জ্বী, আমি ইংল্যান্ডের কথাই বলছি। আসলেই তো! এইখানে আসার পর যা দেখছি, তাতেই আমি মুগ্ধ হচ্ছি! এরপর পরিকল্পনা করলাম, যতদিন এই দেশে আছি, আস্তে আস্তে চেষ্টা করবো পুরো ইংল্যান্ড দেশটিকে উপভোগ করার।
এই পরিকল্পনাটা যখন এখনকার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে শেয়ার করলাম, তখন তারা উপদেশ দিলো- এই দেশটি যদি পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে চাও, তাহলে সবার আগে স্কটল্যান্ডে যাও। শুনে প্রথমেই মনে হয়েছিল, কী আছে এমন সেখানে?
অনেকেই হয়তো এখনও মনে করে, স্কটল্যান্ড একটি ভিন্ন দেশ। কিন্তু আসলে তা নয়। এটি এখনও ইংল্যান্ডে অর্ন্তভুক্ত। ফলে স্কটল্যান্ডকে আলাদা দেশ হিসেবে আমরা বলতে পারি না। হতে পারে স্কটিশরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভিন্ন ইংরেজদের তুলনায়। তারপরও কোনো কিছু চিন্তা না করে ছুটি পাওয়ার সাথে সাথে আর দেরি করিনি।
প্রথমেই একটু মন খারাপ হয়েছিলো, কীভাবে এতো দূরে ভ্রমণ করবো, এই চিন্তা করে। কারণ যদি ট্রেনে যাই, তাহলে লন্ডন থেকে ৪ ঘণ্টা আর বাসে গেলে ৮ ঘণ্টা লাগে। কিন্তু প্লেনে গেলে মাত্র দেড় ঘণ্টা লাগে। যেহেতু প্লেনের টিকিট পাইনি, সেজন্য একটু মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
যখন এডিনবরা বা এডিনবার্গে পৌঁছালাম, তখন কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম আশেপাশের দৃশ্য দেখে। বুঝতে পারছিলাম না, কী রকম প্রতিক্রিয়া করবো? ঠিক যেমন সিনেমাতে দেখি, সেই রকমই। ওই মুহূর্তে মনে হচ্ছিলো, আমি আসলেই স্বপ্ন দেখছি!
স্কটল্যান্ড মূলত গ্রেট ব্রিটেনের উত্তর-তৃতীয়াংশে অবস্থিত এবং এই এডিনবরা হচ্ছে স্কটল্যান্ডের রাজধানী। এটি ঠিক, ইংল্যান্ড থেকে এখনও দেশটি আলাদা হয়নি, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্কটল্যান্ড, যেমন- বিচার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সংসদ ভবন, নিজস্ব গির্জা, শিক্ষা ব্যবস্থা এমনকি নিজস্ব টাকাও ধরে রেখেছে।
প্রথমেই যে জিনিসটি আমাকে খুবই অবাক করেছে, তা হলো স্কটল্যান্ডের সংসদ ভবনের নিয়মগুলো অনেকগুলো ভাষায় বর্ণনা করা। যাতে করে বিভিন্ন দেশের ট্যুরিস্টরা বুঝতে পারে, তার মধ্যে বাংলা ভাষাও রয়েছে। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি- নিজের ভাষা, মায়ের ভাষা দেখা!
এরপর স্কটিশ পার্লামেন্টটা ঘুরে ঘুরে দেখেছি। পুরো এডিনবরা বা এডিনবার্গ হচ্ছে পুরাতন প্রাসাদ ও বিল্ডিং দিয়ে আবৃত, এমনকি প্রত্যেকটি অলি-গলি পর্যন্ত পুরাতন বিল্ডিং দিয়ে ঢাকা। বুঝতে বাকি নেই, এগুলোই স্কটিশদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
ইচ্ছে করলে তারা এই সমস্ত পুরাতনগুলো ভেঙ্গে নতুন বিল্ডিং তৈরি করতে পারতো, তাই না? কিন্তু তারা তা করেনি, কারণ তারা খুব ভাল করে জানে, এই পুরাতন বিল্ডিংগুলো হচ্ছে তাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
তাছাড়া প্রথমে শহরটিকে দেখলেই মনে হবে, পুরো শহরটি যেন পাহাড়ের গায়ে লেগে আছে। মনে হচ্ছে বিল্ডিংগুলো আকাশের সাথে মিশে আছে। তবে লন্ডন শহরের মতো এতো ব্যস্ততা নেই এখানে, নেই কোনো কোলাহল। আছে শুধু সারা শহর জুড়ে ব্যাগ-পাইপারের আওয়াজ, যা কিনা আপনাকে বা আমাকে প্রতি মুহূর্তে মুগ্ধ করবে।
এই ব্যাগ-পাইপার মিউজিক হচ্ছে স্কটিশদের ঐতিহ্যগত মিউজিক। এছাড়াও অনেক জায়গায় দেখেছি, ইউনিকর্নের ছবি বা চিহ্ন। তারপর জানতে পারলাম, এই ইউনিকর্ন হচ্ছে স্কটল্যান্ডের জাতীয় পশু।
এর পরদিন বের হলাম এডিনবার্গ দুর্গ বা এডিনবার্গ ক্যাসেল দেখার জন্য, যেটি কিনা স্কটল্যান্ডের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান। এটি মৃত আগ্নেয়গিরির উপরে অবস্থিত। এই দু্র্গটির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মোনস বেগ, ওয়ান ওক্লক বন্দুক, ক্রাউন জুয়েলার্স, সেন্ট মার্গারেটস চ্যাপেল, গ্রেট হল ও স্কটিশ ন্যাশনাল ওয়ার মিউজিয়াম ইত্যাদি।
তবে দুর্গটির ভেতরে ঢোকার পর খালি মনে হচ্ছিলো, আমি ওই আমলেই আছি। আরেকটি কথা বলে নেই, এখানে টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকতে হয় এবং টিকেটের মূল্য নির্ভর করে বয়সের ওপর, যেমন- ১৬-৫৯ বছরের মধ্যবর্তী প্রাপ্তবয়স্কদের প্রবেশের টিকেট মূল্য হলো ১৬ পাউন্ড আর ৫-১৫ বছরের শিশুদের টিকেটের মূল্য হলো ৯.৬০ পাউন্ড।
অবশেষে এই ট্যুরের মাধ্যমে বুঝলাম, কেন মানুষ বলে- ইংল্যান্ড দেশকে জানার আগে প্রথমে স্কটল্যান্ডে যাও। তবে যদি কখনও আবার সময় পাই, তাহলে আবার ছুটে যাবো স্কটল্যান্ডে।
এবার তো গিয়েছি এডিনবার্গে, কিন্তু পরবর্তীতে যাবো গ্লাসগোতে বা এবারডিনে। আরও অনেক কিছু দেখার ও জানার বাকি আছে। কারণ পুরো স্কটল্যান্ডে জুড়ে রয়েছে ইতিহাস আর ইতিহাস!
লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী
ই-মেইল: topu1212@yahoo.com
লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |