লন্ডনের মাটিতে দেশি সবজির চাষ

প্রবাসে আসার আগে খুবই চিন্তায় ছিলাম, বাংলাদেশের খাবারের স্বাদ বা একই খাবার পাব কিনা এই দেশে।

শাফিনেওয়াজ শিপু, যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2018, 08:40 AM
Updated : 23 August 2018, 11:13 AM

আত্মীয়-স্বজনরা আগেই বলেছেন, এমন কিছু নাই যে লন্ডনে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের কচু ও লতি থেকে শুরু করে ইলিশ, কৈ, পুঁটি- সব ধরনের মাছ ও সবজি পাওয়া যায়। এরপর এখানে আসার পর দেখতে পেলাম, আসলেই কোনো কিছুরই কিন্তু অভাব নেই এই দেশে।

তবে যে বিয়ষটি আমাকে প্রচণ্ড অবাক করেছে, সেটি হলো এখানকার বেশিরভাগ বাঙালিরা যার যার নিজস্ব বাগানে বাংলাদেশি সবজির বাগান করে ফুলের বাগানের পাশাপাশি। এমনকি এই সবজি স্বাদের দিক দিয়েও বাংলাদেশ থেকে কোনো অংশে কিন্তু কম নয়।

লাউ থেকে শুরু করে টমেটো, বেগুন, লালশাক- সবকিছুরই চাষাবাদ করা হয় এই লন্ডনের মাটিতে। কখনও ভাবতে পারিনি লন্ডনে বসে দেশি শাক-সবজির স্বাদ নিতে পারব!

বাঙালি এলাকাগুলোতে, বিশেষ করে বাঙালি দোকানগুলোতে লালশাক, ডাটাশাক, পুঁইশাক, মুলা, দেশি শিম, লাউ, বেগুন, ঝিঙে, করলা, ঢেঁড়স, আলু, পেঁপে, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়াসহ মোটামুটি সব ধরনের সবজি পাওয়া যায়। এগুলো বেশিরভাগই বাংলাদেশ থেকেই রপ্তানি হয়ে থাকে।

এমনকি যারা প্রবাসেও প্রতি বছর বাসায় সবজির বাগান করে থাকে, তাদের অনেকটুকুই চাহিদা মিটে যায় সবজি চাষ করে- এমনটাই জানালেন অনেকে। যার কারণে ঘরে বসে তারা বাংলাদেশের সবজির স্বাদ পেয়ে যান। বলতে গেলে অনেক বাঙালিদের এখন সবজির বাগান করাটা অনেকটা শখে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন সবজি।

গত সপ্তাহে আমার বান্ধবী লুবনার সবজির বাগান দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে এরপর সিদ্বান্ত নিলাম, এই সবজির বাগানের উপর একটি আর্টিকেল লিখব। যাতে করে বাংলাদেশের মানুষরা জানতে পারে, আমরা প্রবাসে বসে দেশি সবজির স্বাদ নিচ্ছি। বান্ধবীর বাগান ঘুরে দেখতে পেলাম পুইঁশাক, বাঁধাকপি, পালংশাক, কচুশাক, আলু, লাউ, বেগুন, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ ও লেটুস পাতার চাষ হয়েছে সেখানে।

কথা বলে আরও জানতে পারলাম, লন্ডনের বেশিরভাগ বাড়ির সামনে ও পেছনে আকার ও আয়তনের ভিত্তিতে জায়গা রাখা হয়। ফলে সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে ফুলের নাহয় সবজির বাগান করে।

লন্ডনে কিছু কিছু সবজির দাম অনেক হওয়াতে অনেকেই নিজ বাগানে সবজির চাষ করে। হয়তো সব সবজির চাষ করা যায় না, কিন্তু অল্পের মধ্যেও চাহিদা মেটানো যায়। আর বিশেষ করে জুলাই মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হচ্ছে সবজির ফলন দেওয়ার সময়। তবে মাঝে মাঝে সবজির ফলনের ব্যাঘাত ঘটে তাপমাত্রা হঠাৎ কমে গেলে।

আরেকটি কথা, লন্ডনের তাপমাত্রার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। এই রোদ এই বৃষ্টি! যার কারণে, মাঝে মধ্যে সবজির ফলন কমে যায়। এজন্য অনেকেই বলেছেন, সবজির চাষ পুরোপুরি এই দেশে নির্ভর করে আবহাওয়ার উপরে।

এই দেশে সবজির চাষ করে অনেকেই আনন্দ পান বলেই মনে হলো। বলতে গেলে এখন এটা অনেকের শখ। আমার পরিচিত যত মানুষকে দেখলাম, সবারই কমবেশি আগ্রহ সবজির বাগানের প্রতি। তবে ভাবতেই অবাক লাগে, ভিনদেশে বাংলাদেশি সবজির স্বাদ ও আমেজ পাওয়া যাচ্ছে।     

লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী  

ই-মেইল: topu1212@yahoo.com

লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!