বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান সম্পাদকের জামিন বাতিল চেয়ে দুদকের আবেদন শুনবে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে হাই কোর্টের দেওয়া আগাম জামিন আটকাতে দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনে সাড়া দেয়নি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2020, 11:33 AM
Updated : 10 Sept 2020, 04:55 PM

আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে সেখানে শুনানির জন্য ২১ সেপ্টেম্বর দিন রাখা হয়েছে।

হাই কোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুদকের করা লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানির পর বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের ভার্চুয়াল চেম্বার আদালত বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।

আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

তৌফিক ইমরোজ খালিদীর পক্ষে শুনানি করেন সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন। তাদের সাহায্য করেন অ্যাডভোকেট নোমান হোসাইন তালুকদার ও মোহাম্মদ এহসান হাবিব।

আইনজীবী খুরশীদ পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চেম্বার বিচারপতি জামিনের মেয়াদ জানতে চাইলে আমি বলেছি ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত। কেন লিভ টু আপিল করেছি এবং কেন দেরিতে আবেদন করেছি জানতে চাইলে আমি বলেছি, আবেদনটি পরদিনই ফাইল করেছিলাম। কিন্তু আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি পেতে দেরি হয়েছে। তখন বিচারপতি বলেছেন ২১ সেপ্টেম্বর ফুল কোর্টে শুনব।” 

“মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য, আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য (এটা) করা হয়েছে,” বলেছেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

‘অসাধু উপায়ে’ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক গত ৩০ জুলাই এই মামলা করে, যে অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৭ (১) ধারায় দায়ের করা মামলাটির এজাহারে বলা হয়েছে, তৌফিক ইমরোজ খালিদী চারটি ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে ৪২ কোটি টাকা জমা রেখেছেন, যার ‘বৈধ কোনো উৎস’ দুদক পায়নি।

‘ভুয়া কাগজপত্র সৃষ্টি করে অবৈধ প্রক্রিয়ায় প্রতারণার মাধ্যমে’ তিনি ওই টাকা অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।

দুদকের এই অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল গত বছরের শেষ ভাগে, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ পাওয়ার খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সংবাদ প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করার সপ্তাহ দুই পর।

বিনিয়োগের ওই টাকাই ‘অবৈধ প্রক্রিয়ায়’ অর্জন করা হয়েছে বলে সাড়ে আট মাস পর দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করেছে দুদক।

ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েশ এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৭ অক্টোবর দিন রেখেছেন।

এ মামলায় হয়রানীর শিকার হতে পারেন এমন আশঙ্কা থেকেই উচ্চ আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

গত ২৬ অগাস্ট সে আবেদন মঞ্জুর করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ তাকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দেয়।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক সেদিন বলেন, এটা ‘সাজানো’ মামলা; এজাহারে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তার ‘এক বর্ণও সত্য নয়’।

“মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য, আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য (এটা) করা হয়েছে।”

গত ২৬ অগাস্ট আগামী জামিন পাওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী

কী আছে মামলায়?

গত ১৩ অক্টোবর এক প্রতিবেদনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, তাদের কোম্পানিতে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ। ওই বিনিয়োগের একটি বড় অংশ তারা ব্যয় করবে ডিজিটাল সংবাদ সেবার সম্প্রসারণ ও উদ্ভাবনে।

কিন্তু পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাৎক্ষণিকভাবে ওই ‘বিনিয়োগ ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে বিরত’ থাকার নির্দেশ দেয়। তার দুই সপ্তাহের মাথায় দুর্নীতি দমন কমিশন ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অবস্থান গোপনের’ অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে তৌফিক ইমরোজ খালিদী ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিরুদ্ধে ‘অনুসন্ধান’ শুরু করে।

দুদকের চিঠি পেয়ে গত ২৬ নভেম্বর কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে নিজের বক্তব্য জানিয়ে আসেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী। এরপর তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ‘অবরুদ্ধ’ করা হয়, মামলা করা হয় গত ৩০ জুলাই।

সেই এজাহারে বলা হয়েছে, তৌফিক ইমরোজ খালিদী তার নামে থাকা কোম্পানির ২০ হাজার শেয়ার ২৫ কোটি টাকায় এবং আরও ২০ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যু করে ২৫ কোটি টাকায় এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের সিইও রিয়াজ ইসলামের কাছে বিক্রি করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই ৪০ হাজার শেয়ারের ‘প্রকৃত মূল্য ৪০ লাখ টাকা’। কিন্তু ১২ হাজার ৪০০ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে ১২হাজার ৫০০ টাকায়।

“তৌফিক ইমরোজ খালিদীর ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি ব্র্যাক-ইপিএলকে দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অ্যাসেট ভ্যালুয়েশন করিয়েছেন। ব্র্যাক-ইপিএলের প্রতিবেদন অনুসারে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ভ্যালুয়েশন ধরা হয়েছে ৩৭১ কোটি টাকা।”

কিন্তু ওই প্রতিবেদন ‘ভুয়া’ ছিল অভিযোগ করে এজাহারে বলা হয়েছে, ওই ৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৪২ কোটি টাকা এইচএসবিসি, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন হিসাবে জমা করা হয়েছে।

“তৌফিক ইমরোজ খালিদী উক্ত অস্থাবর সম্পদ অসাধু উপায়ে অর্জন করেছেন, যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।”

দুদকের এই মামলা নিয়ে ইতোমধ্যে লেখক, গবেষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, অধিকারকর্মী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট থেকে শুরু করে নানা পেশার কয়েক হাজার মানুষ অনলাইনে সরব হয়েছেন।

তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা এবং পূর্বাপর ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলো কেন আমলে নেওয়া হচ্ছে না, তা রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের কাছে জানতে চেয়েছেন তারা।