ইভিএম নিয়ে ভয়ের কিছু নেই, ভোটার উপস্থিতি আসল বিষয়: ইসি আলমগীর

“নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম হলে ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।”

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2024, 11:56 AM
Updated : 28 Feb 2024, 11:56 AM

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। তবে এতে অনিয়ম একেবারেই ‘অসম্ভব‘ জানিয়ে তাদের আশ্বস্ত করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।

এছাড়া নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম হলে ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে রিটানিং কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।

নির্বাচনে এনালগ পদ্ধতি বাতিল করা হবে জানিয়ে ইসি বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধিমালা পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রার্থীদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।

“আগামীতে প্রার্থীদের নমিনেশন পেপার সাবমিটসহ নির্বাচনের সকল কার্যক্রম ডিজিটাল করতে আইন প্রণয়ন করা হবে।”

পরে নির্বাচন কমিশনার টাউন হল তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

ময়মনসিংহ সিটির সদ্য সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ‘টেবিল ঘড়ি’ প্রতীকের প্রার্থী মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, “ইভিএম এ ভোট নিয়ে ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা ও অজ্ঞতা রয়েছে। বিশেষ করে সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ১২টি ওয়ার্ডের ভোটারদের মধ্যে এই অজ্ঞতা অনেক বেশি। সেই সঙ্গে ইভিএমের ভোট নিজের পছন্দের প্রার্থীর প্রতি থাকবে কি-না, এনিয়ে সংশয় রয়েছে।

“মূলত একটি গোষ্ঠী এই ধরনের অপপ্রচার করছে। তাই গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়াও মোবাইল নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া যাবে কি-না, তা স্পষ্ট করা জরুরি এবং ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে ইভিএমের বিষয়ে ভোটারদের স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া অতি জরুরি বলেও আমি মনে করি।”     

টিটুর সঙ্গে একমত পোষণ করেন ‘হাতি’ প্রতীকের প্রার্থী শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু।

তিনি বলেন, “বিগত নির্বাচনে অনেক প্রার্থী হেরে যাওয়ার পেছনে ইভিএমকে দায়ী করেছিলেন এবং ইভিএমের ধীরগতি নিয়েও কথা রয়েছে। একই সঙ্গে ইভিএমের ভোট নিয়ে ভোটারদের শঙ্কা অনেক।

“এই অবস্থায় ব্যালটে ভোট করলে ভোটাররা স্বস্তিবোধ করতো বলে আমি মনে করি।”   

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ‘ঘোড়া’ প্রতীকের প্রার্থী এহতেশামুল আলম বলেন, “ইভিএম সম্পর্কে ভোটারদের মাঝে ভালো ধারণা আছে, তা বলা যাবে না। ব্যালটে ভোট হলে প্রার্থী এবং ভোটাররা স্বস্তিবোধ করত। এতে আচরণবিধি নিয়েও কমিশনের কঠোর নজরদারি জরুরি।”

ইভিএমে সাধারণ মানুষের ভোট দিতে অনীহা রয়েছে বলে দাবি করেন জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গন প্রতীকের প্রার্থী শহীদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডল।

স্বপন বলেন, “ভোটাররা ইভিএমে এক মার্কায় ভোট দিলে আরেক মার্কায় চলে যায় বলে জানিয়েছেন। এ জন্য প্রচারণার মাধ্যমে তাদের সচেতন করা দরকার।”

যদিও ইভিএম নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন হরিণ প্রতীকের প্রার্থী কৃষিবিদ রেজাউল করিম চৌধুরী।তিনি বলছেন, “ইভিএম একটি আধুনিক প্রযুক্তি; এটা নিয়ে ব্যাপক প্রচার থাকা দরকার।”

প্রার্থীদের সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, “ইভিএমে অনিয়ম একেবারেই অসম্ভব; এটা বিজ্ঞানের বিষয়। এতে একজনের ভোট আরেকজনের প্রতীকে চলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি তাই হতো, তাহলে বিগত নির্বাচনগুলোতে জাতীয় পার্টিসহ অন্য প্রার্থীরা জয়ী হতো না।”  

ইভিএমে কিভাবে ভোট দিতে হয়, তা ভোটারদের জানাতে জেলা প্রশাসন ও তথ্য অফিসের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। এমনকি নির্বাচনের দিন ভোটারদের লাইনেও বিষয়টি নিয়ে ধারণা দেওয়া হবে বলে ইসি জানান। 

তিনি বলেন, “ইভিএমে শুধু ময়মনসিংহ নয়, এর আগে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এতে কোথাও সমস্যা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে আঙ্গুলের ছাপে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে থাকে। সেজন্য সঠিক ভোটার নিশ্চিত হলে ভোট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

“মোট কথা ইভিএম নিয়ে ভয়ের কিছু নেই; বরং ভোটার উপস্থিতিই আসল বিষয়।” 

প্রার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত প্রসঙ্গে ইসি আলমগীর বলেন, “কোনো প্রার্থীর প্রতি অসম্মান করার সুযোগ নেই। আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান। জনগণ যাকে ভোট দেবে, তিনিই নির্বাচিত হবেন। এক্ষেত্রে কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা নিরপেক্ষ না হলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করুন। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

“বিগত সময়ে আপনারা দেখেছেন জেলা প্রশাসক, নির্বাচন কর্মকর্তা ও ওসিসহ অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে বাদ যায়নি প্রার্থীরাও। জাতীয় নির্বাচনে একজন প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে।”

“মোট কথা এই নির্বাচন হবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। এতে জাল ভোট বা অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।” যোগ করেন তিনি।

মতবিনিময় সভায় বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়ার সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রায়হানুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।     

৯ মার্চ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ সিটিতে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে। ভোটের মাঠে মেয়র পদে পাঁচজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭২ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭২ হাজার ৬১৫ জন। হিজড়া ভোটার রয়েছে ৯ জন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ‘কেন্দ্রে ভোটারদের টানতে এবং দলীয় বিভেদ দূর করতে’ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে কাউকে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।