হত্যা মামলার আসামি আমানুর রহমান খান দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
Published : 18 Jan 2024, 11:15 AM
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার বিচার ১১ বছরেও শেষ হয়নি। মামলার বাদী তার স্ত্রী নাহার আহমেদ মামলা চলার মধ্যেই ২৯ ডিসেম্বর মারা গেছেন।
ফারুক আহমেদের ছেলে আহমদ সুমন মজিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছিলেন, “একজন মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার পেতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে। বিচারের আশায় অপেক্ষা করতে করতে আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন।
“মামলার আসামিরা প্রভাবশালী। তারা নানাভাবে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছেন। মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে গত সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা দিয়েছে। সে নির্দেশনা বাস্তবায়নেও উদ্যোগ নেই।”
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, শুধু তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি রয়েছে।
মামলাটি টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের কলেজ পাড়া এলাকায় বাড়ির কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
২০১৪ সালে এই মামলায় জড়িত সন্দেহে আনিছুল ইসলাম রাজা এবং মোহাম্মদ আলী নামের দুই জনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাদের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এই হত্যা মামলার সঙ্গে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার অপর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসভাপতি ছানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে।
তদন্ত শেষে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এতে সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খানরা চার ভাইসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়।
এই মামলার আসামি আমানুর রহমান খান রানা আত্মসর্মপণের পর তিন বছর কারাগারে ছিলেন। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত আছেন। ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
তার অপর ভাই সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি এখনও কারাগারে আছেন। অন্য দুই ভাই জাহিদুর রহমান খান কাকন, সানিয়াত খান বাপ্পা পলাতক রয়েছেন।
এই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত সরকারি কৌসুলি মনিরুল ইসলাম খান জানান, “৯ ডিসেম্বর মামলার তারিখ ছিলো। সাক্ষী হয়নি। এর আগে অন্তত আটটি ধার্য তারিখে অসুস্থ থাকায় আসামি হাজির করা হয়নি। অথবা সাক্ষী হাজির হয়নি। এজন্য বিচার কাজ পিছিয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, মামলার ২৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। এখন তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ হলেই মামলাটির যুক্তিতর্ক হবে। তারপরেই রায় হবে। ২৫ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ফারুক আহমেদের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে তার কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ, দুপুরে শহীদ মিনার চত্বরে গণভোজ এবং সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ।
আরও পড়ুন:
টাঙ্গাইলে ‘খান পরিবারে’ নেই নৌকার প্রার্থী
মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা: ফের কারাগারে টাঙ্গাইলের সাবেক মেয়র
আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা: জামিনে মুক্ত টাঙ্গাইলের সাবেক মেয়র
তথ্য গোপন: টাঙ্গাইলের সাবেক মেয়র মুক্তির জামিন বাতিল
আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যার আসামির কারা হেফাজতে মৃত্যু
টাঙ্গাইলে ফারুক হত্যার নয় বছরেও বিচার পায়নি পরিবার
টাঙ্গাইলের ফারুক হত্যা মামলা ৬ মাসে নিষ্পত্তির নির্দেশ
ফারুক হত্যা মামলা: টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র মুক্তির অন্তবর্তী জামিন