অনেক কিছু বলতে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধব। এখানে আসার পর প্রথমদিকে আমি অনেককে দেখেছি ঈদের সময় দেশে যায়। তখন আমি চিন্তা করতাম এতো টাকা খরচ করে মানুষ কেন দেশে গিয়ে ঈদ করে! এখন বুঝতে পারছি মানুষ কেন দেশে গিয়ে ঈদ করে।
যেদিন থেকে এদেশে পা দিয়েছি সেদিন থেকে ভুলে গিয়েছি আরাম আয়েসের জীবনযাপন। যত বার ঈদ ঘনিয়ে আসে ততবার কেন জানি বুক ফেটে কান্না আসে। কেন কান্না আসে তার পেছনে শুধু একটি কারণ, সেটা হলো পরিবার থেকে দূরে থাকা।
তার মধ্যে আরো বেশি মিস করি ঈদের দিনে মায়ের হাতের সুস্বাদু খাবার। আমাদের দেশে রোজা শুরু হওয়ার সাথে সাথে ঈদের শপিং শুরু হয়ে যায়। ঈদের শপিং-এ যে কি আনন্দ তা এদেশে পাইনি। এদেশে সবই আছে, কিন্তু পরিবারের সাথে গিয়ে শপিং করার যে মজা তা এখানে নেই।
এমনকি আমাদের দেশে তো ঈদের আনন্দ তিন-চার দিনেও শেষ হয় না। আর এখানে যতবার ঈদ করেছি ততবার ঈদের দিন সকালে উঠে রেডি হয়েছি কাজে যাওয়ার জন্য বা ক্লাসে যাওয়ার জন্য। কি অদ্ভুত জীবন তাই না! যার কারণে এদেশে আসার পর এখন পর্যন্ত কোনো ঈদ ঠিক মতো পালন করতে পারিনি। প্রত্যেক ঈদে হয় ক্লাস থাকে না হয় কাজ থাকে, না হয় দুটোই একসাথে থাকে।
ওইদিন বাসা থেকে যখন ফোন আসছিলো তখন আম্মা জিজ্ঞেস করেছিলো- কী রান্না করেছিলাম? তখন বাধ্য হয়ে মিথ্যা কথা বলেছিলাম। ‘আম্মা, অনেক কিছু রান্না করেছি, টেনশন করবেন না।’ সেই সাথে এটাও বলেছিলাম যে, খুব মজা করছি এখানে। হায়রে কপাল! এমন একটা দিনেও আমাকে মিথ্যা কথা বলতে হলো!
কী করবো বলেন, না বলে তো উপায় নেই। তা না হলে তো মন খারাপ করবে। হুম, ইচ্ছে করলে ক্লাসটা মিস দিতে পারতাম ওইদিন, কারণ এদেশে ধর্মীয় উৎসবগুলোতে ক্লাস মিস দিলে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু লেকচারটা মিস হয়ে যাবে বলে ক্লাস আর বাদ দিলাম না। আর যদি কাজ মিস দিতাম তাহলে অনেকগুলো টাকা উপার্জন করা হাতছাড়া হয়ে যেতো। কারণ একটা টাকা উপার্জন করলেও আমাদের জন্য অনেক।
তবে এখন আর খারাপ লাগে না। বলতে গেলে এ ধরনের পরিবেশের সাথে নিজেকে অ্যাডজাস্ট করে ফেলেছি। শুধু একটি কথা বলবো তাদের উদ্দেশ্যে যারা এখনো পরিবারের সাথে আছেন, দয়া করে পরিবার থেকে দূরে থাকবেন না। পরিবার যে কি জিনিস তা এখন আমি বুঝতে পারছি।
হয়তো আমরা মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে যাই বাবা-মা ও ভাই-বোনের উপর। কিন্তু তারপরও বুঝতে হবে এরাই হচ্ছে আমাদের পৃথিবী। এদের ছাড়া জীবনটা পুরো অচল। যতই ঝগড়া ও মনমালিন্য হোক না কেন, তারপরও বলবো পরিবার সবার আগে এবং পরিবারকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী
ই-মেইল: topu1212@yahoo.com
লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |