মংডু শহরের আশপাশে কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখেছেন তারা।
Published : 05 May 2023, 08:49 PM
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু থেকে ছয় বছর আগে সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসার সময় যে গ্রাম রেখে এসেছিলেন, তার কোনো অস্তিত্ব নেই, সেখানে এখন সারিবদ্ধ ক্যাম্প তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
তবে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখতে যাওয়া শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তারা প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের শুরু করতে চান।
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল ও তাদের সহযোগিতা করতে যাওয়া সাত সদস্যের সরকারি কর্মকর্তা শুক্রবার বিকাল পৌন ৬টায় মিয়ানমার থেকে টেকনাফে এসে পৌঁছায়।
রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের সদস্য আবু সুফিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, মংডু শহরের আশপাশে কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখেছেন তারা।
“সেখানে গ্রামের কোনো অস্তিত্ব নেই। সব কিছু পাল্টে গেছে। তবে সারি সারি ক্যাম্প তৈরি করেছে। এসব ক্যাম্পেই রোহিঙ্গাদের নিয়ে রাখার পরিকল্পনা করছে মিয়ানমার।”
মোহাম্মদ সেলিম নামের প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্য জানান, মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি নিজেই কথা বলেছেন। প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবি জানালেও তাকে জানানো হয়েছে আপাততে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। এনভিসি কার্ডে তাদের ক্যাম্পে থাকতে হবে।
মিয়ানমারের এমন শর্তে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনে আগ্রহী হবে বলে মনে করছেন না সেলিম।
তবে আরেকজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তারা নিজের জন্মভূমিতে ফিরে যেতে চান। তবে তাদের দাবি মিয়ানমারকে মানতে হবে।
শুক্রবার সকাল সোয়া ৯টায় প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজারের টেকনাফের জালিয়াপাড়াস্থ নাফ নদীর টেকনাফ জেটিঘাট থেকে মিয়ানমারের উদ্দেশে রওনা দেয়।
প্রত্যাবাসন: এবার ‘পরিবেশ’ দেখতে মিয়ানমার যাচ্ছেন রোহিঙ্গারা
মিয়ানমারে ফেরার পরিবেশ হয়েছে? দেখতে গেল রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল
বেলা ১১টার দিকে প্রতিনিধিদলটি রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরে পৌঁছায়। পরে মংডু শহরসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম ও বসতি পরিদর্শন করেন তারা। এ সময় দলটির সদস্যরা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য তৈরি বিভিন্ন স্থাপনা ও অবকাঠামো ঘুরে দেখেন।
রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদলে তিনজন নারী এবং ১৭ জন পুরুষ ছিলেন। তারা টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন ক্যাম্পের বাসিন্দা।
প্রতিনিধিদলকে সহযোগিতা করতে মিয়ানমার ঘুরতে গিয়েছিলেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের সরকারি কর্মকর্তা।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “মিয়ানমারের মংডু শহরের আশপাশে পরিদর্শনকালে পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি দেখা গেছে। সেখানে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা, ব্যবসা করা মানুষের ৮০ শতাংশই দেখা গেছে রোহিঙ্গা। সেখানে প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিস্থিতি দেখা গেছে।
“এরপর মিয়ানমারের একটি দল দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সফরে আসবেন। ওখানে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হবে।”
আরআরআরসি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হওয়ার পর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে প্রত্যাবাসনের জন্য আট লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকায় দিয়েছিল। সে তালিকা যাছাই-বাছাই করে মাত্র ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা চূড়ান্ত করে তা বাংলাদেশের কাছে ফেরত পাঠিয়েছিল মিয়ানমার।
এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ই নভেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি আর বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। এরপর ২০১৯ সালে অগাস্টে চীনের তরফ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আরেকটি উদ্যোগ নেওয়া হয়।
কিন্তু নাগরিকত্বের বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যেতে চায়নি। এখন আবার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীনের তরফ থেকে এই তৃতীয় দফার উদ্যোগ নেওয়া হলো।