অবশেষে সেই স্বপ্নটিই সত্যি হলো একদিন। কিন্তু আসার আগে শুধু একটি ভয় কাজ করছিল, কীভাবে নতুন পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে চলবো। তার মধ্যে কিছুটা দুশ্চিন্তা কমে গিয়েছিল, কারণ আমার আগে আমার ছোট বোন এখানে পড়তে এসেছিল।
বিলাতে আসার পর দেখলাম, এই দেশের জীবনযাপন ও সংস্কৃতি একেবারেই অন্যরকম। এক কথায় জীবনযাপন, জনসংখ্যা ও সংস্কৃতি-এই তিনটি জিনিস নিয়েই যুক্তরাজ্য হচ্ছে অসাধারণ একটি দেশ। এতো বৈচিত্র্য দেখা যায় সব কিছুতেই, আমার মনে হয় না পৃথিবীর আর কোনো দেশে এমন আছে।
আসার পর থেকে আমার ছোট বোন বার বার বলছিল, আমাকে নিয়ে এখানকার একটি পুরাতন মার্কেটে নিয়ে যাবে। তখন আমি বললাম, এটা কী ধরনের মার্কেট? উত্তরে সে বললো, এটা তোর জন্য সারপ্রাইজ, আগে চল।
যাই হোক, তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম, যাব। কারণ এই দেশে আসার পর থেকেই সব কিছুতেই আমি অবাক হচ্ছি। তারপর ছুটি ম্যানেজ করে আমরা দুই বোন সেদিন ঘুরতে বের হলাম। বলতে গেলে লন্ডনের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জিনিস আমার কাছে অপরিচিত ছিল।
তাছাড়া যতদূর জানতে পারলাম, এই ফুড মার্কেট হচ্ছে লন্ডনের সবচেয়ে বড় ও পুরাতন মার্কেট। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলাম এটা শুনে যে, এটা ১ হাজার বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তাহলে চিন্তা করুন, কতো পুরাতন এই ফুড মার্কেটটি!
একমাত্র রবিবার বাদে সপ্তাহে ৬ দিনই এই মার্কেট খোলা থাকে। তবে বেশিরভাগ সময়ই সকাল ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। শুধুমাত্র শনিবার এটি সকাল ৮টা থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আসার সময় সময়সূচি নিয়ে এসেছিলাম, যাতে করে পরবর্তীতে আবার এইখানে আসতে পারি।
শত শত মানুষের সমাগম ছিল ওইদিন। যতদূর মনে আছে, তার মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই ছিল ট্যুরিস্ট বা দর্শনার্থী। আমি অবাক হয়েছিলাম, কী নেই এই মার্কেটে!সবজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের ফলমূল, চিজ, পাউরুটি, কফি, কেক ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের খাদ্যদ্রব্য আছে।
এতো বড় বড় চিজ আমি আমার জীবনে দেখিনি কখনও। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত ছিলাম ওখানে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিস্মিত নয়নে সব কিছু উপভোগ করেছি। এমনকি বিভিন্ন দেশের চিজও পাওয়া যায় ওখানে, যেমন-ব্রিটিশ, ইউরোপিয়ান ও আমেরিকান। তবে এই মার্কেটটি ফিস, মিট, ভেজিটেবলস, পাউরুটি, কেক এবং চিজের জন্য বিখ্যাত। সেই সাথে পুরো মার্কেট জুড়ে ছিল বিভিন্ন খাবারের গন্ধ।
আমার বোন আগে থেকেই জানতো, আমি দু’টো জিনিস খুব বেশি পছন্দ করি। তার মধ্যে চিজ হচ্ছে অন্যতম। হয়তো এই কারণে সে আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল। সত্যিকার অর্থে আমি শতভাগ সারপ্রাইজড হয়েছি! এখন আমাদের দেশেও অনেক ধরনের চিজ পাওয়া। তবে অতি চড়া মূল্যে সেগুলো বিক্রি করা হয় বলে সব শ্রেণির মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব হয় না।
এবার আসা যাক কফি প্রসঙ্গে। আমি বরাবরই চা থেকে কফি বেশি পছন্দ করি। বাংলাদেশে থাকতেও কফি খাওয়া হতো, কিন্তু বাইরে খুব কম খেতাম। কারণ বেশি দাম। কিন্তু এখানে কফির দাম খুব একটা বেশি নয়। তাছাড়া কফির এতো প্রকারভেদ, যা কিনা আমাকে খুবই আকৃষ্ট করেছে। যেমন- এসপ্রেসো, ক্যাপেচিনো, আমেরিকানো, ল্যাটে, মকা, ম্যাকিয়াতো, ফ্রাপেচিনো ইত্যাদি বিভিন্ন রকমভেদ। এমনকী বিভিন্ন ধরনের ফ্লেভার বা সিরাপও পাওয়া যায়, যাতে করে খুব একটা বেশি তিতো অনুভব না হয়।
কফির দামও খুব বেশি নয়। ১ পাউন্ড থেকে শুরু করে ৩ পাউন্ড পর্যন্ত প্রত্যেকটি কফির মূল্য। তবে আপনি যদি সিরাপ নিতে চান, তাহলে ৫০ পয়সা বেশি দিতে হবে।
একদিক দিয়ে ভালোই হলো আমার জন্য। যখনই সময় পাব, চলে যাবো এই ফুড মার্কেটে। স্বল্প মূল্যে চিজ কিনে নিয়ে আসতে পারব। তবে এর মতো এতো পুরাতন ফুড মার্কেট লন্ডনে কোথাও নেই। আর তাই প্রতিদিন অসংখ্য ট্যুরিস্ট এটা দেখতে আসে। এভাবেই ইংরেজরা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের আর্কষণ করে চলেছে।
লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী
ছবি কৃতজ্ঞতা: শারমিন জান্নাত ভুট্টো
ই-মেইল: topu1212@yahoo.com
লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |