বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদকের জামিন বহাল

তৌফিক ইমরোজ খালিদীর পাসপোর্ট জব্দের আবেদনও করেছিল দুদক, আদালত তাতে সাড়া দেয়নি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2022, 06:13 AM
Updated : 1 Dec 2022, 06:13 AM

দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে জজ আদালতের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছে হাই কোর্ট।

জামিন বাতিলে দুদকের করা আবেদনে এক বছর আগে হাই কোর্ট যে রুল দিয়েছিল, শুনানি শেষে তার নিষ্পত্তি করে বৃহস্পতিবার এ রায় দিয়েছে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ।

এ রুলের শুনানিতে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর পাসপোর্ট জব্দের আবেদন করেছিল দুদক, আদালত তাতে সাড়া দেয়নি। হাই কোর্ট বলেছে, বিদেশে যেতে হলে তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে আদালতের অনুমতি নিতে হবে।

‘অসাধু উপায়ে’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে ২০২০ সালের ৩০ জুলাই এই মামলা করে দুদক। তৌফিক ইমরোজ খালিদী বরাবরই সে অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

তিনি বলে আসছেন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন ‘খুবই শক্তিশালী একটি মহলকে নাখোশ’ করেছে। সে কারণে তাকে ‘হেয় প্রতিপন্ন’ করার জন্য এই ‘সাজানো মামলা’ করানো হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদকের জামিন আটকাতে দফায় দফায় চেষ্টা করে আসছে দুদক, যাদের কাজ দুর্নীতি দমন করা। সেই আবেদনে সাড়া দেওয়ার কোনো যুক্তি আদালত দেখেনি। 

২০১৯ সালের শেষ ভাগে, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ পাওয়ার খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সংবাদ প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করার পর তড়িঘড়ি এ বিষয়ে ‘অনুসন্ধান’ শুরুর ঘোষণা দেয় দুদক। একই সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি মহলের ‘মিথ্যা প্রচার’ শুরু হয়।

বিনিয়োগের ওই টাকাই ‘অবৈধ প্রক্রিয়ায়’ অর্জন করা হয়েছে অভিযোগ করে সাড়ে আট মাস পর এ মামলা করে দুদক। এরপর ২৮ মাস পেরিয়ে গেলেও সেই তদন্ত শেষ করতে পারেনি দুদক। 

অন্যদিকে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর ভাষায়, “ওই এফআইআর  ভুলে ভরা। তথ্যের দিক থেকে ভুলে ভরা। একটি বর্ণ সত্যি কথা নাই সেখানে।”

অনুসন্ধান, তলব এবং মামলার এজাহার- সবগুলো পর্যায়ে কমিশনের লিখিত ভাষা যেভাবে বার বার বদলে গেছে, তাকে এর আগে ‘দুদকের গোল পোস্ট বদলের নমুনা’ হিসেবে দেখিয়েছিলেন খালিদীর একজন আইনজীবী।

শুনানিতে যা হল

দুদকের এক আবেদনে ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর হাই কোর্ট তৌফিক ইমরোজ খালিদীর জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেছিল। তাকে জজ আদালতের দেওয়া জামিন কেন বাতিল করা হবে না– তা জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে।

দীর্ঘদিন পর গত ২৪ নভেম্বর বিষয়টি হাই কোর্টে শুনানির জন্য আসে। রুলের শুনানিতে দুদকের প্রধান যুক্তি ছিল, নিম্ন আদালত ‘অন মেরিট’ শুনানি করে জামিন বিবেচনা করা উচিত ছিল, কিন্তু তা ‘হয়নি’, সেজন্য জামিন ‘বাতিল হওয়া উচিত’।

জামিন আটকানো সম্ভব হবে না বুঝতে পেরে দুদকের আইনজীবী খালিদীর পাসপোর্ট জব্দের আর্জি জানান। হাই কোর্ট তখন রুলের রায়ের জন্য ১ ডিসেম্বর তারিখ রেখে সেই সময় পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে।

আদালতের আদেশে সেদিন বলা হয়, ওই রায় বা নতুন কোনো নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বিদেশে যেতে হলে তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে আদালতের অনুমতি নিতে হবে।

বৃহস্পতিবার সকালে এ মামলার ক্রম আসার পর দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ডায়াসে দাঁড়ান। আদালতের জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি বলেন, এটা সাংবাদিক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর জামিন সংক্রান্ত বিষয়। তিনি একইসাথে খালিদীর পাসপোর্ট জব্দে দুদকের আবেদনের বিষয়টিও বলেন।

তৌফিক ইমরোজ খালিদীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, “আমরা জামিনের সুবিধার কোনো অপব্যবহার করি নাই। তাই জামিন বাতিল কেন হবে?

“যতদিন আদালতে হাজির হওয়ার কথা ছিল। উনি নিয়মিত হাজির হয়েছেন। উনি আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। উনি একজন ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী। সাংবাদিকতায় উনার নামডাক এবং বহুমাত্রিক অবদান রয়েছে।”

পাসপোর্ট জব্দের আবেদনের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় নাই, যাতে আমরা ট্রায়াল ফেইস করব না বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তাই পাসপোর্ট জব্দ করার প্রয়োজন নেই।”

শুনানিতে খালিদীর অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক বলেন, “তিনি নিয়মিত আদালতে হাজির হয়েছেন। সবকিছু মেনেছেন। এরপরও এ রকম একজন সাংবাদিকের পাসপোর্ট জব্দ করা হলে সমাজে একটা নেতিবাচক বার্তা যাবে।”

পরে আদালত গত সপ্তাহে দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন আদেশটি বজায় রেখে রায় দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। সেখানে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছিল, আদালতের অনুমতি ছাড়া তিনি যেন দেশ না ছাড়েন।

এ বিষয়ে রায়ে ‌‘আদালতের অনুমতির’ বিষয়টি না রেখে ভাষাগত পরিবর্তন করে দিতে বিচারপতিদের কাছে অনুরোধ করেন ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক।

তিনি বলেন, “আদালতকে জানিয়ে তিনি দেশত্যাগ করবেন। আবার ফিরে এসে আদালতকে জানাবেন। এমনভাবে রাখা যেতে পারে।”

এক পর্যায়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতের অনুমতির বিষয়টি অন্তত রাখতে অনুরোধ করেন।

আইনজীবীদের শুনানি নিয়ে আদালত রুল নিষ্পত্তি করে রায় ঘোষণা করে।

আদালতে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর পক্ষে আরো ছিলেন অ্যাডভোকেট  মো. মোমতাজ উদ্দিন মেহেদি, অ্যাডভোকেট মো. শাহরিয়া কবির বিপ্লব। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ নোমান হোসাইন তালুকদার।

জামিন আটকাতে মরিয়া দুদক

এ মামলায় হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকেই তৌফিক ইমরোজ খালিদী হাই কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন। তা মঞ্জুর করে ২০২০ সালের ২৬ অগাস্ট হাই কোর্ট তাকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দেয়।

সেই জামিন আটকাতে সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েছিল দুদক। তাদের লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের আপিল বেঞ্চ ২১ সেপ্টেম্বর দুদকের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেছিল- কেন তিনি এসব আবেদন নিয়ে এসে আপিল বিভাগের ‘সময় নষ্ট’ করছেন।

হাই কোর্টের জামিনের মেয়াদ শেষে নিয়ম অনুযায়ী ২০ অক্টোবর জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক।

ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েশ সেদিন জামিন মঞ্জুর করেন এবং শুনানিতে দুদকের আইনজীবীকে বলেন, “হাই কোর্ট জামিন দিয়েছে। এরপর আপনারা দৌড়ে আপিল বিভাগে চলে গেলেন। আপিল বিভাগে যাওয়ার কী আছে?”

পরে জজ আদালতের জামিন আদেশ চ্যালেঞ্জ করে গতবছর হাই কোর্টে রিভিশন আবেদন করে দুদক। সেই আবেদনের শুনানি শেষে ৮ ডিসেম্বর রুল দেয় হাই কোর্ট। তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে জজ আদালতের দেওয়া জামিন কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

প্রায় এক বছর পর সেই রুল নিষ্পত্তি করে হাই কোর্ট জানাল, জামিনেই থাকবেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক।

২০২০ সালে হাই কোর্টে আগাম জামিন পাওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী

কী অভিযোগ দুদকের?

২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর এক প্রতিবেদনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, তাদের কোম্পানিতে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ। ওই বিনিয়োগের একটি বড় অংশ তারা ব্যয় করবে ডিজিটাল সংবাদ সেবার সম্প্রসারণ ও উদ্ভাবনে।

কিন্তু পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাৎক্ষণিকভাবে ওই ‘বিনিয়োগ ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে বিরত’ থাকার নির্দেশ দেয়।

তার দুই সপ্তাহের মাথায় দুর্নীতি দমন কমিশন ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অবস্থান গোপনের’ অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে তৌফিক ইমরোজ খালিদী ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিরুদ্ধে ‘অনুসন্ধান’ শুরু করে।

দুদকের চিঠি পেয়ে ওই বছর ২৬ নভেম্বর কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে নিজের বক্তব্য জানিয়ে আসেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী। এরপর তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ‘অবরুদ্ধ’ করা হয়, যা এখনও সেভাবেই আছে।

২০২০ সালের ৩০ জুলাই দায়ের করা দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়, তৌফিক ইমরোজ খালিদী তার নামে থাকা কোম্পানির ২০ হাজার শেয়ার ২৫ কোটি টাকায় এবং কোম্পানির আরও ২০ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যু করে ২৫ কোটি টাকায় এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়, ওই ৪০ হাজার শেয়ারের ‘প্রকৃত মূল্য ৪০ লাখ টাকা’। কিন্তু ১২ হাজার ৪০০ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ টাকায়।

“তৌফিক ইমরোজ খালিদীর ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি ব্র্যাক-ইপিএলকে দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অ্যাসেট ভ্যালুয়েশন করিয়েছেন। ব্র্যাক-ইপিএলের প্রতিবেদন অনুসারে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ভ্যালুয়েশন ধরা হয়েছে ৩৭১ কোটি টাকা।”

কিন্তু ওই প্রতিবেদন ‘ভুয়া’ ছিল অভিযোগ করে এজাহারে বলা হয়েছে, ওই ৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৪২ কোটি টাকা এইচএসবিসি, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন হিসাবে জমা করা হয়েছে।

“তৌফিক ইমরোজ খালিদী উক্ত অস্থাবর সম্পদ অসাধু উপায়ে অর্জন করেছেন, যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।”

যা বলছেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী

২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৭ (১) ধারায় দায়ের করা এ মামলায় দুদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বিরুদ্ধে ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছে। অথচ তৌফিক ইমরোজ খালিদী তার নামে থাকা কোম্পানির কত শেয়ার কত টাকায় এলআর গ্লোবালের কাছে বিক্রি করেছেন, সেই টাকা কোন ব্যাংকে আছে, সেসব কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রকাশ করেছে এবং দুদকের এজাহারেও তা এসেছে।

এজাহারে অর্থের উৎস নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তা খণ্ডন করে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেছেন, স্বীকৃতভাবে শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে ওই টাকা অর্জন করা হয়েছে। তাই বিক্রি করা শেয়ারের অর্থের উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে তা শেয়ার ক্রয়কারীকে করা উচিত।

তাছাড়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের দপ্তর থেকে যথাযথভাবে নিবন্ধিত একটি বেসরকারি কোম্পানি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। সুতরাং শেয়ার বিক্রির জন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে জানানোর বাধ্যবাধকতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রযোজ্য নয়।

কোন পরিস্থিতিতে কী পরিকল্পনা নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বিনিয়োগ চুক্তি করেছিল, সেই অর্থ কোথায় কীভাবে আছে বা ব্যয় হয়েছে, কেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী নিজের হাতে থাকা কিছু শেয়ার বিক্রি করেছেন এবং ওই চুক্তির পর কী কী ঘটেছে তার একটি বিবরণ ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতামত কলামে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তুলে ধরেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

‘অল ফর জার্নালিজম!’ শিরোনামে ওই নিবন্ধে তিনি বলেন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিকাশ, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ নিশ্চিত করতে বিনিয়োগ প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া দীর্ঘদিনের ‘স্বল্প বিনিয়োগ কিংবা বিনিয়োগ খরার’ কারণে কর্মীদের অনেকের বেতন বকেয়া পড়ছিল, বেড়ে যাচ্ছিল দায়; সে কারণে কোম্পানির ৩৭ হাজার ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রতিটি শেয়ার মাত্র ১২ হাজার ৫০০ টাকায় ছেড়ে দিতে হয়েছে তাকে।

তারিখ ধরে পুরো ঘটনাক্রম তুলে ধরে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর সেই নিবন্ধে বলা হয়, ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল ইনফরমেশন মেমোরেন্ডাম (আইএম) তৈরির জন্য ব্র্যাক-ইপিএলের সঙ্গে এনডিএ স্বাক্ষরিত হয়। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কয়েক মাস কাজ করে একটি ইনফরমেশন মেমোরেন্ডাম তৈরি করে ব্র্যাক-ইপিএল। তাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ভ্যালুয়েশন হল ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০১৮)।

পরে এলআর গ্লোবালের সঙ্গে বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা শুরু হলে ব্র্যাক-ইপিলের কাছ থেকে ইনফরমেশন মেমোরেন্ডামের হালনাগাদ সংস্করণ আনা হয়, যাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ভ্যালুয়েশন করা হয় ৩৭১ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর চুক্তি হয় এলআর গ্লোবালের সঙ্গে।

৬ অক্টোবর বিনিয়োগের টাকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মূল প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নিউজ টোয়েন্টিফোর আওয়ার্স লিমিটেড এবং তৌফিক ইমরোজ খালিদীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পৌঁছায়। তৌফিক ইমরোজ খালিদী তার হাতে থাকা কোম্পানির শেয়ারের একটি অংশ বিক্রি করে দেওয়ায় ওই টাকা ‘পুরোপুরি বৈধভাবেই’ তার অ্যাকাউন্টে যায়।

ওই নিবন্ধে তৌফিক ইমরোজ খালিদী লিখেছেন, ওই বিনিয়োগ থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে পাওয়া অর্থের ২৫ শতাংশের বেশি ব্যয় হয়েছে কোম্পানির পুঞ্জিভূত দায়ের একটি বড় অংশ মেটাতে। আর তার শেয়ার বিক্রির টাকা কোথায় আছে তা এফডিআর অ্যাকাউন্টগুলো দেখলেই ‘বোঝা যায়’।

একজন সাবেক সহকর্মী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এক পোস্টে দুদকের তদন্তসহ পুরো বিষয়টিকে ‘হয়রানি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক ওই নিবন্ধে প্রশ্ন রাখেন- ‘নৈতিক সাংবাদিকতার’ চর্চা করাই তার এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ‘ভুল’ ছিল কি না। ‘অনেক প্রথমের জন্ম দেওয়া’ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ‘ক্ষতি করে কার স্বার্থ হাসিল’ করা হচ্ছে? বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এবং যিনি এর নেতৃত্বে, তার ‘ভাবমূর্তি নষ্ট করে কার কী লাভ’?

“সব মিলিয়ে এ এক হতাশাজনক পরিস্থিতি। কিছু বিতর্কিত লোক, যাদের কাজ সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ, তাদের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এতটা নগ্নভাবে ব্যবহার- এটা আমরা কখনও দেখতে চাই না, যখন আমরা সেরকম একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, যেটাকে মানুষ অনুকরণ-অনুসরণ করবে, যেটা হবে মানুষের ভরসার জায়গা।… বাস্তবিক অর্থেই আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।”