বিএনপি ভোটে না থাকলেও প্রার্থী হয়েছেন তারা; আশা করছেন, বিএনপি সমর্থকরা তাদের ভোট দেওয়ার জন্য হলেও কেন্দ্রে যাবেন।
Published : 28 Feb 2024, 10:47 PM
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীরা প্রতীক নিয়ে প্রচার শুরু করেছেন ছয় দিন হয়ে গেছে; ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান হবি এবারও প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু এলাকায় তার কোনো প্রচার নেই; পোস্টারও চোখে পড়েনি।
কারণ কী- জানতে চাইলে কৃষ্টপুর বস্তির পাশে একটি দোকানে চা পানরত আব্দুল হালিম বলছিলেন, “হবি ভাই তো কাইল মাত্র মার্কা পাইছে। আগে তো তারে বাদ দিছিল এখন আবার দিছে। রাতারাতি তো আর পোস্টার ছাপাইতে পারে নাই। সেই কারণে, অন্যরা প্রচারে আগাইয়া গেছে। হবি ভাই, মাত্র শুরু করব।”
আলিয়া মাদ্রাসার ডান পাশ দিয়ে নিরাময় ক্লিনিকের পাশের গলি থেকে শুরু করে দৌলত মুন্সী লেইন, কৃষ্টপুর হয়ে যে রাস্তাটা একেবারে বাঘমারায় এসে মিশেছে, মূলত ওই এলাকাটাই ১৮ নম্বর ওয়ার্ড। এর ডান পাশটা রেললাইন বরাবর সোজা ময়মনসিংহ জংশন স্টেশনে চলে গেছে। শহরের যে কয়টি এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ির বদনাম রয়েছে, কৃষ্টপুর বস্তি তার একটি।
এই এলাকাতেই পরপর দুবার কাউন্সিলর পদে জয়লাভ করেছেন হাবিবুর রহমান হবি। তিনি বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত। দল নির্বাচনে না গেলেও তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছেন। মনোনয়নপত্র দাখিল করার পর সেটি বাতিল করা হয়েছিল। তবে আপিলে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন।
দল নির্বাচনে এল না, কিন্তু হবি গেলেন কেন? জবাবে টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, “এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপির কোনো ব্যাপার নাই। কারো তো কোনো দলীয় প্রতীক নাই। আর আমার যারা ভোটার-সমর্থক তার মধ্যে আল্লায় দিলে ৮০ ভাগই আওয়ামী লীগের আর ২০ ভাগ বিএনপির।”
হাবিবুর রহমান হবি বলছিলেন, “আমি তো নির্বাচন করতে চাই নাই। কিন্তু এলাকার মানুষের চাপে পড়ে ইলেকশনে দাঁড়াইতে হইছে। আমি আগেও নির্বাচন করতে চাই নাই। জনগণ ছাড়তে চায় না।”
জনপ্রিয়তা থাকলে কেন নির্বাচন করতে চান না- এ প্রশ্নে চারবার ভোটের ময়দানে থাকা এই প্রার্থী বলেন, “ভোট এখন খারাপ মানুষের জন্য। ভালা মানুষ ভোট করে না। কিন্তু আমাকে চাপে পড়ে ভোটে আসতে হয়।”
বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিতির কারণে ভোটের মাঠে কোনো অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে কি না জানতে চাইলে হবি বলেন, “এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাদের দিক থেকে কোনো সমস্যা নাই। সমস্যা উপরের লেভেলের। কারণ, তাদের এখানে স্বার্থ আছে। আমার কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।”
বুধবারই প্রথম জনসংযোগ করেছেন হবি। সঙ্গে এলাকার সমর্থকরাও ছিলেন। পোস্টার, প্রচারপত্রের কাজ এখনও ছাপাখানায়। ফলে এসব ছাড়াই মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন এই কাউন্সিলর প্রার্থী।
তিনি বলেন, “আমার সাড়া তো সবসময়ই একরকম। কিন্তু ভোট নিয়া মানুষের মধ্যে সন্দেহ আছে। কারণ, আগেও আমার বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।”
এ সরকারের অধীনে বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা মেনে দলের কোনো নেতাই ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। তবে কাউন্সিলর পদে হবির মত বেশ কয়েকজন ভোট করছেন।
তারা আশা করছেন, দল নির্বাচন বর্জন করলেও বিএনপি ঘরানার সমর্থকরা তাদের ভোট দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রে যাবেন।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ভোটে এবার মেয়র ও কাউন্সিলর পদ মিলিয়ে প্রার্থী হয়েছেন মোট ২২৩ জন। এর মধ্যে বিএনপিপন্থি সাত থেকে আটজন জন প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থী হিসেবে এই সংখ্যা একেবারে নগণ্য হলেও ময়মনসিংহ শহরে বিএনপির ভোটারের সংখ্যাটা ছোট নয়।
নগরীর মানবাধিকারকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট কবি আলী ইউসুফ বলছিলেন, “ময়মনসিংহ শহরে আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপির ভোটার কম নয়। যদি ধরি, ৬০ ভাগ ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাবেন, তাহলে এর মধ্যে বিএনপির একটা বড় অংশও থাকবে। তারা নিজেদের দলের কর্মী হোক আর আত্মীয়-স্বজন হোক; এই নির্বাচনে ভোট দিতে যাবেন।
“সংসদ নির্বাচনে তাদের কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার পড়ে নাই। কারণ, তাদের কেউ প্রার্থী ছিল না। ফলে দলের কথা মানতে তাদের কোনো অসুবিধা হয় নাই। কিন্তু এটা তো পাড়ার বা প্রতিবেশীর ইলেকশন। ফলে তারা ভোটকেন্দ্রে যাবে এটা বলা যায়।”
ময়মনসিংহ শহরের আমপট্টি, আঠারবাড়ী বিল্ডিং, ছোটবাজার প্রেসপাড়া হিসেবে পরিচিত। সেখানে বসে নির্বাচন নিয়ে আলাপে এক যুবক বলেন, বিএনপির যারা কাউন্সিলর পদে ভোট দিতে যাবেন, তারা সাধারণ কাউন্সিলর পদে না হয় নিজের দলের লোককে ভোট দেবে। কিন্তু মেয়র পদে তো তাদেরকে আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে হবে। কারণ, বিএনপির বা বিএনপিপন্থি কোনো প্রার্থী মেয়র পদে নেই।
হাসতে হাসতে তিনি বলেন, “যদি আওয়ামী লীগকে ভোট না দেয়; তাহলে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্কের ভাই জাতীয় পার্টিকেও ভোট দিতে পারবে। যদি কাউকেই ভোট না দেয় তাহলে সেটা ফাঁকা রেখেও চলে আসতে পারে।”
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন। ৯ মার্চ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) তাদের ভোটগ্রহণ হবে।
২০১৯ সালে এই সিটির প্রথম নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মো. ইকরামুল হক টিটু।
আওয়ামী লীগ এবার সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে কারণে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দেয়াল ঘড়ি নিয়ে।
তার সঙ্গে মেয়র পদের ভোটের লড়াইয়ে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম (ঘোড়া প্রতীক), শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাদেক খান মিল্কী টজু (হাতি প্রতীক), কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ ড. রেজাউল হক (হরিণ প্রতীক) এবং জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডল (লাঙ্গল প্রতীক)।
এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবারের নির্বাচনে।
বুধবার ময়মনসিংহ শহরে বিএনপিমনা তিনজন সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের তিনজন প্রার্থী এবং বেশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের। তারাও বলছিলেন, দলের ছোট-বড় নেতারা হয়ত ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। কিন্তু কর্মী-সমর্থকদের একটা অংশ ভোটকেন্দ্রে যাবেন বলেই তাদের ধারণা।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হান্নান বলেন, “জাতীয় নির্বাচনেও কিছু সংখ্যক প্রার্থী ছিল; এই নির্বাচনেও আছে এটা সত্য। ময়মনসিংহ নগরীতে ৭-৮ জন প্রার্থী আছেন কাউন্সিলর পদে। এটার একটা কারণ হচ্ছে, কোনো মার্কা নেই। ফলে তারা মনে করছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিলেও তাদের ক্ষতি হবে না। এটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
“কিন্তু দল গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলনের যে সিদ্ধান্ত সেটার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমাদের আন্দোলন চলমান আছে। এবং সেই আন্দোলনে মানুষের জনমত প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, “বিএনপির যেসব কর্মী-সমর্থক ভোটারদের কাছে বড় মুখ করে যাচ্ছেন, তাদের কিন্তু আরেকটা কঠিন সত্যের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সেটা হচ্ছে, ভোটাররা বলছেন, ‘আমরা কেন্দ্রে যাব না’। এই সরকারের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই। ফলে আমার মনে হয়, বিএনপির সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। যারা যাবেন তাদের সংখ্যা একেবারে নগণ্য।”
বিএনপি নির্বাচনে এলে দলের নেতাকর্মীরা উজ্জ্বীবিত হতেন কি-না, জনসম্পৃক্ততা বাড়ত কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে এম এ হান্নান বলেন, “দেখুন, এই সরকারের প্রতি আস্থাহীনতা একদিনে তৈরি হয়নি। জাতীয় নির্বাচন, স্থানীয় নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় এটা হয়েছে। ফলে এই নির্বাচনে আসার মানে হচ্ছে, সরকারের প্রহসনের সঙ্গে নিজেকে জড়িত করা।
“আর আন্দোলনেই একটি রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা তৈরি হয়। যেটা বিগত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রমাণ করে দিয়েছে। ভোটাররা কেন্দ্রে না গিয়ে একটা নিরব বিপ্লব করেছে। গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে দিন দিন বিএনপির জনমত বাড়ছে।”
নগরীর নতুন বাজার রেলক্রসিং পার হয়ে গরুর খোঁয়াড় মোড় থেকে যে ছোট রাস্তাটি আকুয়ার দিকে গেছে, তার ডানপাশ বরাবর নওমহল। এটি ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। আকুয়া-নওমহল বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানকার অনেক নেতাই জেলা ও মহানগর বিএনপিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
নওমহলের ১১ নম্বর ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন বিএনপিপন্থি ফরহাদ আলম। তিনি এ নিয়ে পর পর তিনবার জয় পেলেন।
এখানে ফরহাদ আলমের যে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করে দিয়েছে। পরে তিনি আর আপিলও করেননি। ফলে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পেয়ে যান ফরহাদ।
বুধবার দুপুরে নওমহল স্কুলের পাশ দিয়ে গজিয়া বাড়ি মাঠের দিকে যাওয়ার সময় দেখা যায়, সেখানে ভোটের তেমন কোনো প্রচার নেই। দুজন নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রচার মাইক থেকে প্রচার করতে দেখা যায়; তবে কোনো মেয়র প্রার্থীর প্রচার চোখে পড়েনি। এই ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন পাঁচজন। তার মধ্যে একজন বিএনপিপন্থি নেত্রীও রয়েছেন।
নওমহলের এই রাস্তাটি গিয়ে মিলেছে আকুয়া চৌরঙ্গীর মোড়ের সঙ্গে। এলাকাটিতে বেশ কিছু ছাত্রাবাস রয়েছে। নওমহল মসজিদের পাশের স্থানীয় একটি মুদি দোকানের সামনে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এখানে অন্যান্য এলাকার তুলনায় ভোটের উত্তাপ কিছুটা কম।
বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচনের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাসিরাবাদ কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ফরহাদ ভাইয়ের বড় ভাই আফতাব উদ্দিন দুলাল এখানে দীর্ঘদিন কাউন্সিলর ছিলেন। ফরহাদ ভাই নাসিরাবাদ কলেজে ছাত্রদলের ভিপি-জিএস ছিলেন। এলাকায় বিএনপির ভোট বেশি। ফলে তিনি এখানে পর পর নির্বাচিত হয়েছেন।”
বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, তারপরেও কেন এবার ভোটে গেলেন- এই প্রশ্নে ফরহাদ আলম বলেন, “দেখুন আমি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। আর এখানে স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির ব্যাপার নেই।”
বিএনপিরে বর্জনে দলের সমর্থকরা ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন কি না, এ প্রশ্নে ফরহাদ বলেন, “সবাই আসবে না। যদি বিএনপিমনা প্রার্থী থাকে বা পরিচিত আত্মীয়-স্বজন কেউ তাকে, তাহলে তারা ভোটকেন্দ্রে যাবে। এটাই স্বাভাবিক।”
বিএনপিপন্থি হিসেবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হচ্ছেন ফরহাদ, মেয়র যদি আওয়ামী লীগের হয়, কাজ করতে কোনো অসুবিধা হবে না- এ প্রশ্নে তিনবারের এই কাউন্সিলর বলেন, “মেয়রের সঙ্গে মিলিয়ে সবাইকে কাজ করতে হয়। মেয়র যে কোনো দলের হতে পারে; তার সঙ্গে সমন্বয় করেই তো এলাকার উন্নয়ন করতে হবে। আশা করি, সমস্যা হবে না।”
বিএনপিপন্থি তো আরও প্রার্থী আছেন, তারা কি ভোটের মাঠে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন? এ প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ আলম বলেন, “এটা তারাই বলতে পারবে।”
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ সদর আসনে ভোটের হার ছিল প্রায় ৪৪ শতাংশ। দুই মাসের ব্যবধানে সিটি নির্বাচনে কেমন ভোট পড়তে পারে?
ফরহাদ আলম বলেন, “জাতীয় নির্বাচনে আসলে ২৬ থেকে ২৭ ভাগ ভোট পড়েছে। এবার মনে হয় ৪০ ভাগ ছাড়িয়ে যাবে।”
আমপট্টি, গোলপুকুর পাড়, পৌরসভা রোড মিলিয়ে সাত নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন মো. আলী আশরাফ খান ভুলন। এলাকায় তিনি বিএনপিপন্থি হিসেবে পরিচিত হলেও নিজে সেই পরিচয় দিতে নারাজ।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে একবার কমিশনার পদে জয়লাভ করা ভুলন বরং নিজেকে ‘বঙ্গবন্ধুর অনুসারী’ হিসেবে পরিচয় দিতে ভালবাসেন। বিএনপি হিসেবে তার পরিচয়কে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীদের ‘অপপ্রচার’ বলতে চান তিনি।
ভুলন যখন কমিশনার ছিলেন, তখন পৌরসভার মেয়র পদে জয় পেয়েছিলেন বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন খান দুলু। তিনি প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন।
দুলু পরে বিএনপিতে ‘সংস্কারপন্থি’ হিসেবে পরিচিত হন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই তিনি গড়তে পারেননি।
সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ভুলন বলেন, “দেলোয়ার হোসেন খান সংসদ নির্বাচন করে ভুল করেছেন। তিনি যদি এখন মেয়র পদে নির্বাচন করতেন, তাহলে ভালো করতেন। কারণ মেয়র পদে টিটুর বিরুদ্ধে শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। দুলু এবার এখানে প্রার্থী হলে মেয়র পদেও ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হত।”
দুপুরে টাউন হলের অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে নির্বাচন কমিশনের একটি অনুষ্ঠানে পাশাপাশি তিনটি আসনে পাওয়া গেল বিএনপিপন্থি তিনজন নারী কাউন্সিলর প্রার্থীকে। এর মধ্যে দুজন আবার একই ওয়ার্ডে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তারা হলেন- সংরক্ষিত ৪ নম্বর ওয়ার্ডে রোকশানা শিরীন, সংরক্ষিত ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মোছা. খালেদা বেগম ও রোখসানা পারভীন কাজল। তবে তারা এই মুহূর্তে বিএনপি নেত্রী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলেন না।
বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, তাহলে ভোটে কেন এলেন- এমন প্রশ্ন শুনেই সবার বাঁয়ে বসা প্রার্থী জিভ কেটে বলছিলেন, “ও আল্লাহ ভাই, এখন এইসব কথা বইলেন না। আমি আপনার কোনো প্রশ্নের উত্তর দেব না।”
ভোটের মাঠে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে ওই প্রার্থী অন্যদিকে মনযোগ দিয়ে বলেন, “না কোনো সমস্যা হচ্ছে না।”
তবে মাঝখানে বসা প্রার্থী খুব নিচু স্বরে বলছিলেন, “পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে, কাঁচি দিয়ে কেটে দিচ্ছে।”
কারা এসব করছে, নির্বাচন কমিশনে কোনো অভিযোগ দিয়েছেন কি-না জানতে চাইলে ওই প্রার্থী বলেন, “যারা দেওনের তারাই দিচ্ছে। বুঝেন না? আর অভিযোগ দিয়ে কী হবে। আমি কোনো অভিযোগ দিইনি।”
তবে ডান দিকে বসা প্রার্থী খুব কষ্টের সঙ্গে বললেন, “আমার নামে প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থী নানা অপপ্রচার করছে। চরিত্র নিয়ে কথা বলছে। এটা খুব খারাপ কাজ করছে। এটা ঠিক না।”
বিএনপি সমর্থক ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দ্রে আসবে কিনা জানতে চাইলেন তিন নারী প্রার্থীই এক সুরে বলেন, জাতীয় নির্বাচনে না এলেও এই নির্বাচনে আসবে। কারণ, দলের প্রার্থী যারা হয়েছেন তারা আত্মীয়ও।”