আসলে, এই 'মেইড ইন বাংলাদেশ' লেখাটি প্রথম যেদিন দেখেছি, সেদিন চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারিনি। আমার মনে হয় অনেকে হয়তো বুঝতে পেরেছেন, কী প্রসঙ্গে এই কথাটি বলছি।
যাই হোক, এবার আর একটু বিস্তারিতভাবেই বলি। যেদিন আমি ইংল্যান্ডে প্রথম পা ফেললাম, তার পরেরদিন আমার ছোট বোন আমাকে কিছু টাকা দিলো শপিং করতে। কারণ এইখানে আসার আগে আমার হাতে মাত্র দুই দিন সময় ছিল, যার কারণে শপিং করতে পারিনি।
আমরা যে জায়গায় আগে থাকতাম, তার আশেপাশে ছিল বিশাল এক শপিং সেন্টার, যার নাম 'ওয়েস্টফিল্ড'। তবে এই ওয়েস্টফিল্ডে ঢোকার আগে খুব একটা বেশি অবাক হয়নি, কারণ এখন আমাদের দেশেও অনেক শপিং সেন্টার আছে যা কিনা চোখে পড়ার মতো। খালি একটি জিনিসের অভাব আমরা সবসময় বোধ করতাম, সেটা হলো ব্রান্ড পণ্য।
যাহোক, আসল কথায় আসি এখন। যেহেতু সেদিন কাপড়-চোপড় কিনতে এসেছিলাম, সেহেতু অন্য কোনো শপে খুব একটা বেশি ঢুকিনি, মানে কসমেটিকস বা জুতো শপে। পুরো শপিং সেন্টার ঘুরে যত দূর মনে হলো, এই শপিং সেন্টারে তিনশ'র বেশি ব্রান্ডের পণ্য আছে। যেহেতু আমার বাজেট ছিল কম, সে কারণে খুব একটা বেশি দামী শপে ঢুকিনি।
প্রথমেই ঢুকেছি 'প্রাইমার্ক ও নিউলুক' নামক একটি দোকানে, যেখানে কম মূল্যে অনেক জিনিস পাওয়া যায়। তবে একেকটি পোশাকের মূল্য ব্রান্ড অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়। সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি আমাকে অবাক করেছে, তা হলো- এখানকার বেশিরভাগ পণ্য বাংলাদেশে তৈরি। টপস, জিনস্ থেকে শুরু করে গ্রীষ্মকালীন বলুন আর শীতকালীনই বলুন, বেশিরভাগ পোশাক পণ্যে লেখা 'মেইড ইন বাংলাদেশ'।
সেদিন আসলে এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছিলো নিজের দেশের নাম দেখে। আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। চোখের পানি আটকে রাখতে পারছিলাম না শুধুমাত্র নিজের দেশের নাম দেখে। আর আমরা বাঙালিরা নিজের দেশের পণ্যকে কখনই মূল্য দেই না।
আমি নিজেও তো বাংলাদেশে থাকতে কখনোই বাংলাদেশি পণ্য কিনতে চাইতাম না, বিশেষ করে পোশাকের দিক দিয়ে। বরাবরই একটা আর্কষণ কাজ করতো বিদেশি পণ্যের প্রতি, যেমন- ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাক। এমনকি টপস, প্যান্ট ও শীতকালীন পণ্য কেনার ক্ষেত্রেও বিদেশি পণ্যকে মূল্য দিয়েছি। আর এখন অন্য দেশে এসে নিজের দেশের পণ্য কেনার জন্য অস্থির হয়ে যাচ্ছি। হায়রে কপাল! ওই যে বলে না- 'দাঁত থাকতে দাঁতের মযার্দা নেই'। ঠিক সেই রকমই হয়েছে আমাদের ক্ষেত্রে।
তবে যেসব গার্মেন্টস কর্মীদের দ্বারা আজকে আমাদের পোশাক শিল্প উন্নত হয়েছে বা যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এতো বড় পরিচিতি, তাদেরকে আমরা সবাই সেলুট জানাই এবং তাদের কারণেই আজকে আমরা গর্ব করে বলতে পারি- 'মেইড ইন বাংলাদেশ!'
লেখক:
প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী
ছবি কৃতজ্ঞতা: মো. সাইফ
ই-মেইল: topu1212@yahoo.com
লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |