“তিন দিনের মধ্যে সীমান্তের ওপারে ১৭-১৮টি মর্টার শেল শব্দ শুনা গেছে বলে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।”
Published : 31 Jan 2024, 05:46 PM
বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশে রাতের বেলায়ও গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর আগের রাতে এমন শব্দ শুনেননি তারা।
ওপারে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
দুপুরে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “বিজিবি, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সবার্ত্মক সতর্কতার অবস্থানে রয়েছে। আজকে এখানে এসে আপাতত কোনো প্রকার ঝুঁকি দেখছি না। যে কোনো পরিস্থিতি আমরা সুন্দরভাবে মোকাবেলা করতে পারব।
“সামনে এসএসসি পরীক্ষা আছে। কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে দেখলাম। জরুরি মূহূর্তে প্রয়োজনে যদি কেন্দ্র স্থানান্তর করার বিষয় থাকে, সেক্ষেত্রে বিকল্প কেন্দ্র কী হতে পারে সেগুলো বিবেচনা নিয়েছি। জনসাধারণের মধ্যে কোনো ধরনের আতঙ্ক যেন না থাকে সে ব্যাপারে কাজ করা হচ্ছে।”
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। বাহিনীগুলো হল- তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি-টিএনএলএ, আরাকান আর্মি-এএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি-এমএনডিএএ।
আরাকান আর্মি (এএ) মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র বাহিনী এটি। তারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।
রাখাইনে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও। শনিবার সংঘর্ষের খবরের মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উলুবনিয়া এলাকার নুরুল ইসলামের বাড়িতে একটি গুলি এসে পড়লে আতঙ্ক তৈরি হয়।
গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কে সোমবার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকায় কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘ছুটি’ দিয়ে দেওয়া হয়। তবে মঙ্গলবার স্কুলগুলো ফের খুলেছে।
এই অবস্থার মধ্যেই বুধবার ঘুমধুম এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার।
সীমান্ত পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, “তিন দিনের মধ্যে সীমান্তের ওপারে ১৭-১৮টি মর্টার শেল শব্দ শুনা গেছে বলে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। পরশু 'জিরো লাইনে' আব্দুর রহিম নামে এক ব্যক্তির বাড়ির পাশে একটি গুলির খোসা এসে পড়েছে।
“গতকাল সন্ধ্যায়ও সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির শব্দ শুনা গেছে। আজকে এখনও পর্যন্ত (দুপুর ২টা) কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ দেখতে পাইনি।”
ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওর্যাডের তুমব্রু পাড়ার বাসিন্দা কান্ত কুমার সেন বলেন, “মঙ্গলবার সন্ধ্যারাতে সীমান্তের ওপারে আধাঘণ্টা ধরে গোলাবর্ষণ হয়েছে। তার আগে এরকম কোনোদিন ঘটেনি, শুনিনি। এগুলো অন্যদিনের মত শব্দ নয়।
“মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ক্যাম্প আমাদের বাড়ির পাশে। আবার হঠাৎ করে কখন কী হয় এই ভয়ে মাকে বান্দরবানের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
একই এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ আলম বলেন, “সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির ঘটনা কখনও লাগাতার ঘটে; আবার কখনও হঠাৎ হঠাৎ করে হয়। সীমান্তবাসী নিজের এলাকা ছেড়ে আর কোথায় যাবে? ভয় পেয়ে হলেও নিজের ভিটেমাটিতে থাকতে হচ্ছে।”
জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, “কয়েক দিন ধরে সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সবার সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। বিজিবিসহ সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। পুলিশি যে ব্যবস্থায় রয়েছে সেগুলো আরও ঢেলে সাজানো হয়েছে। নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।”
এদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মূল ট্রানজিট ক্যাম্প বান্দরবানের ঘুমধুম ইউনিয়নে পড়েছে। সেগুলো অনেকাংশে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক বলেন, ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় মূল ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি ৩ দশমিক ৩০ শতক এবং আরেকটি ০.২০ একর। এগুলো অস্থায়ীভাবে ব্যবহার করার জন্য শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়কে হস্তান্তর করা হয়েছে।
“শরণার্থী প্রত্যাবাসনের জন্য যতটুকু প্রস্তুতি দরকার সে বিষয়গুলো আছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যা নির্দেশনা দেবে সেভাবে প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু করবে।”
এ সময় অন্যদের মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাকারিয়া, ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ চৌধুরী ও ইউপি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মিয়ানমারে যুদ্ধ: রাখাইনের যে খবর পাচ্ছেন ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা
মিয়ানমারের গুলি এসে ভেদ করল টেকনাফের বাড়ির দরজা
মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে ফের গোলাগুলি, এপারে আতঙ্ক
সীমান্তে ‘সর্বোচ্চ সতর্ক’ থাকার নির্দেশ বিজিবি মহাপরিচালকের
মিয়ানমার সীমান্তে লাগাতার গোলাগুলি, নাইক্ষ্যংছড়ির ৫ স্কুলে ‘ছুটি’
বিদ্রোহী জোটের হামলায় বহু এলাকা হাতছাড়া, কোণঠাসা মিয়ানমার জান্তা
মিয়ানমারে পেরে উঠছে না জান্তা বাহিনী, সমর্থন হারাচ্ছেন মিন অং হ্লাইং
ভারতে পালাচ্ছে মিয়ানমারের সেনারা, উদ্বিগ্ন মিজোরাম
প্রত্যাবাসন: রাখাইন ঘুরে ‘উন্নতি’ দেখেছে আরআরআরসি, রোহিঙ্গারা হতাশ
জরুরি অবস্থার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা মিয়ানমার জান্তা সরকারের