ময়মনসিংহ সিটি ভোট: টিটুর প্রতিদ্বন্দ্বী কে?

“টিটু মানুষের সাথে ভালোভাবে মিশতে পারেন। অন্য প্রার্থীরা প্রচারণা চালালেও তুলনামূলক কিছুটা কম।”

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2024, 01:51 PM
Updated : 25 Feb 2024, 01:51 PM

গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ময়মনিসংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তৃতীয় দিনের প্রচার চালিয়েছেন প্রার্থীরা। তারা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ছুটছেন; চষে বেড়াচ্ছেন দোকানপাট, মার্কেট কাঁচাবাজার।

মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারপত্র বিলির পাশাপাশি মাইকিংয়ে সরগরম শহরের অলিগলি। পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে নগরী। গণসংযোগ, উঠান বৈঠক আর চা আড্ডায় জমে উঠেছে ভোটের আমেজ। পাড়া-মহল্লায় স্থাপন করা হয়েছে নির্বাচনি প্রচারকেন্দ্র; সেখানে প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ভিড় লেগেই থাকছে সারাক্ষণ।

উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। তবে নানা হিসেব নিকেশ করেই ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে চান।

নগরীর কয়েকজন ভোটার বলছেন, প্রচারে এখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছেন সদ্য সাবেক মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু। বিএনপি নির্বাচনে এলে ভোটের পরিবেশ আরও জমজমাট হতো বলেও মনে করছেন তারা।

মেয়র পদে ময়মনসিংহ সিটির সদ্য সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু (দেওয়াল ঘড়ি), জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামূল আলম (ঘোড়া), শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাদেক খান মিল্কী টজু (হাতি), কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ রেজাউল হক (হরিণ) এবং জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডল (লাঙ্গল) প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন।

প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি

ইকরামুল হক টিটু রোববার সকালে নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা এলাকা, পাটগুদাম ব্রিজমোড় এবং চরঈশ্বরদিয়া এলাকায় প্রচার চালান। এ সময় তিনি বলেন, “অসুস্থ শরীর নিয়েও অবিরাম প্রচার চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। লক্ষ্য এবার জয়ী হয়ে চলমান উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা। “

তার পক্ষে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া রয়েছে দাবি করে টিটু বলেন, “রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছি। এবার যদি সুযোগ পাই তাহলে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়ে নগরীর যানজট নিরসনে কাজ করব।”

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রচার চালিয়েছেন নগরীর কলেজরোড, বড়বাজারসহ বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে।

এ সময় পরিবর্তনের লক্ষ্যে ঘোড়া প্রতীকে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের নগরী থেকে পরিত্রাণ চায়; সেই লক্ষ্যে আমি প্রার্থী হয়েছি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের আমার পক্ষে অবস্থান রয়েছে। সবার মাঝে ঘোড়ার জোয়ার উঠেছে।”

প্রচারে শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাদেক খান মিল্কী টজু বলেন, “নগরের মানুষ আকাশ দেখতে চায়, পরিচ্ছন্ন জায়গায় বসবাস করতে চায়, যানজট সমস্যার নিরসন চায়। তাই তাদের দাবির প্রেক্ষিতে আমি প্রার্থী হয়েছি। পছন্দের প্রতীক হাতি পেয়েছি। আশ রাখছি, মানুষ পরিবর্তনের লক্ষ্যে হাতি মার্কায় ভোট দেবে।”

নগরীর সানকিপাড়া এলাকায় প্রচার চালিয়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল মুনসুর বলেন, “মিষ্টি লাউ প্রতীকে মানুষের জোয়ার উঠেছে। এককভাবে মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছি। সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে মানুষের মাঝে আমার একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।”

ওই এলাকায় প্রচারপত্র বিলি করেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু। তিনি বলেন, “আমি টানা পাঁচবারের কমিশনার ও কাউন্সিলর প্রার্থী। আমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী বেশ কয়েকজন প্রার্থী রয়েছে। তারা সবাই মিলে যে ভোট পাবেন আমি একাই তা পাব।”

ভোটারা যা বলছেন

১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার হাদিউল ইসলাম বলেন, “মেয়রপদে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে প্রচারণায় টিটুকে বেশি দেখা যাচ্ছে।

“তিনি মানুষের সাথে ভালোভাবে মিশতে পারেন। অন্য প্রার্থীরা প্রচারণা চালালেও তুলনামূলক কিছুটা কম।”

১০ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার মোজ্জামেল হোসেন বাবু বলেন, “যে কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন তার মধ্যে টিটু অন্যতম। গত পাঁচ বছরে তিনি উন্নয়ন করেছেন। চলামান কাজ সম্পন্ন হলে তা আরও দৃশ্যমান হবে।

“তবে বিএনপি নির্বাচনে আসলে ভোটের পরিবেশ আরও জমজমাট হত। প্রার্থীদের প্রচারণা যতই বাড়ছে, মনে হচ্ছে ভোটের উত্তেজনা ততই বাড়ছে।”

ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩২ পুরুষ এবং ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৫৫ নারী। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৯ জন। তারা আগামী ৯ মার্চ ইভিএমে ১২৮ কেন্দ্রে ভোট দেবেন।

মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী ছাড়াও নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে যাচাই ও আপিলে ১৫৮ জনের প্রার্থিতা টেকে। ৯ জন সরে যাওয়ায় বর্তমানে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ১৪৯ এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ৬৯ জন।

নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিল নির্বাচিত হওয়ায় কাউন্সিলর পদে ৩২ ওয়ার্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন:

Also Read: ময়মনসিংহ সিটি ভোট: প্রতীক পেয়ে প্রচারে প্রার্থী

Also Read: ময়মনসিংহ সিটিতে আওয়ামী লীগ নেতার মনোনয়ন বাতিল

Also Read: ময়মনসিংহ সিটি ভোট: ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ সরলেন রাজীব, সমর্থন নিয়ে ‘ধোঁয়াশা’

Also Read: নগরীর সমস্যা নিয়ে পোস্টার: গ্রাফিক ডিজাইনার শামীম কারাগারে

Also Read: ময়মনসিংহ সিটিতে আওয়ামী লীগ নেতার মনোনয়ন বাতিল

Also Read: ময়মনসিংহে সিটি ভোটের হাওয়া, প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

Also Read: ময়মনসিংহে মেয়র পদে ভোটে আওয়ামী লীগের ছয়জন, বিএনপি নেই

Also Read: ফের সুযোগ চান টিটু, পরিবর্তনের ডাক আলম-টজুর

Also Read: ময়মনসিংহ সিটি ভোট: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত একজন কাউন্সিলর