান্তর অনুসারীদের সমর্থন আমার পক্ষে থাকায় প্রচারের গতি আগের চেয়ে বেড়েছে। পরিবর্তনের লক্ষ্যে সাধারণ ভোটাররা মুখিয়ে আছে ভোট দেওয়ার জন্য।
“নেতাকর্মীরা ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী এহতেশামুল আলমকে বসিয়ে আমার পক্ষে নির্বাচন করার জন্য চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তিনি না বসার পরেও আমার পক্ষে নেতাকর্মীদের অবস্থান থাকায় আশা করছি জয় নিয়ে ফিরব।”
টাউন হল এলাকায় ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রচার চালান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম। এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার ভোটারদের মনোবল নষ্ট করার জন্য মাঠে অপপ্রচার করা হচ্ছে। একটি পক্ষ বলছে, আমি টজুকে সমর্থন দিয়ে বসে পড়েছি। আমি বলতে চাই, ৯ তারিখ পর্যন্ত মাঠে আছি, থাকব। ঘোড়ার পক্ষে জোয়ার উঠেছে। অপরিকল্পিত নগরীতে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে মানুষ আমাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।”
মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোডে প্রচারপত্র বিলি শেষে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শহিদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডল বলেন, “প্রচার করে সাড়া জাগাতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন। অন্যান্য প্রার্থীদের মত আমার এত অর্থ-সম্পদ নেই। তাই প্রচার কিছুটা কম করছি।
“তবে পল্লিবন্ধু এরশাদ ও তার লাঙ্গলের প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। সেই ভালোবাসায় মানুষ যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় তাহলে জয় সুনিশ্চিত।”
কৃষিবিদ রেজাউল হক রেজা প্রচারপত্র বিলি করেন আকুয়া এলাকায়। এ সময় তিনি বলেন, “পরিবর্তনের মাধ্যমে নগরী থেকে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ মুক্ত করতে চায় সাধারণ ভোটাররা। আমার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের মনের ভাব বুঝা।
“প্রচার তুলনামূলক কম করলেও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারছি তারা একটি পরিচ্ছন্ন নগরী চায়, স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চিয়তা চায়, হোল্ডিং ট্যাক্স কমানোর দাবি তাদের। তাই তারা যদি আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে তাহলে নগর পিতা নয়, সেবক হয়ে কাজ করব।”
এবার নগরীতে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩২ পুরুষ, ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৫৫ নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৯ জন। ভোটাররা ৯ মার্চ ইভিএমে ১২৮ কেন্দ্রে ভোট দেবেন।
মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী ছাড়াও নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৯ এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ৬৯ জন।
নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ফরহাদ আলম বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় কাউন্সিলর পদে ৩২ ওয়ার্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন:
ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচন: বিএনপি ভোটে নেই, তবু তারা আশা নিয়ে মাঠে
ইভিএম নিয়ে ভয়ের কিছু নেই, ভোটার উপস্থিতি আসল বিষয়: ইসি আলমগীর
ময়মনসিংহ সিটি ভোট: ভোটারদের সাড়া কতটা?
ময়মনসিংহ সিটি ভোট: পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে খাদ্য কর্মকর্তা
ফের সুযোগ চান টিটু, পরিবর্তনের ডাক আলম-টজুর
ময়মনসিংহ সিটি ভোট: টিটুর প্রতিদ্বন্দ্বী কে?
ময়মনসিংহ সিটি ভোট: আধুনিক নগরী গড়তে ১৫ দফা টজু’র
ময়মনসিংহ সিটি ভোট: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত একজন কাউন্সিলর
ময়মনসিংহ সিটি ভোট: প্রতীক পেয়ে প্রচারে প্রার্থী
ময়মনসিংহ সিটিতে আওয়ামী লীগ নেতার মনোনয়ন বাতিল
ময়মনসিংহ সিটি ভোট: ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ সরলেন রাজীব, সমর্থন নিয়ে ‘ধোঁয়াশা’
নগরীর সমস্যা নিয়ে পোস্টার: গ্রাফিক ডিজাইনার শামীম কারাগারে
ময়মনসিংহ সিটিতে আওয়ামী লীগ নেতার মনোনয়ন বাতিল