যেহেতু আমাদের দেশে টিউব নেই, সেহেতু টিউব সার্ভিস নিয়ে কথা না বলাই ভালো। সবচেয়ে মজার কথা হলো, যেদিন আমি লন্ডনে আসি, ঠিক পরের দিনই ছিল টিউব হরতাল এবং তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে নাম রেজিস্ট্রেশন করার জন্য। ফলে একটু ভয় কাজ করছিল কীভাবে আমি এত দূরে যাবো বাসে করে?
সত্যি কথা কী, আমি ওইদিন খুবই অবাক হয়েছি তাদের সার্ভিস ও নিয়ম-কানুন দেখে। এক কথায় খুবই চমৎকার! অবাক হয়েছি কেন জানেন? কারণ আমার দেশের বাস সার্ভিস সে তুলনায় ভিন্ন। আশা করি আপনারা আমার কথাটি বুঝতে পেরেছেন।
যাই হোক, এবার আসল কথায় আসি। সেদিন বাসে ওঠার পর কয়েকটি নিয়ম আমার নজর কেড়েছিল, সেগুলো হলো- প্রথমত, বাসের ভাড়া দেওয়া হয় ট্রাভেল কার্ড টার্চ করার মাধ্যমে এবং এই দেশের ট্রাভেল কার্ডের সিস্টেমটি আমাদের দেশের মোবাইল কার্ড টপ আপের মতো।
দ্বিতীয়ত, প্রত্যেকটি মানুষ এখানে লাইন অনুসরণ করে বাসে ওঠে। তৃতীয়ত, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও গর্ভবতীদের জন্য রয়েছে আলাদা সিটের ব্যবস্থা। চতুর্থত, বাচ্চা, প্রতিবন্ধী এবং বয়স্কদের জন্য রয়েছে হুইল-চেয়ার ও ব্যাগ রাখার জায়গা।
ও, আরেকটি কথা। এই দেশে হেলপার ছাড়াই যাত্রীরা ঠিক মতো বাসে উঠছে আর নামছে। এমনকি, “ওই হেলপার, মহিলা উঠাস ক্যান?”, “আপা উঠান যাইবো না, মহিলা সিট নাই”, বা “ওস্তাদ সামনে প্লাস্টিক”- এই ধরনের কথা শুনতে হচ্ছে না আমাদের।
সেদিক দিয়ে যদি চিন্তা করি, তাহলে বলবো, আমাদের দেশে তো কোনো নিয়ম নেই। উল্টো প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করে। স্কুল জীবন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রচুর ভোগান্তির শিকার হয়েছি আমাদের দেশের গণপরিবহনের মাধ্যমে।
আমরা সবাই জানি, মানুষ দিনের পর দিন বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে ঢাকার লাইফস্টাইলের ওপরে। তার মধ্যে গণপরিবহনে নারীদের যাতায়াত দিনকে দিন অনেক দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে। কারণ কাজ শেষ করে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে যখন মানুষ বাসে উঠতে যায়, তখন বলে- মহিলাদের সিট নাই, উঠানো যাবে না।
তাও যদি ঠিক সময়ে অফিস বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া যেত! এটা কেমন নিয়ম যে মহিলা সিট ফাঁকা থাকলে বসতে দেওয়া হবে আর না হলে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে?
আবার অনেক সময় এটাও দেখা যায়, মহিলা সিটে ইচ্ছে করে পুরুষরা বসে থাকে আর যদি সিট ছাড়ার জন্য বলা হয়, তাহলে তো কোনো কথাই নেই! খুবই বাজে আচরণের সম্মুখীন হতে হয়। এর থেকে বরং মহিলা সিট না থাকলেই ভালো হতো, তাহলে হয়তো প্রতিনিয়ত শুনতে হতো না, ‘মহিলা সিট নাই’, ‘মহিলা ওঠানো যাবে না’- আরও কতো কী!
স্বাগত জানাই এই নতুন আইনকে, যাতে করে আর কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা ভোগান্তির শিকার হতে না হয় আমাদের দেশের জনগণকে। শুধু সরকারকে এগিয়ে আসলেই হবে না, বরং সেই সাথে আমাদেরকেও সচেতন থাকতে হবে নিয়ম-নীতি মেনে চলার জন্য।
লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী
ই-মেইল: topu1212@yahoo.com
লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |