লন্ডনের চিঠি: ভেনিসের স্বাদ ক্যান্টারবেরিতে

আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিলো ভেনিস শহর দেখার। কিন্তু সময় ও ব্যস্ততার কারণে যেতে পারছি না।

শাফিনেওয়াজ শিপু, যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2018, 06:17 AM
Updated : 15 July 2018, 06:33 AM

সবারই জানা লন্ডনের যান্ত্রিক জীবনযাপন নিয়ে, তাই নতুন করে কিছু বলার নেই। যাই হোক, এবার আসি আসল কথায়। আমাকে অনেকেই বলেছেন, ভেনিস শহরের স্বাদ নিতে হলে নাকি কেন্টের ক্যান্টারবেরিতে যাওয়া উচিত। কথাটা যে সত্য, তা আসার পর বুঝতে পারলাম।

আমি যেন আসলে ভেনিস শহরে আছি। কারণ, পুরো ক্যান্টারবেরি শহরটি নদী, পুরাতন ও ঐতিহাসিক দালানকোঠা দিয়ে ঘেরা। ধর্মীয়, সাহিত্য ও রোমান কর্তৃক নির্মিত প্রাচীন স্থাপনার কারণেই আজকে ক্যান্টারবেরি শহরটি একটি বিখ্যাত পর্যটন শহরে পরিণত হয়েছে।

এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী আসে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে। খুব ইচ্ছে ছিলো সেদিন ক্যান্টারবেরি ক্যাথেড্রাল দেখার, কিন্তু মেরামতের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই বন্ধ আছে।

এই ক্যাথেড্রালটি স্থাপিত হয় ৫৯৭ খ্রিস্টাব্দে এই শহরে এবং এটি যুক্তরাজ্যের প্রধান চার্চ। এমনকি এই শহর তীর্থযাত্রীর শহর নামেও পরিচিত। যেহেতু আমরা ক্যাথেড্রালটিতে ঢুকতে পারিনি, তখন মুহূর্তের মধ্যে পরিকল্পনা করলাম নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে পুরো শহরটি উপভোগ করব এবং এর ইতিহাস জানবো।

টিকেটের দাম খুব একটা বেশি ছিলো না। মধ্য বয়সীদের জন্য সাড়ে ১০ পাউন্ড, বয়স্কদের জন্য সাড়ে ৯ পাউন্ড। আর ১৭ বছরের নীচে যারা, তাদের জন্য সাড়ে ৬ পাউন্ড এবং ফ্যামিলি স্পেশালের জন্য ২৭ পাউন্ড। তবে যারা শিক্ষার্থী, তাদের জন্য ডিসকাউন্টেরও ব্যবস্থা আছে। এর সময়সূচি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।  

ওই মুহূর্তে অনেক আগ্রহ ও অস্থিরতা কাজ করছিলো নৌকা ভ্রমণের জন্য। নৌকাগুলো যেমন দেখতে সুন্দর ছিলো, তার চেয়ে বেশি অদ্ভুত, আর্কষণীয় ও মনোমুগ্ধকর ছিলো আশেপাশের পরিবেশ। নৌকায় ওঠার পর পুরো ৪০ মিনিট ধরে মনে হলো আমি আর আমার রাজ্যে নেই, স্বপ্নের রাজ্যে আছি।

কেন্ট ও ক্যান্টারবেরির অনেক ইতিহাস জানতে পারলাম বোটম্যানের মাধ্যমে। কারণ, পুরো নৌকা ভ্রমণটিতে বোটম্যান গল্পের আকারে বর্ণনা করেছিলো কেন্টের রোমান ইতিহাস। তখনই জানতে পেলাম, রোমান কর্তৃক নির্মিত এই শহর ঘেরা বৈচিত্র্যময় দেয়াল, মধ্যযুগে নির্মিত সুদৃশ্য ও ঐতিহাসিক চার্চ ও বিভিন্ন মনুমেন্টের কথা। এজন্য এই শহর ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

তবে ইংরেজি সাহিত্যের জনক জিওফ্রে চসারের অমর সৃষ্টি ‘ক্যান্টারবেরি টেলস’ এই শহরকে আরও স্মৃতিময় করে রেখেছে সবার মাঝে। এছাড়া আমরা আরও জানতে পেলাম, ২০১৫ সালে প্রায় এক মিলিয়ন পর্যটক এই শহরটিকে পরিদর্শন করেছিলেন। একদিক দিয়ে ভালোই হলো, এই নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে এই শহরটির পুরো ইতিহাস আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠলো।

নৌকা ভ্রমণের পর ওইদিনই আমরা পরিকল্পনা করলাম, হারনি-বে-বিচ বেড়াতে যাব। যেহেতু একদিনের ভ্রমণ ছিলো, সেজন্য যতটুকু উপভোগ করা যায়। তবে খুব একটা বেশি দূরে নয়, সিটি সেন্টার থেকে হারনি-বে-বিচ।

এই বিচটি মূলত বালি ও নুড়ি (স্যান্ড ও সিঙগেল) দিয়ে আবৃত এবং সব ধরনের সুবিধা রয়েছে সেখানে। রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে বাচ্চাদের পার্ক, হোটেল ও কার পার্কিং-এর ব্যবস্থা রয়েছে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত ছিলাম, ততক্ষণ পর্যন্ত আনন্দের সাথে উপভোগ করেছি হারনি-বে’র সৌন্দর্য। ভুলে গিয়েছিলাম লন্ডনের যান্ত্রিক জীবন।

একদিনের ভ্রমণ ছিলো বলে খুব একটা ভালো করে দেখা হয়নি পুরো শহরটিকে। তবে আবারও আসতে চাই এই শহরের মাঝে, যেখানে অনেক কিছু জানারও আছে, দেখারও আছে।     

লেখক: প্রবাসী শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী  

ই-মেইল: topu1212@yahoo.com

লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!