ময়মনসিংহ সিটি ভোট: ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ সরলেন রাজীব, সমর্থন নিয়ে ‘ধোঁয়াশা’

বর্তমানে এ নির্বাচনে মেয়র পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাঁচজন।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2024, 03:50 PM
Updated : 22 Feb 2024, 03:50 PM

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে টিকে থাকা ছয়জনের মধ্যে আওয়ামী লীগের একজন ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

এখন লড়াইয়ের ময়দানে ক্ষমতাসীন দলের চারজন নেতা ছাড়াও জাতীয় পার্টির একজন রয়েছেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট ফারমার্জ আল নূর রাজীব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না বলে বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন বিকাল ৫টায় জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান।

নির্বাচনের এ সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, এ ছাড়া নয় কাউন্সিলর প্রার্থীও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

এদিকে ময়মনসিংহ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ আল নূর তারেকের ছেলে ফারমার্জ আল নূর রাজীব মনোনয়ন প্রত্যাহার করার বিষয়টি নিয়ে শহরজুড়ে আলোচনা হচ্ছে।

দলটির বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদ্য সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটুর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জোরালো করার স্বার্থেই রাজীব প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৯ মার্চ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ২২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল। শুক্রবার প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।

নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল বলেন, মেয়র পদে মোট ৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক গোলাম ফেরদৌস জিলুর মনোনয়ন আগেই বাতিল হয়ে যায়।

“এরপর বাকি ছয় প্রার্থীর মধ্যে আজ প্রত্যাহারের শেষদিন মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন অ্যাডভোকেট ফারমার্জ আল নূর রাজীব।”

ফারমার্জ সরে দাঁড়ানোয় বর্তমানে এই নির্বাচনে মেয়র পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাঁচজন। তারা হলেন- সদ্য পদত্যাগ করা সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাদেকুল হক খান (টজু), জাতীয় পার্টির প্রার্থী শহীদুল ইসলাম (স্বপন মণ্ডল) এবং কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ রেজাউল হক।

নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, “এই নির্বাচনে নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬৪ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেয়। যাচাই-বাছাই ও আপিলে টিকে থাকে ১৫৮ জন। তাদের মধ্যে ৯ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় বর্তমানে ৩৩ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে ১৪৯ জন।

“তবে ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে কেউ মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় এই পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৬৯ জন বহাল রয়েছে।”

এদিকে ঘনিয়ে আসা এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে নগরজুড়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রার্থীদের বিরামহীন প্রচার ও প্রচারণায় চলছে ভোট প্রার্থনা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ‘কেন্দ্রে ভোটারদের টানতে এবং দলীয় বিভেদ দূর করতে’ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে কাউকে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

এই অবস্থায় দ্বিধা-বিভক্ত ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগে মেয়র পদের নির্বাচনে কারা কারা প্রার্থী হচ্ছেন এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আলোচনা চলছিল।

স্থানীয় রাজনীতিবিদরা বলছেন, এখন আওয়ামী লীগের যে চার নেতা প্রার্থী হিসেবে আছেন তাদের মধ্যে দুজন সদ্যসাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটুর বিরোধী হিসেবে পরিচিত। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম এবং শহর আওয়ামী লীগে সাবেক সভাপতি সাদেকুল হক খান (টজু)।

নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহারের ব্যাপারে জানতে চাইলে রাতে ফারমার্জ আল নূর রাজীব বলেন, “কথা ছিল আমরা দুজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে একজন থেকে যাব। তাতে এখানে নির্বাচন জমত। কিন্তু একজন রয়ে গেছেন।

“আমি পরিবর্তনের বৃহত্তর স্বার্থে এবং সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্তর নির্দেশে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছি”, বলেন রাজীব।

তবে নিজে কাউকে সমর্থন দিচ্ছেন কি-না তা পরিষ্কার করেননি রাজীব।

Also Read: ময়মনসিংহ সিটি ভোট: ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ সরলেন রাজীব, সমর্থন নিয়ে ‘ধোঁয়াশা’

Also Read: ময়মনসিংহ সিটিতে আওয়ামী লীগ নেতার মনোনয়ন বাতিল

Also Read: ময়মনসিংহে সিটি ভোটের হাওয়া, প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

নগরীর জনদুর্ভোগ নিয়ে পোস্টার ডিজাইন করায় সম্প্রতি কবি ও অ্যাক্টিভিস্ট আশরাফ শামীমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার মুক্তি দাবি করে এবং এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করেন মেয়র পদপ্রার্থী এহতেশামূল আলম। সেই সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পাশে রাজীবকেও দেখা গেছে।

অপরদিকে মেয়র প্রার্থী এহতেশামুল আলম এবং সাদেকুল হক খান টজু দুজনই ভোটের লড়াইয়ে সংসদ সদস্যের সমর্থন চেয়েছেন। কিন্তু সংসদ সদস্য কাকে সমর্থন দিচ্ছেন তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে বলে জানান স্থানীয় ভোটাররা।

দেশের অষ্টম বিভাগ ময়মনসিংহ শহরের ঐতিহ্যবাহী পৌরসভাকে বিলুপ্ত করে ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর সিটি করপোরেশন ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। ওই সময় ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন মো. ইকরামুল হক টিটু। এরপর মসিক গঠনের পর টিটুকে প্রশাসক হিসাবে নিযুক্ত করে সরকার।

২০১৯ সালের ৫ মে অনুষ্ঠিত হয় এই সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন। সে সময় প্রশাসক পদে বহাল থেকেই নির্বাচনে অংশ নেন টিটু। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।

বর্তমান সিটি করপোরেশনে ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯০ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭১ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ৭২ হাজার ৬১০ জন নারী। এছাড়াও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ৯ জন।

আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন- ইভিএমের মাধ্যমে ১২৮টি ভোটে কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে। এই লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে বলে নির্বাচন কর্মকর্তা সফিকুল জানিয়েছেন।