টাঙ্গাইলে ফারুক হত্যার নয় বছরেও বিচার পায়নি পরিবার

বাদী বলেন, আসামিরা প্রভাবশালী; তারা নানাভাবে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছেন।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2023, 05:43 AM
Updated : 18 Jan 2023, 05:43 AM

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার বিচার নয় বছরেও শেষ হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীরা।

আর এই ক্ষোভ নিয়েই বুধবার ফারুক আহমেদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে পরিবার ও জেলা আওয়ামী লীগ।

বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলাটি টাঙ্গাইল প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) এস আকবর খান বলেন, এ পর্যন্ত ২৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ রয়েছে।

মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।

২০১৪ সালে এই মামলায় জড়িত থাকা সন্দেহে আনিসুল ইসলাম ওরফে রাজা এবং মোহাম্মদ আলী নামে দুই জনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাদের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এই হত্যার সঙ্গে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার অপর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান ওরফে কাকন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি সানিয়াত খান ওরফে বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে।

তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এতে সংসদ সদস্য আমানুর রহমানরা চার ভাইসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়।

এই মামলার আসামি আমানুর রহমান খান আত্মসমর্পণের পর তিন বছর কারাগারে ছিলেন। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত আছেন। তার অপর ভাই সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান দুই বছর আগে আদালতে আত্মসমর্পণের পর এখন পর্যন্ত কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে রয়েছেন আলমগীর হোসেনও।

আমানুরের অপর দুই ভাই জাহিদুর রহমান খান ও সানিয়াত খানসহ মো. কবির এবং ছানোয়ার হোসেন পলাতক রয়েছেন।

অন্য আসামিদের মধ্যে আনিসুর রহমান রাজা ও মো. সমীর কারাগারে মারা গেছেন।

জামিনে রয়েছেন মোহাম্মদ আলী, মাসুদুর রহমান, নাসির উদ্দিন নুরু, ফরিদ আহমেদ ও বাবু।

মামলার বাদী নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ বলেন, “আসামিরা প্রভাবশালী। তারা নানাভাবে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছেন। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার পেতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে? দ্রুত হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছি।”

টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনি জানান, দলের পক্ষ থেকে সকালে দলীয় কার্যালয়ে কোরআনখানি, শোকযাত্রাসহ কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে শহীদ মিনারে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। পরে গরিব মানুষকে খাওয়ানো হবে।

ফারুক আহমেদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কলেজ পাড়ার বাসায় কোরআনখানি ও দরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

এই হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী টাঙ্গাইল অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলী মনিরুল ইসলাম খান বলেন, বাদী, চিকিৎসক, ম্যাজিস্ট্রেটসহ এই মামলার গুরত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। তাদের জেরাও শেষ হয়েছে।

এখন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ দুই-একজনের সাক্ষ্য হলেই মামলাটি যুক্তিতর্কে যাবে। তারপর রায় হবে বলে জানান আইনজীবী।

আরও পড়ুন:

টাঙ্গাইলের সাংসদ রানাকে গ্রেপ্তারে বাধা কাটল

Also Read: আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যার আসামির কারা হেফাজতে মৃত্যু