অভিযোগ এখনো স্পষ্ট নয়: তৌফিক ইমরোজ খালিদী

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেছেন, ঠিক কী অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে, সেটা এখনো তার কাছে ‘স্পষ্ট নয়’, তবে বিষয়টি যেহেতু তদন্তাধীন, এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমে বেশি কিছু বলতে চান না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2019, 02:05 PM
Updated : 26 Nov 2019, 06:07 PM

দুদকের চিঠি পাওয়ার পর মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নিজের বক্তব্য জানানোর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।  

একজন সাংবাদিক জানতে চেয়েছিলেন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগটি কী।

উত্তরে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তো সে অর্থে এখনো পরিষ্কার না। তারা তদন্ত করে বোঝার চেষ্টা করছেন, কারণ একটা চিঠি আসছে বোধহয় কোনো একটা জায়গা থেকে, সেটার ভিত্তিতে তো কাজ করা হচ্ছে।“

গত ৫ নভেম্বর দুদকের পক্ষ থেকে একটি চিঠি পাঠিয়ে তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে ১১ নভেম্বর দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, খালিদীর নিজের এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হিসাবে ‘বিপুল পরিমাণ টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন’ এবং বিভিন্ন ‘অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ’ অর্জনের অভিযোগে তার বক্তব্য জানা প্রয়োজন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়ে আবেদন করলেও দুদকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানানোয় সেদিন কমিশনের দপ্তরে যান। পরে দুদকের পক্ষ থেকে তাকে ২৬ নভেম্বর নতুন তারিখ দেওয়া হয়।

সে অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হন তৌফিক ইমরোজ খালিদী। বিকাল পৌনে ৪টা পর্যন্ত তার বক্তব্য শোনেন দুদকের উপ পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। 

দুদক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসার সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তৌফিক ইমরোজ খালিদী। সেখানে তার কাছে দুদকের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চান একজন।

উত্তর দিতে গিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের ৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রসঙ্গ টানেন প্রধান সম্পাদক। 

“আসলে একটা বিনিয়োগ হয়েছে, একটা কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে, বিনিয়োগ হওয়ার পর সেটা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। সেটা তারা (দুদক) খতিয়ে দেখবার চেষ্টা করছেন। এবং আমার কাছে যেটা মনে হয় যে, তারা দেখবেন, খতিয়ে দেখবেন।”

অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে দুদককেই প্রশ্ন করতে সাংবাদিকদের পরামর্শ দেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

দুদক সচিব দিলোয়ার বখত সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, ’সুনির্দিষ্ট’ অভিযোগ পেয়েই তারা অনুসন্ধান করছেন।

“বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের সম্পাদককে আজকে দুর্নীতি দমন কমিশনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং বিডিনিউজের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ এবং মানি লন্ডারিং।”

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তবেই দুদক তা অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করে বলে মন্তব্য করেন দিলোয়ার বখত।

তখন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন- ”স্পেসিফিক যদি বলতেন, উনার কত টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন হয়েছে, কত টাকা তিনি অ্যাকাউন্টে এনেছেন…”

উত্তরে দুদক সচিব বলেন, “এটাতো অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন আছে। অনুসন্ধানের পর হয়ত বিস্তারিত জানা যাবে।“

এ সময় আরেক সাংবাদিক বলেন, ”তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেছেন, অভিযোগ উনার কাছেও স্পষ্ট নয়। দুদক যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, উনার কাছে মনে হয়েছে দুদকের কাছেও বিষয়টি পরিষ্কার নয়।”

উত্তরে দুদক সচিব বলেন, “জানি না ওখানে কী আলোচনা হয়েছে। অনুসন্ধান বা জিজ্ঞাসাবাদের সময় দুদকের কর্মকর্তা উনার কাছে অনেক কিছু জানতে চাইতে পারেন। দুদকের কর্মকর্তা তার কাছ থেকে তথ্য গ্রহণ করার পরে এবং অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ যারা সংশ্লিষ্ট আছেন, তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করার পরে, প্রমাণাদি যাচাই করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে, পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।”

দিলোয়ার বখতের কাছে এক সাংবাদিক জানতে চান- “আপনারা অনেক মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণ করে থাকেন। পত্রিকা থেকে নিয়ে থাকেন, অভিযোগ বক্সে, ১০৬ নম্বর থেকেও। এই অভিযোগটি কীভাবে পেয়েছেন?”

উত্তরে তিনি বলেন, ”এটি আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পেয়েছি। কমিশনের অনুসন্ধান কমিটির সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সেটি অনুসন্ধান হচ্ছে।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম গত ১৩ অক্টোবর এক প্রতিবেদনে জানায়, তাদের কোম্পানিতে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ। ওই বিনিয়োগের একটি বড় অংশ তারা ব্যয় করবে ডিজিটাল সংবাদ সেবার সম্প্রসারণ ও উদ্ভাবনে।

তারপর এক মাস না পেরোতেই দুদক  ‘জ্ঞাত আয়ের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জনের’ অভিযোগে তার বক্তব্য জানতে চেয়ে চিঠি পাঠায়।

সেসময় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তৌফিক ইমরোজ খালিদী ওই অভিযোগকে ‘পুরোপুরি ভিত্তিহীন’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, তিনি সব সময় নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করেছেন এবং কোনো ‘অবৈধ সম্পদ’ তার নেই।

“আমাদের প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন খুবই শক্তিশালী একটি মহলকে নাখোশ করেছে। আর আমার সহকর্মীদের বস্তুনিষ্ঠ ও উদাহরণযোগ্য সাংবাদিকতার মূল্য এখন আমাদের এভাবে দিতে হচ্ছে।”

আর ১১ নভেম্বর দুদক কার্যালয়ে প্রথমবারের মত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “সাংবাদিক হিসেবে আপনারা ইনভেস্টিগেশন করেন যে কেন হয়েছে। কোন খবর নিয়ে হয়েছে। কোনো খবরে যদি আমাদের ভুল থাকত, একটি শব্দ, একটি বাক্য, একটি তথ্য, তাহলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারত। মামলা করেনি কেন? এই পথ কেন নিয়েছে?”

অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তৌফিক ইমরোজি খালিদী সেদিন বলেছিলেন, “বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে একটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করেছে। সেই বিনিয়োগের একটি অংশ হচ্ছে, আমরা নতুন শেয়ার ইস্যু করে তাদের কাছে দিয়েছি। (অন্য অংশ হল) আমার অল্প মালিকানায় যেটা আছে, সেটার একটা অংশ বিক্রি করেছি। তাতে আমার একেবারে সম্পদহীন অবস্থা থেকে যে সম্পদ তৈরি হয়েছে, এতে অবৈধ সম্পদ অর্জন কী করে হলো?”

সেদিন তিনি বলেন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের দিক থেকে সমস্ত আইন কানুন মেনেই বিনিয়োগ চুক্তি করা হয়েছে। শেয়ার বিক্রি করে যে টাকা পেয়েছেন, তার জন্য আয়কর তিনি নির্ধারিত সময়েই দেবেন। তিনি বা তার প্রতিষ্ঠান কখনোই কর ফাঁকি দেননি। 

মঙ্গলবার দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, ”সেদিন আমি অনেক কথা বলেছিলাম, কারণ সেদিন আমার তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়নি। আজকে যেহেতু উনার সঙ্গে কথা হয়েছে, আমার মনে হয় না এ বিষয়ে কথা বলা উচিত হবে। এটা নিয়মসিদ্ধ হয় না। আমি সবসময় এটা শ্রদ্ধা করে এসেছি।”

তিনি জানান, তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের নির্ধারিত একটি ফরম্যাটে অনেকগুলো প্রশ্ন করেছেন, উত্তরগুলো শুনে লিখে নিয়েছেন, তা লিখিতভাবে রেকর্ড করার পর তাতে স্বাক্ষর নিয়েছেন।

“আপনারা দেখবেন যে, আমরা যখন কাজ করি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরে বিচারাধীন বিষয় সম্পর্কে কোনো মন্তব্য আমরা করি না, ছাপি না। যেটি বিচারাধীন, যেটি তদন্তাধীন... এখানে বিচার হচ্ছে না তদন্ত হচ্ছে, ওনারা খতিয়ে দেখছেন আসলে বোঝার চেষ্টা করছেন যে চিঠিটি এসছে বা অভিযোগটা এসছে বিষয়টা আসলে কী হয়েছে।”

গত ২৯ অক্টোবর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, কোনো একজন পত্রিকার সম্পাদক একটি ব্যাংকের এমডিকে ফোন করে টাকা দাবি করেছেন এবং সেই রেকর্ডও আছে।

সেই প্রসঙ্গ টেনে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “এই প্রশ্নের উত্তর সেদিন আমি দিয়েছি। এটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আপনাদের জিজ্ঞেস করতে হবে যে, তিনি আমার কথা বলেছেন কি-না। আমি জানি কেন প্রশ্নটা উঠেছে।

”প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা সেদিন আমাকে কোনো একটি কারণে ফোন করেছিলেন। তিনি আমাকে বললেন যে, উনার সামনে বসে কোনো একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান কোনো একজনের সম্পর্কে অভিযোগ করেছেন। সেটি অন্য একটি নাম (অন্য একজনের নাম) তিনি বলেছেন।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক বলেন, কোনো ব্যাংক এমডির সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন হলে কোম্পানির ‘সেলস টিমই’ সেটা করে। তিনি নিজে সাধারণত কথা বলেন না।

তখন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন-  “আপনি পরিষ্কার এ বিষয়ে, প্রধানমন্ত্রী যে সম্পাদক নিয়ে কথা বলেছেন, সেটি আপনি না?”

উত্তরে তৌফিক ইমরোজ খালিদী হাসতে হাসতে বলেন, “না না না। এটা একেবারে আলোচনারও বিষয় না…। এটা প্রধানমন্ত্রীও জানেন, সবাই জানেন এটা…। আমার মনে হয়, এই প্রশ্নটা একেবারেই অবান্তর। একেবারেই অবান্তর।”