আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি আগামী বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জামিন আবেদন করতে পারবেন না।
Published : 26 Nov 2023, 08:25 PM
তথ্য গোপন করায় টাঙ্গাইলে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলার আসামি সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির জামিন বাতিল করেছে হাই কোর্ট।
তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অধস্তন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ৬ মাস পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ফের জামিন বিষয়ে রুল শুনানি করা যাবে না বলেও নির্দেশনা দিয়েছে আদালত।
রোববার বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের বেঞ্চ থেকে এই আদেশ দেওয়া হয়। এই বেঞ্চই গত সোমবার সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে জামিন দিয়েছিল।
এদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান সিদ্দিকী ও মো. মজিবুর রহমান মুজিব।
ডিএজি আমিন উদ্দিন মানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সহিদুর রহমান খান মুক্তি এই আদালতে জামিনের আবেদনে আপিল বিভাগের দেওয়া নির্দেশনার কিছু তথ্য গোপন করেছিলেন বলে একটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়।
“বিষয়টি নজরে এলে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টি পুনরায় কজ লিস্টে (কার্যতালিকা) আনে এবং শুনানি করে।”
পত্রিকার খবরে বলা হয়, সহিদুর রহমান খান মুক্তি হাই কোর্টের একটি বেঞ্চে জামিন আবেদন বিচারাধীন থাকার তথ্য গোপন করে আরেকটি বেঞ্চে আবেদন করেছিলেন। বিষয়টি নজরে আনার পর আদালত জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ করে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। ওই আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আবেদন করেছিলেন মুক্তি। চেম্বার আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠায়।
পরে আপিল বিভাগ গত ২৭ অগাস্ট জামিন না দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলার বিচারকাজ ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেয় বিচারিক আদালতকে।
আপিল বিভাগের এই নির্দেশনা গোপন করে ২০ নভেম্বর হাই কোর্টের এই বেঞ্চ থেকে তিনি জামিন পান তিনি। ওই আদেশ কারাগারে পৌঁছালে বুধবার তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
আইনজীবীর বরাতে ওই পত্রিকার খবরে আরও বলা হয়, হাই কোর্টে করা জামিন আবেদনে আপিল বিভাগের এই আদেশ গোপন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আবেদনে নাম পরিবর্তন করে লেখা হয়েছে ‘সহিদুল রহমান খান’। জেলা দেখানো হয়েছে ঢাকা। এ ছাড়া আবেদনে টেন্ডার নম্বরও দেওয়া হয়নি।
আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি জামিন আবেদন করতে পারবেন না।
ডিএজি আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, এ ঘটনায় মুক্তির দুই আইনজীবী এম এ মুস্তাকিম ও মো. জাকারিয়া হাবিবকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দিয়েছে আদালত। তারা আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
“গত ২০ নভেম্বর দেওয়া জামিন বাতিল করে সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট।”
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়ার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
পরে গোয়েন্দা পুলিশ রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামের দুই জনকে ২০১৪ সালের অগাস্টে গ্রেপ্তার করে। ওই দুই আসামির জবানবন্দিতে এ হত্যায় তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা এবং তার অন্য তিন ভাই পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে।
ছয় বছর আত্মগোপনে থেকে ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর সহিদুর রহমান খান মুক্তি টাঙ্গাইল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সেদিন আদালত মুক্তিকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
আরও পড়ুন
টাঙ্গাইলের ফারুক হত্যা মামলা ৬ মাসে নিষ্পত্তির নির্দেশ
আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা: জামিনে মুক্ত টাঙ্গাইলের সাবেক মেয়র
ফারুক হত্যা মামলা: টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র মুক্তির অন্তবর্তী জামিন