ময়মনসিংহে মেয়র পদে ভোটে আওয়ামী লীগের ছয়জন, বিএনপি নেই

তবে কোথাও কোথাও কাউন্সিলর পদে বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2024, 01:21 PM
Updated : 13 Feb 2024, 01:21 PM

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ভোটে লড়তে ইচ্ছুক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।  

মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষদিন মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থীরা তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

দেড়শ বছরের পুরনো পৌরসভা ভেঙে গড়া এ সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় ভোটে মেয়র হতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের ছয়জন এবং জাতীয় পার্টির একজন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

এ ছাড়া ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬৪ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৯ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ‘কেন্দ্রে ভোটারদের টানতে এবং দলীয় বিভেদ দূর করতে’ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে কাউকে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

এই অবস্থায় দ্বিধা-বিভক্ত ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগে মেয়র পদের উপনির্বাচনে কারা কারা প্রার্থী হচ্ছেন এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আলোচনা চলছিল।

এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দলটির ছয়জন মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও যাচাই-বাছাই, আপিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে কারা কারা চূড়ান্ত লড়াইয়ে মাঠে থাকছেন তা নিয়ে আগামী কয়েকদিন জল্পনা-কল্পনা আর অপেক্ষার মধ্যেই থাকতে হবে নগরবাসীকে। 

তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বিএনপি জানিয়েছে, এই সরকারের অধীনে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেবে না দলটি। তার প্রতিফলন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র পদে পড়লেও অনেক ওয়ার্ডেই বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। 

এ নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় পার্টির এক নেতাও মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা করেছেন।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন

  • মনোনয়নপত্র বাছাই ১৫ ফেব্রুয়ারি

  • আপিলের সময়সীমা ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি; আপিল নিষ্পত্তি ১৯-২০ ফেব্রুয়ারি

  • প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২২ ফেব্রুয়ারি

  • প্রতীক বরাদ্দ ২৩ ফেব্রুয়ারি

৯ মার্চ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ সিটিতে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হবে।

১১৩ বছরের পুরনো ময়মনসিংহ পৌরসভাকে ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর সিটি করপোরেশন হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ২০১৯ সালের ৫ মে প্রথম সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ হয়।

এ ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন পৌরসভার সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটু। তখন কেবল সাধারণ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ভোট হয়।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯০ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭১ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ৭২ হাজার ৬১০ জন নারী। এ ছাড়া হিজড়া ভোটার নয়জন। প্রথমবারের সিটি ভোটে কেন্দ্র ছিল ১২৭টি।

ময়মনসিংহের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, “সকাল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬৪ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৬৯ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।”

মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সদ্য সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ এহতেশামূল আলম, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাদেক খান মিল্কি টজু, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যাপক গোলাম ফেরদৌস জিলু, নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট ফারমার্জ আল নূর রাজীব, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ ড. মো. রেজাউল হক এবং জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডল।

দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একাংশ নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সদ্য সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, “বিগত পাঁচ বছর জনগণের পাশে থেকে কাজ করেছি। চেষ্টা করেছি নগরীকে সুন্দরভাবে সাজানোর জন্য। কিন্তু কোভিড ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে প্রত্যাশা মত উন্নয়ন করতে পারিনি। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে আমাদের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।

“গত নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলাম। এবার অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন। যার কারণে ভোট উৎসবমুখর হবে। আশা করি, জনগণ আগামী ৯ মার্চ আমার কাজের মূল্যায়ন ভোটের মাধ্যমে করবেন।”

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ এহতেশামূল আলম বলেন, “বিগত পাঁচ বছরে নগরীতে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। যার কারণে মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে আমি মেয়র প্রার্থী হয়েছি। মেয়র নির্বাচিত হলে নগরীতে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ যানজট, জলাবদ্ধতা এবং ধুলাবালিমুক্ত নগরী গড়ে তুলব।”

শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাদেক খান মিল্কি টজু বলেন, “নির্দিষ্ট প্রতীক না থাকলেও আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী আমার সঙ্গে রয়েছেন। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আমার বড় শক্তি ‘ইমেজ’। শহরে আমার ভালো একটি ইমেজ রয়েছে। এবার পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। আশা করি, সাধারণ ভোটাররা আমাকে মূল্যায়ন করবেন।”

জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডল বলেন, “ময়মনসিংহে জাতীয় পার্টির একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। যেহেতু এখানে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছে সেহেতু মানুষের জাতীয় পার্টিকেই বেছে নেবেন।

“যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। জয়ী হলে অবহেলিত ময়মনসিংহ নগরীকে ঢেলে সাজাবো সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে।”

আরও পড়ুন:

Also Read: ময়মনসিংহে সিটি ভোটের হাওয়া, প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ