বিজিপির ৬৮ সদস্য বাংলাদেশে এসে আত্মসমর্পণ করেছে, তাদের মধ্যে আহত ১৫ জন বলে বিজিবি জানিয়েছে।
Published : 05 Feb 2024, 12:51 AM
মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরতিহীন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে সশস্ত্রদের অনুপ্রবেশ ঘটছে বাংলাদেশে; তাদের অনেকে আহত হয়েই যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন। ওপারে তুমুল যুদ্ধ আর গোলাগুলির শব্দে ওই এলাকার বাসিন্দারাও রয়েছেন আতঙ্কে। একেবারে সীমান্তবর্তী এলাকার অনেকেই বাড়িঘর ফেলে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
সীমান্তের ওপারে বেশ কয়েকদিন ধরেই সংঘাতের সময় মাঝেমধ্যেই গোলাগুলি এসে পড়েছে এপারের বাড়িঘরে। টানা উত্তেজনাকর এমন পরিস্থিতির মধ্যে রোববার দিনভর মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিজিপি-বর্ডার গার্ড পুলিশ) অর্ধশতাধিকের বেশি সশস্ত্র সদস্যের অনুপ্রবেশ চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আরও বেশি।
দেশটির অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এদিন বিজিপির ৬৮ জন সদস্যের অস্ত্রসহ তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে আশ্রয় নেওয়ার তথ্য দিয়েছে বিজিবি।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম রাতে জানান, তারা এখন আছেন বাংলাদেশের বিজিবির হেফাজতে।
এক বার্তায় তিনি বলেন, বিজিবি তাদেরকে নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। এরমধ্যে আহত ১৫ জন সদস্যকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
অনুপ্রবেশ করা সশস্ত্রদের মধ্যে দুইজন আহতের অবস্থা গুরুতর। তাদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়েছে।
বিজিপি সদস্য ছাড়াও সীমান্তের ওপার থেকে আহত সেনাসদস্য ও আরাকান আর্মির সদস্যদের আসতে দেখার কথা বলেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা তাদেরকে সহায়তা করেছেন বলেও তথ্য দিয়েছেন অনেকে। আহত অবস্থায় তাদের কেউ কেউ যখন সীমান্ত পেরিয়ে আসেন তখন অনেকেই এর ভিডিও করেন।
এ অবস্থার মধ্যে তুমব্রু সড়কসহ আশপাশের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে সীমান্ত এলাকায় পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদরাসা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেউ বাড়ি থেকেও বের হচ্ছেন না। সীমান্ত এলাকার কয়েকটি বাজারে দোকানপাট প্রায় বন্ধ দেখা গেছে। এরমধ্যেও যারা বাজারে আসছেন তারাও দ্রুত বাড়ি ফিরছেন।
স্থানীয়রা বলেন, মাঝে দুদিন বন্ধ থাকার পর শনিবার বিকাল ৩টা থেকে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি ও মর্টার শেলের আওয়াজ আবার শুনতে পান তারা। ধীরে ধীরে গুলির আওয়াজ ও যুদ্ধের ব্যাপকতা বাড়তে থাকে। এর মধ্যে সোয়া ৩টার দিকে উখিয়ার বালুখালী থেকে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের দিকে যাওয়ার পথে উত্তরপাড়া বাজারের কাছে এসে একটি অটোরিকশায় গুলি লাগে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
এ সময় রাখাইনের তুমব্রু রাইট পিলার ক্যাম্প এলাকায় অন্তত ১০টি মর্টার শেল এবং দুই শতাধিক গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। পরে রাতে আর কোনো গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি।
ভোর ৩টা থেকে ফের গোলাগুলি শুরু হয়। এরমধ্যেই রোববার সকালে প্রথমে ১৪ জনের পালিয়ে আসার খবর দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দিনভর গোলাগুলির মধ্যে বিজিপি সদস্যদের আসা অব্যাহত থাকে। বিজিবি জানায়, রাত পর্যন্ত ৬৮ বিজিপি সদস্য অনুপ্রবেশ করেছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, “ভোর রাত ৩টা থেকে গোলাগুলি শুরু হইছে। এখন বিকাল ৫টা বাজে গোলাগুলি বন্ধ হয় নাই, যুদ্ধ চলতাছে। আমার বাড়িতে এসে একটা মর্টার শেল পড়ছে। ঘরের টিন ঝাঁঝড়া হয়ে গেছে। আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশে ঢুকেছে মিয়ানমারের ৬৮ সীমান্তরক্ষী: বিজিবি
মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে দুজন আহত, শিক্ষার্থীশূন্য স্কুল
মিয়ানমারের ১৪ সীমান্তরক্ষী পালিয়ে বাংলাদেশে
দুদিন পর নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গোলাগুলি, অটোরিকশায় লাগল গুলি
“আমার ওয়ার্ডে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রবীন্দ্র নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সামনে কী হয় আল্লাহ জানে আর মালিক জানে। আমরা নিরাপদ নাই। ওপার থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে অনেকেই আসতেছে। দোয়া রাখবেন আপনারা।”
পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পুলিশ ও বিজিবির বান্দরবান ও কক্সবাজারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, আরাকান আর্মি সঙ্গে মিয়ানমারের আর্মির যুদ্ধ চলছে। আরাকান আর্মি ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে সামনের দিকে যাচ্ছে। একের পর এক ঘাঁটিগুলো আরকান আর্মি দখল করে নিচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন যেগুলো ছিল, সেগুলোও তারা দখল করে নিয়েছে।
“মিয়ানমারে এই যুদ্ধ কত দিন চলবে আমরা জানি না। তবে বাংলাদেশ সীমান্ত ক্রস করে কাউকে আর আসতে দেওয়া হবে না।”
যুদ্ধ করছে কারা
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে।
বাহিনীগুলো হল- তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি-টিএনএলএ, আরাকান আর্মি-এএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি-এমএনডিএএ। তারা শান, রাখাইন, চীন ও কেয়াহ রাজ্যে লড়াই চালাচ্ছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনাপোস্ট দখল করে ইতোমধ্যে তারা সাফল্য দেখিয়েছে।
আরাকান আর্মি (এএ) এ জোটের অন্যতম অংশ। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র বাহিনী এটি। তারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।
রাখাইনে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও। যুদ্ধ শুরুর পর রোববার সবচেয়ে বড় অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটল।
২০২২ সালের অগাস্টের শেষ ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে বাংলাদেশের সীমানার ভেতর গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। অনেক মানুষ আতঙ্কে সীমান্ত ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছিল। তখন দেশটির রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে এর প্রতিবাদ, নিন্দা ও উদ্বেগের কথা জানিয়েছিল ঢাকা।
সরেজমিন তুমব্রু: গোলাগুলির মধ্যেই সীমান্তে বাস
রোববার দুপুরে তুমব্রু বাজার, তুমব্রু পশ্চিমকূল, তুমব্রু উত্তরপাড়া, কোণারপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, লোকজনের খুব একটা চলাচল নেই। এসব এলাকার সবখান থেকেই গোলাগুলির প্রচণ্ড শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
বেলা পৌনে ৩টায় তুমব্রু পশ্চিমকূল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হঠাৎ করেই লোকজনের মধ্যে শোরগোল শুরু হয়েছে। পরে তারা জানান, সেখানে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিপির গুলির মধ্যে টিকতে না পেরে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কয়েকজন এদিকে চলে এসেছেন। আহত অবস্থায় অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তারা।
একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে তাদের দিকে ক্যামেরা তাক করতেই একজন পোশাক খুলে ফেলেন। তার পায়ে গুলি, রক্ত ঝরছিল। একটি কাপড় দিয়ে ক্ষত স্থান বেঁধে রেখেছিলেন। তিনি হাঁটতে পারছিলেন না। হাতে অস্ত্র ছিল। তখন স্থানীয় লোকজন তাকে ধরে নিয়ে যান।
আরও পড়ুন:
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে এসে পড়ল ৩ মর্টার শেল
অভ্যুত্থানের ৩ বছরে প্রথমবার বেকায়দায় মিয়ানমারের জান্তা প্রধান
জান্তা আমলে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে: ভলকার তুর্ক
মিয়ানমারের ওপর আবার যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা
এর কিছু পরে পশ্চিমকূলের আরেকটি সীমান্ত এলাকায় গেলে সেখানকার বাসিন্দারা বলেন, তাদের এদিক দিয়ে চারজন ঢুকেছেন। তাদের পায়ে, উরুতে, হাঁটুতে গুলির চিহ্ন ছিল। তারা এপারে এসে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানেই তারা আত্মসমর্পণ করেন।
সেখানে থাকা লোকজনের দাবি, যেভাবে যুদ্ধ হচ্ছে, তাতে সীমান্ত এলাকার বিজিপির ক্যাম্পগুলো দখল হচ্ছে বোঝাই যাচ্ছে। যে কারণে বিজিপি সদস্যরা আসছেন। অপরপক্ষ সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরাও আহত হয়ে আরও অনুপ্রবেশ করতে পারেন বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
চল্লিশোর্ধ্ব স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলছিলেন, “এভাবে এখানে বাড়িঘরে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। দিনরাতে প্রচণ্ড শব্দ আর গোলাগুলি। বাড়ির আশপাশে এসেও গুলি ও মর্টার শেল পড়ছে। বাড়িঘর ছেড়ে নারী-শিশু ও বৃদ্ধরা নিরাপদ আশ্রয়ে অন্য জায়গায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। শুধু গবাদি পশু বাড়িতে রেখে একজন পুরুষ পাহাড়া দিচ্ছেন। বাড়িঘরে রান্নাবান্না বন্ধ।”
তিনি বলছিলেন, “সামনের দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। আমাদের জন্য এখানে থাকা কষ্টকর হবে।”
দুপুর আড়াইটা থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত তুমব্রু বাজার সড়ক, ঘুমধুম মৈত্রী সড়ক (মিয়ানমার-বাংলাদেশ মৈত্রী সড়ক), উত্তরপাড়া সড়ক, তুমব্রু পশ্চিমকূল, কোণারপাড়া এলাকা দিয়ে অন্তত ৩০ জনকে অনুপ্রবেশ করতে দেখা গেছে।
তুমব্রু উত্তরপাড়ার বাসিন্দা অটোরিকশার চালক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “এখানে (সীমান্তের ওপারে) কয়েকটা ক্যাম্প দখল হইছে। এক নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বারের বাড়ির পাশে মিজান সরদারের বাড়ির এখানে একটা মর্টার শেল পড়ছে। সেইটা আমরা গিয়া দেখেছি। পরে বিজিবি নিয়া গেছে।
আরও পড়ুন:
মিয়ানমার সীমান্তে লাগাতার গোলাগুলি, নাইক্ষ্যংছড়ির ৫ স্কুলে ‘ছুটি’
সীমান্তে ‘সর্বোচ্চ সতর্ক’ থাকার নির্দেশ বিজিবি মহাপরিচালকের
মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে ফের গোলাগুলি, এপারে আতঙ্ক
মিয়ানমারের গুলি এসে ভেদ করল টেকনাফের বাড়ির দরজা
মিয়ানমারে যুদ্ধ: রাখাইনের যে খবর পাচ্ছেন ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা
তুমব্রু সীমান্তে রাতেও গোলাগুলি, পরিদর্শনে ডিসি-এসপি
“আর কাইল (শনিবার) পড়ছে পশ্চিকূলের জহুরের বাড়িত। আমরা গেছি, তখন গোলাগুলি চলছে। রাইতে বাড়িতহ ছিলাম। ৩টা ৪৫ এর পর গোলাগুলি আবার শুরু হইছে। এখনও চলছে। মিয়ামারের সেনা বিজিবির কাছে ১৩-১৪ জন আত্মসমর্পণ করছে।”
একই কথা বলেন কোণারপাড়া এলাকার মনির আহমেদ। বলছিলেন, “রাত ৩টা থেকে বাড়ির আশপাশে কয়েকটা মর্টার শেল এসে পড়ছে। গুলিও আসছে। কোন সময় বাড়িঘর জ্বলে যায় এটা নিয়ে আতঙ্কে আছি। কোনো গ্যারান্টি নাই। আমরা সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাই।”
ত্রিশোর্ধ্ব হাবিব আহমেদ পাশের একটি এলাকা থেকে পরিস্থিতি দেখার জন্য তুমব্রু বাজার এলাকায় এসেছেন। সেখানে আরও অনেকেই ছিলেন।
তিনি বলছিলেন, “শুনেছি, এখানে গোলাগুলিতে অনেক বাংলাদেশিও আহত হয়েছেন। এটা শুনেই দেখতে এলাম।”
তুমব্রু বাজার এলাকার বাসিন্দা পঞ্চাশ বছর বয়সী আব্দুল গফুর বলেন, “আছরের পর থেকে তো মুহুর্মুহু খালি গোলা চলতাছে। মর্টার শেল, রাইফেলের গুলি। আমি নামাজ পড়তে বাইর হইছি। অমাার কাছ থেকে পাঁচ মিনিট দূরের পথে গুলি আইসা পড়ছে।”
আরও পড়ুন:
জান্তা আমলে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে: ভলকার তুর্ক
বিদ্রোহী জোটের হামলায় বহু এলাকা হাতছাড়া, কোণঠাসা মিয়ানমার জান্তা
মিয়ানমারে পেরে উঠছে না জান্তা বাহিনী, সমর্থন হারাচ্ছেন মিন অং হ্লাইং
ভারতে পালাচ্ছে মিয়ানমারের সেনারা, উদ্বিগ্ন মিজোরাম
পরে তিনি বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়ের বাড়ি চলে যান। দুপুরে খাবারের পর আবার বাড়ির অবস্থা দেখতে এসেছেন বলে জানান।
গফুর দাবি করছিলেন, সীমান্তের ওপারে বিজিপির যত ক্যাম্প আছে তার অধিকাংশেই দখল হয়ে গেছে। এখন আর তিনটা ক্যাম্প বাকি আছে। সেগুলো দখলে নিতেই যুদ্ধ চলছে। এগুলোও দখলের মুখে রয়েছে।
বিজিপিও আসছে, সঙ্গে বিদ্রোহীরাও
এদিকে বিকালে তুমব্রু বাজারের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন বলেন, সীমান্তের ওপার থেকে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির লোকজনও আহত হয়ে আসছেন। তাদেরকে স্থানীয়রা সহায়তা দিয়েছেন। আহত অবস্থায় লোকজন যখন এপারে আসেন তখন অনেকেই এর ভিডিও করেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এ রকম তিনটি ভিডিওতে আহত কিছু সদস্যদের দেখতে পেয়েছে। এগুলো সকালের দিকের কোনো এক সময় ধারণ করা। পরে স্থানীয়দের ভিডিওগুলো দেখানো হলে, তারা জানান এগুলো এখানকার। ভিডিওতে এলাকার পরিচিতদের চিনতে পারার কথা বলেছেন তারা। ভিডিওগুলোর একটি পশ্চিমকূল ব্রিজ এলাকার এবং একটি তুমব্রু বাজার এলাকার বলে তারা চিহ্নিত করেন। অপরটির স্থান জানা যায়নি।
পশ্চিমকূল ব্রিজ এলাকার ৫৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কালভার্ড সেতুর উপর স্থানীয়রা অনেকেই দাঁড়িয়ে আছেন। সেখান দিয়ে আহত অবস্থায় বিজিপি সদস্যদের নিয়ে আসছেন তাদের সহকর্মীরা। কারও পেটে, কারও ঠোঁটে, কারও পায়ে রক্ত দেখা গেছে। একজনকে তার সহকর্মী কাঁধে করে নিয়ে আসছিলেন। স্থানীয়রাও তাদের চলতে সহায়তা করছিলেন। অধিকাংশের গায়েই বাহিনীর পোশাক পড়া ছিল।
তুমব্রু বাজার এলাকার ৩ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কুয়াশার মধ্যে কিছু লোক অস্ত্র নিয়ে সড়ক ধরে সারি করে আবার কখনও বিছিন্নভাবে দৌড়ে যাচ্ছেন। তাদের সবার হাতে ভারী অস্ত্র। কাঁধে ব্যাগ। তখন বাজারের লোকজনকে ভয়ে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন
প্রত্যাবাসন: রাখাইন ঘুরে ‘উন্নতি’ দেখেছে আরআরআরসি, রোহিঙ্গারা হতাশ
জরুরি অবস্থার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা মিয়ানমার জান্তা সরকারের
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে এসে পড়ল ৩ মর্টার শেল
মিয়ানমারে যুদ্ধ: স্থল সীমান্তের পাশাপাশি নৌপথেও নিরাপত্তা জোরদার
পরে সেখান থেকে তাদেরকে অনবরত গুলি করতে দেখা যায়। বাজারের সব দোকানপাটও প্রায় বন্ধ ছিল। যারা বাজারে এসেছিলেন এ পরিস্থিতিতে তাদের বাড়ির দিকে ছুটতে দেখা গেছে। স্থানীয়রা বলছিলেন, এরা সবাই আরাকান আর্মির লোকজন।
১ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের এ ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন অস্ত্রসহ বাহিনীর পোশাক পরিহিত অবস্থায় ক্ষেতের মাঝ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। তারা যেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন তার পাশে একটি পাহাড় থেকে গুলির আওয়াজ আসছিল।
আহতদের কয়েকজন হাসপাতালে
বিকালে কক্সবাজার সদর জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান বলেন, রাতে দুই বিজিপি সদস্যকে আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে। তাদেরকে কুতুপালংয়ের এমএসএফ হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয়েছে।
এরা হলেন- রি লি থাইনা (২২) এবং জা নি মং (৩০)।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, কক্সবাজার শহরের বেসরকারি একটি হাসপাতালে আহত অবস্থায় বিদ্রোহী আরাকান আর্মির ছয় সদস্যকে ভর্তি করা হয়েছে। তারা দুপুর সাড়ে ১২টায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রবেশ করেন।
আহতরা রাখাইন রাজ্যের বুচিডং, টাংগো এবং ম্রাউ এলাকার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে দুজনের বয়স ২৪, দুজনের ২৩, একজনের ২০ এবং বাকি একজনের ২২ বছর বলে জানা গেছে।
তবে কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কায়সার হামিদ রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ ধরনের কোনো খবর তাদের কাছে নেই। তিনি খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।