তবে এবার পরিকল্পনা করেছিলাম অ্যাডিনবরায় নয়,অন্য আরেকটি শহরে যাওয়া নিয়ে। সেজন্য দেরি না করে পরিকল্পনা অনুযায়ী আবার বেরিয়ে পড়লাম ইনভারনেসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তবে ইনভারনেসে যাওয়ার আগে প্রথমে আমাদেরকে যেতে হবে অ্যাডিনবরায়।
কিন্তু এবার কিছু টাকা বাঁচানোর জন্য বাসে করে গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। প্রায় ৮ ঘণ্টা লেগেছিলো অ্যাডিনবরার বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছাতে। এরপর কোনোরকম খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে পড়লাম আবার অ্যাডিনবরা শহর দেখার জন্য এবং সেই সাথে খুঁজে বের করলাম একটা এজেন্সি,যারা হাইল্যান্ডস ও লকনেসে যাওয়ার আয়োজন করে।
আমরা সবাই জানি,স্কটল্যান্ড হচ্ছে পাহাড় ও লেকের পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের লীলাভূমি,যা কিনা প্রতিটি মুহূর্তে আপনাকে আকৃষ্ট করবে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। তবে অনেকের হয়তো ধারণা নেই, হাইল্যান্ডস মানে কী? কীসের টানে হাজার হাজার মানুষ সেখানে ছুটে যায়?
হাইল্যান্ডস হচ্ছে আঁকাবাঁকা ও উঁচু-নিচু রাস্তাসহ এক বিস্তীর্ণ বনভূমি ও পাহাড়ি এলাকা, যেখানে আপনি দেখতে পাবেন ডানে ও বায়ে শুধু পাহাড় ও পাহাড়। মাঝখানে আপনি একা এবং তখন মনে হবে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাচ্ছেন। একসাথে হাইল্যান্ডস ও লকনেস উপভোগ করতে হলে টিকেটের মূল্য- প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৪০ পাউন্ড এবং শিশুদের জন্য ২৫ পাউন্ড।
এর পরের দিন শুরু হলো আমাদের যাত্রা হাইল্যান্ডস ও লক উপভোগ করার উদ্দেশ্যে। ইনভারনেস নামে একটি শহর আছে,যা কিনা হাইল্যান্ডের জন্য বিখ্যাত। যখনই হাইল্যান্ড এলাকাটিতে ঢুকলাম, এক কথায় শরীর শিহরিত হয়ে উঠেছিলো আশপাশের পাহাড় ও প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে।
রাস্তাগুলো সরু হওয়ার কারণে একটু ভয় কাজ করছিলো,মনে হচ্ছিলো এই বুঝি পাহাড়ের নিচে পড়ে যাবো। তারপরও বেশি আনন্দ ও আগ্রহের কারণে ভয়টা প্রায় কেটে গিয়েছিলো ওই মুহূর্তে। আসলে বোঝা মুশকিল পাহাড় ও আকাশের মধ্যে দূরত্বটা, কারণ বেশিরভাগ পাহাড়গুলোর উচ্চতা অনেক বেশি।
এরপর আমাদের ড্রাইভার গ্লেনকো নামক জায়গায় ১৫ মিনিটের জন্য অবস্থান করেছিলো, কারণ এই গ্লেনকো জায়গাটি স্কটল্যান্ডের সবচেয়ে পুরাতন ও মনোমুগ্ধকর স্থান হিসেবে পরিচিত।
এতো চমৎকার ও মনোরম দৃশ্য দেখে এতটাই অভিভূত হয়েছিলাম যে, ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না এবং প্রত্যেকটি পাহাড় মিশে গিয়েছে আকাশে। প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থী আসে শুধু এই হাইল্যান্ড দেখার জন্য,যার কারণে এই ইনভারনেস সিটি স্কটিশ হাইল্যান্ডস নামে পরিচিত এবং ভাষ্যকরের মতে, প্রতি বছর অনেক মুভির শুটিংও হয় এই জায়গায়।
তবে এটা সত্যি যে,সারাজীবন আমরা সিনেমায় দেখেছি এই হাইল্যান্ডগুলো,কিন্তু যখন নিজের চোখের সামনে দেখলাম,বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ওই মুহূর্তে শুধু মনে হচ্ছিলো স্বপ্নের ঘোরেই আছি।
এরপর আমরা গিয়েছি হাইল্যান্ডের কাছাকাছি লকনেস দেখতে। আগেই বলে নিচ্ছি লকনেস হচ্ছে ইংল্যান্ডের স্কটিশ উচ্চভূমির একটি লেকের নাম এবং এই লকনেসের পেছনে আছে বিশাল ইতিহাস।
অনেকের মতে, এ লেকে রয়েছে নাকি দানব এবং এ লকনেস দানব হলো এমন এক ধরনের প্রাণী যার অস্তিত্ত্ব আছে এখনো। কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই। এটি দেখতে অনেকটা ড্রাগন আকৃতির এবং এমনকি এর পাখাও আছে। তবে দর্শনার্থী বাসের ড্রাইভারের ভাষ্য মতে,এটি প্রথম দেখা গিয়েছিলো ১৯৩৩ সালে এবং তবে এটি ‘লকনেস মনস্টার’ নামেও পরিচিত।
এমনকি দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে,কেউ যদি এ প্রাণীটিকে ক্যামেরায় বন্দি করতে পারে,তাহলে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। তবে মজার কথা হলো,এ পুরস্কারের কথা শোনার সাথে সাথে সবাই অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম লকনেস দানব উপভোগ করার জন্য। কিন্তু সেই আশা আর পূর্ণ হলো না। পূর্ণ হয়নি তো কি হয়েছে? কিন্তু তার মধ্যেও লকনেসের সৌন্দর্য আমাদেরকে চরম মুগ্ধ করেছিলো। এভাবে পুরো দিনটিই আনন্দ ও উদ্দীপনার সাথে কাটিয়ে দিলাম হাইল্যান্ড ও লকনেসে দেখে।
যাক, অবশেষে স্কটল্যান্ডের ক্যাসেল থেকে শুরু করে পাহাড়,পর্বত ও সমুদ্র উপভোগে কোনো কিছু মিস করিনি। আসলে কি, আমরা শিক্ষার্থীরা এই দেশে পড়াশোনা ও চাকরি নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে,তখন মনে হয় কিছুটা স্বস্তির জন্য হলেও লন্ডন শহর থেকে অনেক দূরে চলে যাওয়া উচিত। মানে মানসিক প্রশান্তির জন্য প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া উচিত,যাতে করে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসে একঘেয়েমি জীবনে।
লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী