বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদক জামিনেই থাকছেন

দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় হাই কোর্টের আগাম জামিনের মেয়াদ শেষে ঢাকার জজ আদালত থেকেও জামিন পেয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2020, 07:58 AM
Updated : 20 Oct 2020, 03:30 PM

ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েশ মঙ্গলবার তৌফিক ইমরোজ খালিদীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদকের পক্ষে জামিন শুনানি করেন ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিব উল্লাহ হিরু, ঢাকা বারের সাবেক দুই সম্পাদক আব্দুর রহমান হাওলাদার ও মিজানুর রহমান মামুন।

তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস, নোমান হোসাইন তালুকদার , মো. এহসান হাবিব, ওমর ফারুক, জীবনানন্দ চন্দ জয়ন্ত, মো. পারভেজ, খালেদ মোশাররফ, মনির হোসেন, বিকাশ মজুমদার, লাতিফুর রহমান ও শোয়েবুজ্জামান সুপ্ত।

অন্যদিকে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।

পরে আইনজীবী মিজানুর রহমান মামুন সাংবাদিকদের বলেন, “দুদক তথ্যবিহীন অভিযোগ এনে, পুরোপুরি ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে হয়রানি করার জন্য উনার (তৌফিক ইমরোজ খালিদী) বিরুদ্ধে মামলাটি করেছে।”

তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন বাতিলের জন্য দুদক যে আপিল বিভাগে গিয়েছিল এবং সর্বোচ্চ আদালতেও যে জামিন বহাল রাখা হয়েছিল, সে বিষয়টি উল্লেখ করে মামুন বলেন, “সেটার আলোকেই আমরা আজকে মামলায় শুনানি করি।

“আমরা আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, দুদক যে অভিযোগটা এনেছে উনার বিরুদ্ধে, এটা ভিত্তিহীন। উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত আমাদেরকে মামলার পরবর্তী তারিখ পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন। পরবর্তী তারিখটা এখনও দেয়নি, আমরা পরে নথি দেখলে জানতে পারব।”

এদিন শুনানির শুরুর দিকে বিচারক জানতে চান, দুদক সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করতে বলেছিল কি-না। তৌফিক ইমরোজ খালিদীর আইনজীবী তখন আদালতকে বলেন, দুদক তা চায়নি।

বিচারক এক পর্যায়ে দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, “হাই কোর্ট জামিন দিয়েছে। এরপর আপনারা দৌড়ে আপিল বিভাগে চলে গেলেন। আপিল বিভাগে যাওয়ার কী আছে?”

দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, “অভিযোগ হচ্ছে, শেয়ারের ওভার ভ্যালুয়েশন হয়েছে।” 

তৌফিক ইমরোজ খালিদীর আইনজীবী নজিব উল্লাহ হিরু তখন বলেন, “আকিজের একই দামের শেয়ার বিক্রি হয়েছে ছয় লাখ টাকা দামে। সেখানে আমাদেরটায় ওভার ভ্যালুয়েশন কোথায় হল?

“আর এখানে ক্রেতা নিজেও রিপোর্ট দিয়ে বলেছে, ‘আমরা এই দামে কিনেছি’। দাম পরিশোধ করা হয়েছে অ্যাকাউন্ট টু অ্যাকাউন্ট। আমাদের সব টাকা এফডিআর করা। এখানে অনিয়ম কোথায় হল?”

অপর আইনজীবী মিজানুর রহমান মামুন শুনানিতে বলেন, “বলা হচ্ছে, ওভার ভ্যালুয়েশনের কথা। কিন্তু আমাদের (কোম্পানি হিসেবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের) ভ্যালুয়েশন হয়েছে ৩৭১ কোটি টাকার। আমরা অনেক কম দামে বিক্রি করেছি।”

`অসাধু উপায়ে’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক গত ৩০ জুলাই এই মামলা করে, যে অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৭ (১) ধারায় দায়ের করা মামলাটির এজাহারে বলা হয়েছে, তৌফিক ইমরোজ খালিদী চারটি ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে ৪২ কোটি টাকা জমা রেখেছেন, যার ‘বৈধ কোনো উৎস’ দুদক পায়নি।

‘ভুয়া কাগজপত্র সৃষ্টি করে অবৈধ প্রক্রিয়ায় প্রতারণার মাধ্যমে’ তিনি ওই টাকা অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।

এ বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছিল গত বছরের শেষ ভাগে, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ পাওয়ার খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সংবাদ প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করার পর।

বিনিয়োগের ওই টাকাই ‘অবৈধ প্রক্রিয়ায়’ অর্জন করা হয়েছে বলে সাড়ে আট মাস পর দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করে দুদক।

এ মামলায় হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকে উচ্চ আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী। গত ২৬ অগাস্ট সে আবেদন মঞ্জুর করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ তাকে আট সপ্তাহের জামিন দেয়।

সেই জামিন আটকাতে সর্বোচ্চ আদালতেও গিয়েছিল দুদক। তাদের লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের আপিল বেঞ্চ গত ২১ সেপ্টেম্বর দুদকের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেছিল- কেন তিনি এসব আবেদন নিয়ে এসে আপিল বিভাগের ‘সময় নষ্ট’ করছেন।

হাই কোর্টের জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় নিয়ম অনুযায়ী মঙ্গলবার জজ আদালতে হাজির হয়ে নতুন করে জামিনের আবেদন করেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক। শুনানি শেষে বিচারক তাতে সায় দেন।

এদিন জামিন পাওয়ার পর সাংবদিকদের সামনে কথা বলেননি তৌফিক ইমরোজ খালিদী। তবে ২৬ অগাস্ট হাই কোর্টে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এটা ‘সাজানো’ মামলা; এজাহারে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তার ‘এক বর্ণও সত্য নয়’।

“মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য, আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য (এটা) করা হয়েছে।”

দুদকের এই মামলা নিয়ে লেখক, গবেষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, অধিকারকর্মী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট থেকে শুরু করে নানা পেশার হাজারো মানুষ অনলাইনে সরব হয়েছেন।

তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা এবং পূর্বাপর ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলো কেন আমলে নেওয়া হচ্ছে না, তা রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের কাছে জানতে চেয়েছেন তারা।

কী অভিযোগ দুদকের?

গত ১৩ অক্টোবর এক প্রতিবেদনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, তাদের কোম্পানিতে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ। ওই বিনিয়োগের একটি বড় অংশ তারা ব্যয় করবে ডিজিটাল সংবাদ সেবার সম্প্রসারণ ও উদ্ভাবনে।

কিন্তু পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাৎক্ষণিকভাবে ওই ‘বিনিয়োগ ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে বিরত’ থাকার নির্দেশ দেয়। তার দুই সপ্তাহের মাথায় দুর্নীতি দমন কমিশন ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অবস্থান গোপনের’ অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে তৌফিক ইমরোজ খালিদী ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিরুদ্ধে ‘অনুসন্ধান’ শুরু করে।

দুদকের চিঠি পেয়ে গত ২৬ নভেম্বর কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে নিজের বক্তব্য জানিয়ে আসেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী। এরপর তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ‘অবরুদ্ধ’ করা হয়, মামলা করা হয় গত ৩০ জুলাই।

সেই এজাহারে বলা হয়, তৌফিক ইমরোজ খালিদী তার নামে থাকা কোম্পানির ২০ হাজার শেয়ার ২৫ কোটি টাকায় এবং কোম্পানির আরও ২০ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যু করে ২৫ কোটি টাকায় ‘এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের সিইও রিয়াজ ইসলামের কাছে’ বিক্রি করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই ৪০ হাজার শেয়ারের ‘প্রকৃত মূল্য ৪০ লাখ টাকা’। কিন্তু ১২ হাজার ৪০০ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ টাকায়।

“তৌফিক ইমরোজ খালিদীর ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি ব্র্যাক-ইপিএলকে দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অ্যাসেট ভ্যালুয়েশন করিয়েছেন। ব্র্যাক-ইপিএলের প্রতিবেদন অনুসারে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ভ্যালুয়েশন ধরা হয়েছে ৩৭১ কোটি টাকা।”

কিন্তু ওই প্রতিবেদন ‘ভুয়া’ ছিল অভিযোগ করে এজাহারে বলা হয়েছে, ওই ৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৪২ কোটি টাকা এইচএসবিসি, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন হিসাবে জমা করা হয়েছে।

“তৌফিক ইমরোজ খালিদী উক্ত অস্থাবর সম্পদ অসাধু উপায়ে অর্জন করেছেন, যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।”

তৌফিক ইমরোজ খালিদী কী বলছেন?

গত ২৬ অগাস্ট হাই কোর্টে আগাম জামিনের আদেশ হওয়ার পর সাংবাদিকরা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “ওই এফআইর ভুলে ভরা। তথ্যের দিক থেকে ভুলে ভরা। একটি বর্ণ সত্যি কথা নাই সেখানে।”

তিনি বলেন, এ মামলায় দুটো অভিযোগ আছে। একটি হল ‘অসাধু উপায়ে’ টাকা অর্জন, অন্যটি হল ব্র্যাক-ইপিএল নাকি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ‘কোনো ভ্যালুয়েশনই করেনি’।

আসলে কী ঘটেছিল, সেই বিবরণে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট তৈরি করে দেওয়ার জন্য ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল ব্র্যাক-ইপিএলের সঙ্গে একটি এনডিএ (নন ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষরিত হয়। এরপর ব্র্যাক-ইপিএলের এমডি ও সিইওর সাথে বহু বৈঠক এবং চিঠি চালাচালি চলে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছ থেকে বিভিন্ন নথিপত্র নিয়ে প্রথম যে ইনফরমেশন মেমোরেন্ডামটি (আইএম) ব্র্যাক-ইপিএল তৈরি করে পাঠায়, যেখানে কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের ভ্যালুয়েশন হয় ৩৭ হাজার ১০০ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানির ভ্যালুয়েশন হয় ৩৭১ কোটি টাকা।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্র্যাক-ইপিএল একটি হালনাগাদ রিপোর্ট দেয়, তা নিয়ে সে সময় দুটো বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা চলে বলেও জানান তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

তিনি বলেন, “প্রায় ঠিকঠাকই হয়ে গিয়েছিল, বিভিন্ন কারণে হয়নি। একটি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত পরে প্রত্যাহার করে নেয়। আমাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল, কিন্তু বাংলাদেশে তারা বিনিয়োগ করতে চায়নি (ওই কোম্পানি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বিনিয়োগে আগ্রহী হলেও তাদের বোর্ড পরে দেশ হিসেবে বাংলাদেশে অর্থ লগ্নি না করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়)।

“একটি কোম্পানির কথা আমি বলতে পারি..., সেইখানে আলোচনার সময় ব্র্যাক-ইপিএল রাজিও হয়েছে তাদের সাথে আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে। নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক যে প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের কথা হয়েছিল, তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য তারা রাজি হয়েছে।”

তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (ব্র্যাক-ইপিএল) যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেখানে কিন্তু তারা স্বীকার করেছে তারা ভ্যালুয়েশন করেছে। কিন্তু দুদকের কাছে তারা বেমালুম অস্বীকার করেছে। কার চাপে করেছে?

“আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কারা এত ক্ষমতাশালী হয়ে উঠল যে রাষ্ট্রের চেয়ে ক্ষমতাশালী হয়ে গেছে। তারা এরকম চাপ দিতে পারে যে একজন লোককে মিথ্যা স্টেটমেন্ট দিতে হয়!”

গত ২৬ অগাস্ট আগামী জামিন পাওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী

‘অসাধু উপায়ে’ টাকা অর্জনের যে অভিযোগ মামলায় করা হয়েছে, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “(এজাহারে) বলা হয়েছে, ৪২ কোটি টাকা আমার অ্যাকাউন্টে পাওয়া গেছে। ৪২ কোটি টাকা (আমার অ্যাকাউন্টে) পাওয়া যেতে পারে না।”

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ২০ হাজার শেয়ার এবং তার নামে থাকা কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ২০ হাজার শেয়ার এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করা হয় মোট ৫০ কোটি টাকায়। এর মধ্যে ২৫ কোটি টাকা তার অ্যাকাউন্টে এবং ২৫ কোটি টাকা কোম্পানির অ্যাকাউন্টে জমা হয়।

“কোম্পানির ২৫ কোটি টাকা থেকে বেতন দেওয়া হয়েছে… ১৮ কোটি টাকা বাকি ছিল, সেই ১৮ কোটি টাকা এফডিআর করা হয়েছে। আর আমার কিছু ধার-টার ছিল, সবগুলো পরিশোধ করে ২৪ কোটি টাকা আমি রেখে দিয়েছি এফডিআর করে।”

তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “কেন রেখে দিয়েছি? কোম্পানি বিপদে পড়লে আমি যেন টাকা দিতে পারি। তার প্রমাণ আমি রেখেছি। গত কয়েক মাসে যখন খুব বিপদ ছিল, তখন আমার ওই এফডিআর থেকে যে সুদ পেয়েছি, সেটা থেকে কিন্তু আমি বেতন দিয়েছি।”

যেখানে নামি অনেক পত্রিকা শতকরা ২৫ ভাগ উৎসব ভাতা দিয়েছে, সেখানে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ঈদে শতভাগ উৎসবভাতা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কীভাবে দিয়েছি? আপনারা খোঁজ করে দেখেন, ব্যাংকের লেনদেন সব ট্রান্সপারেন্ট।

“বাংলাদেশের ব্যাংক থেকে আমাদের ব্যাংকে টাকা এসেছে। কোথায় লুকানো হল? আমরাই প্রথম (বিনিয়োগ পাওয়ার) খবর দিয়েছি, কোথায় লুকানো হল? প্রত্যেকটা টাকার ওপর ট্যাক্স দেওয়া হয়। এই টাকার উপর ট্যাক্স দিতে হবে এই অর্থবছরে, নভেম্বরের মধ্যে…। সে টাকাও তো আমি (অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ থাকলে) দিতে পারব না।”

তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “এটা ওরা সবাই জানে… কোনো কিছু লুকানো হয়নি। আমরা কোনো কিছু লুকাই না। আমার সম্পর্কে যা কিছু বাজে খবর হয়েছে, প্রত্যেকটা সবার আগে কারা ছেপেছে? বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ছেপেছে।

“কি হয় সাধারণত? নিজেদের সম্পর্কে খারাপ খবর হলে লুকানোর চেষ্টা করা হয়। অবশ্যই আমার কোনো কিছু লুকানো হয়নি। আমার কোন অ্যাকাউন্টে, দেশে-বিদেশে কোথায় কোন জায়গায় কয় টাকা আছে, সেটা আমার যে অ্যাকাউন্ট-ফাইন্যান্স দেখে, ওরা সবাই জানে। আমার চেয়ে বেশি জানে।”

কোন পরিস্থিতিতে শেয়ার বিক্রি করতে হয়েছে, তা তুলে ধরতে গিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক বলেন, “দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আমি বেতন নিতে পারিনি। ৩৪ মাস আমি বেতন নিইনি। একসাথে আমার বেতনগুলো এসেছে। সেটা দেখে দুদকের অফিসার আমাকে জিজ্ঞেস করেছে যে, ‘এত টাকা কোত্থেকে পেলেন’।

“সাথে সাথে উত্তর দিয়েছি, আমি এত মাসের বেতন একসাথে পেয়েছি। এত মাস এত দিন। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, ‘আপনার কোনো বাড়ি নাই? কোনো ফ্ল্যাট-প্লট নাই?’ তিনবার চারবার জিজ্ঞেস করেছে। আমি বলেছি- নাই।”

তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “কে টাকা দিয়ে কী করবে সেটা মানুষের জীবন দর্শনের ব্যাপার। কেউ জমি কিনবে, কেউ ফ্ল্যাট কিনবে। সে অনিশ্চয়তায় আমি কখনো ভুগিনি। (কিন্তু) এখন ভুগছি, যখন আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার শরীর খারাপ হয়েছে, আমার চোখ নষ্ট হয়েছে।”

দুদকের মামলায় তোলা সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “আসলে এটা সাজানো হয়েছে। কারা করেছে- এরা তাও জানে। কী জন্যে করেছে তাও জানে। আমরা পাঁচটি স্টোরি করেছিলাম কোনো এক তরুণ ব্যবসায়ীকে নিয়ে। তিনি ক্ষেপে গেছেন। তিনি অসম্ভব ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছেন।

“যারা তুখোড় রাজনীতিক, বহুদিন ধরে রাজনীতি করেন এবং অন্যান্য যারা আছেন, তাদের সবার চেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী (সেই তরুণ ব্যবসায়ী)!

“আরেকজন ব্যবসায়ী আছেন- তিনি তো সবার চেয়ে ক্ষমতাশালী। যে করেই হোক এটা নিয়ে নিতে চান। যে কোনো মূল্যে এটা নিতে চান। আমরা বলেছি না, এটার মালিকানা কাগজে-কলমে যারই থাকুক না কেন, এখানে যারা কাজ করে তাদের। আপনি যদি কথা বলেন, তারা সাক্ষ্য দেবে।”