মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় সাংসদ রানার জামিন স্থগিত

মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাকে হাই কোর্টের দেওয়া ছয় মাসের জামিন স্থগিত করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2019, 08:43 AM
Updated : 25 March 2019, 08:43 AM

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর চেম্বার আদালত সোমবার এ আদেশ দেয়।

একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের জামিন স্থগিতের আবেদনটি ৩১ মার্চ শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে।

চেম্বার আদালতে রানার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সাইদ আহমেদ রাজা। স্থগিত আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও মো. বশির উল্লাহ।

বশির উল্লাহ পরে সাংবাদিকেদের বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় আমানুর রহমান খান রানাকে হাই কোর্ট গত ১৪ মার্চ ছয় মাসের জামিন দিয়েছিল।

“হাই কোর্টের ওই আদেশটি স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ রোববার চেম্বার আদালতে আবেদন করেছিল। হাই কোর্টের জামিন আদেশটি স্থগিত করে চেম্বার বিচারপতি আবেদনটি ৩১ মার্চ পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন।”

কয়েক দফা চেষ্টার পর ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল ফারুক হত্যা মামলায় হাই কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন রানা। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে তা স্থগিত করে দেয় আপিল বিভাগ।

এরপর ওই বছরের ১৯ অক্টোবর আপিল বিভাগ জামিনের এ স্থগিতাদেশ চলমান রেখে জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল ৪ সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেয়।

ওই আদেশ অনুযায়ী চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট। পরে নতুন করে বিচারিক আদালতে জামিন আবেদন করেন রানা।

বিচারিক আদালতে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর ফারুক হত্যা মামলায় এবং ৩০ সেপ্টেম্বর যুবলীগের দুই নেতা হত্যা মামলায় রানার জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। এরপর হাই কোর্টে আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।

গত ৬ মার্চ হাই কোর্ট যুবলীগের দুই নেতা হত্যা মামলায় ও ১৪ মার্চ ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় ছয় মাস করে জামিন পান রানা।

১৪ মার্চ আবার যুবলীগ নেতা হত্যা মামলায় পাওয়া ছয় মাসের জামিন স্থগিত করে দেয় চেম্বার আদালত। ফলে কারাগার থেকে আর বের হতে পারেননি টাঙ্গাইল-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।   

আওয়ামী লীগের টাঙ্গাইল জেলা কমিটির সদস্য ফারুক আহমেদকে ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তৎকালীন এমপি রানা ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠান টাঙ্গাইলের বিচারিক আদালত।

এ মামলায় ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রানা ও তার তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ওই বছর ৬ সেপ্টেম্বর দণ্ডবিধির ৩০২, ১২০, ৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তাদের বিচার শুরু করে আদালত। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

অন্য মামলাটি দায়ের করা হয় ২০১৩ সালে, তবে ঘটনাটি তার আগের বছরের।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা শামীম ও মামুন ২০১২ সালের ১৬ জুলাই মোটরসাইকেলে করে টাঙ্গাইল শহরে গিয়ে নিখোঁজ হন। পরদিন শামীমের মা আছিয়া খাতুন টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

ওই ঘটনায় ২০১৩ সালের ৯ জুলাই নিখোঁজ মামুনের বাবা টাঙ্গাইল আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করলে তদন্ত করে ওই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর মামলাটি তালিকাভুক্ত করে পুলিশ।

পরে এ মামলায় গ্রেপ্তার খন্দকার জাহিদ, শাহাদত হোসেন ও হিরন মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তাদের জবানবন্দিতে আওয়ামী লীগ নেতা আমানুর রহমান খান রানার নাম আসে।

গ্রেপ্তার আসামিরা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, রানার নির্দেশেই যুবলীগ নেতা শামীম ও মামুনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।