বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের বাধাহীন প্রবেশ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে ডিআরইউ।
Published : 26 Apr 2024, 11:27 PM
বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মাধ্যমে সংবাদকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে ‘অভূতপূর্ব প্রতিবন্ধকতা’ তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মনে রাখতে হবে, তারা জনস্বার্থের সুরক্ষার ভূমিকা পালনের কথা, ঋণখেলাপি আর ব্যাংকিং খাতের সংকটের জন্য দায়ী মহলের নয়।”
সংবাদকর্মীরা বলছেন, ব্যাংক খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি, ঋণ কেলেঙ্কারি, দুর্বল ব্যাংকের মার্জার, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকদের আমানতের টাকা না পাওয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের মধ্যে গভর্নরের নির্দেশে মাস খানেক আগে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এর প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত অর্ধ শতাধিক প্রতিবেদক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জমান বলেন, ‘‘খেলাপি ঋণ, আর্থিক প্রতারণা ও জালিয়াতি এবং সার্বিক সুশাসনের অভাবসহ নানাবিধ সংকটে ব্যাংকিং খাত যখন জর্জরিত তখন তথ্যের অবাধ প্রবাহ বন্ধের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্ব সবার কাছে কী বার্তা দিতে চান?’’
‘‘কিংবা এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক কী অর্জন করতে চায়? তবে কি খাদের কিনারায় উপনীত ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিজেদের ব্যর্থতার তথ্য গোপন করতেই এই উদ্যোগ? নাকি যারা ঋণখেলাপি ও জালিয়াতিসহ এ খাতের সংকটের জন্য দায়ী-তাদের স্বার্থ সুরক্ষার প্রয়াস এটি।’’
বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ সাংবাদিকদের
গত কয়েক বছরে আর্থিক খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারির যেসব তথ্য প্রকাশ্য হয়েছে, সেসব সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তবে কি ধরে নিতে হবে, বাংলাদেশ ব্যাংক এ খাতের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ঋণ খেলাপি, জালিয়াতি ও অর্থপাচারের মতো অপরাধী মহলের অব্যাহত সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে এবং চক্রটির হাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি ও নেতৃত্ব যে জিম্মি হয়ে পড়েছে, তা গোপন করতেই এহেন নিন্দনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।’’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেছেন, ‘‘সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সাংবাদিকরা ব্যাংকের নির্দিষ্ট অনুমতিপত্র (প্রবেশ পাস) নিয়ে শুধু মুখপাত্রের কাছে যেতে পারবেন। তবে কোনো কর্মকর্তা যদি সাংবাদিকদের পাস দেন, সেক্ষেত্রে তারা শুধু সেই কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন। তবে আগের মতো তারা অবাধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো বিভাগে প্রবেশ করতে পারবেন না।’’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জমান বলেন, “সমস্যার সমাধান না করে গভর্নর যে পাসনির্ভর ব্যবস্থা চালু করার কথা বলছেন, প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিচ্ছেন, তা আর যা-ই হোক, গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব, বিশেষ করে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাস্তবে অপ্রতিরোধ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপই শুধু নয়, বরং এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তাই সাংবাদিকদের সাক্ষাত প্রদানে বিরত থাকতে চাইবেন।
“কেননা সাক্ষাতের পর সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক প্রতিবেদন প্রকাশ করলে নির্দিষ্ট কর্মকর্তাকে যে প্রশাসনিক জবাবদিহির নামে হয়রানির মুখোমুখি হতে হবে, তা না বললেও চলে।”
সংবাদকর্মীরা যাতে অবাধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারে সেজন্য অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে টিআইবি।
ডিআরইউয়ের নিন্দা
বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন সংবাদকর্মীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা রির্পোটার্স ইউনিটি-ডিআরআই।
সংবাদকর্মীদের সংগঠনটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “সাংবাদিকরা সবসময় অবাধে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদ প্রকাশ করে আসছে। হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করা উদ্দেশ্যমূলক, অনভিপ্রেত এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি।
“এর ফলে ব্যাংকিং খাত নিয়ে ভুল রিপোর্টিং হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে, যা কোন পক্ষেরই কাম্য নয়।”
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের বাধাহীন প্রবেশ নিশ্চিতের দাবি জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।