প্রশ্নটির উত্তর হয়তো অনেকেরই জানা, কিন্তু কী কারণে বলে ও এর পেছনে কী কারণ, তা এই গ্রানাইট সিটিতে না গেলে কখনোই জানা হতো না। স্কটল্যান্ড এমন একটি দেশ যেখানে প্রত্যেকটি শহরকে কেন্দ্র করে এক একটি ইতিহাস রচিত। এডিনবারাহ থেকে শুরু করে ইনভারনেস পর্যন্ত, প্রত্যেকটি শহর কোনো না কোনো কিছুর জন্য বিখ্যাত। প্রমাণ পেলাম গ্রানাইটের শহর এবারডিনে গিয়ে।
প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলাম এবারডিনের বাড়িঘর ও দালানকোঠা দেখে। কারণ তখন ওই মুহূর্তে মনে হচ্ছিলো, আমি কোনো ধূসর বা সিলভার শহরে আছি, যেখানে সাদা রঙ বা অন্য কোনো রঙের খেলা নেই। আর মনে করার পেছনে শুধু একটাই কারণ, এখনকার প্রত্যেকটি বাড়িঘর ধূসর রঙের গ্রানাইট পাথরের তৈরি। শুধু যে ধূসর রং তা নয়, সাথে সিলভার রঙ-ও মিশ্রিত, যার কারণে এই শহরকে গ্রানাইট শহর বলা হয়।
ততোক্ষণ পর্যন্ত কোনো ধারণা ছিলো না, কেন শহরটির মাঝখানে এতো বড় আকৃতির জাহাজ। তারপর গাইডের মাধ্যমে জানতে পারলাম, এই এবারডিন মূলত স্কটল্যান্ডের বন্দর নগর এবং স্কটল্যান্ডের তৃতীয় জনবহুল শহর। এছাড়াও সেই সাথে এটি ‘এনার্জি ক্যাপিটেল অফ দ্যা সিটি’ নামেও পরিচিত।
যেকোনো সময় এই মিউজিয়ামে দর্শন করা যাবে। সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আর রোববারে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকে পর্যটকদের জন্য। তবে টিকিটের সিস্টেম নেই বলে সব শ্রেণির মানুষের জন্য সুবিধা হয়েছে এই বন্দর সিটির ইতিহাস জানার। এমনকি এর ভেতরে আর্ট গ্যালারি আছে, যার মাধ্যমে পুরো ইতিহাস আপনার চোখের সামনে ফুটে উঠবে।
এছাড়াও আছে শিপ ও ওয়েল রিগ মডেলস, পেইন্টিং, ক্লিপার শিপ অ্যান্ড নর্থ বটস যন্ত্রপাতি, ফিসিং, কর্মাশিয়াল ট্রলার, নর্থ সি ওয়েল কারখানা এবং সাথে আছে মেরিন পরিবেশ।
এই মিউজিয়ামের মাধ্যমে জানা হলো শহরটির সাথে দীর্ঘদিনের সামুদ্রিক সম্পর্কের পুরো ইতিহাস ও ঐতিহ্য, যা দেখে এবারডিন সিটিকে আলাদাভাবে সনাক্ত করা যায়।
এরপর আমরা সবাই মিলে পরিকল্পনা করলাম, যেহেতু একটি নতুন শহরে এসেছি, সুতরাং তাদের স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেওয়া উচিত। তারপর আর দেরি না করে আবার বেরিয়ে পড়লাম। দুপুরের খাবারের পর আবার বেরিয়ে পড়লাম এখানকার সমুদ্রসৈকত উপভোগ করার জন্য।
সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি আমাকে আর্কষণ করেছে, তা হলো এই বিচটির আশেপাশে রয়েছে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, রেস্টুরেন্ট, পাব, সিনেমা হল ও একটি লেজার সেন্টার, যেখানে সুইমিং পুল, আইচ রিংক এবং ইনডোর স্পোর্টস হল আছে। হয়তো এই সমস্ত সুবিধার কারণে পর্যটকরা বার বার ফিরে আসতে চায় এই সমুদ্রসৈকতে।
এমনকি আপনি লোকাল বাসে ডে-টিকেটের মাধ্যমে পুরো শহরকে এক পলকে দেখে ফেলতে পারবেন। টিকেটের মূল্য যে খুব একটা বেশি তা নয়, মাত্র ৪ পাউন্ড। এরপর লোকাল বাসে ভ্রমণের মাধ্যমে দেখা হয়ে গেল আশেপাশের টুরিস্ট স্পট, সাথে এবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ও।
তবে অল্পদিনের ভ্রমণ হওয়াতে অনেক কিছু দেখা থেকে বাদ পড়ে গেলো। তারপরও লন্ডনের ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে পেয়েছি এই গ্রানাইটের শহরে এসে।
লেখক:
প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী
ই-মেইল: topu1212@yahoo.com
লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |