২০১২ সাল থেকে ১৮ এপ্রিল ফরেন সার্ভিস দিবস পালন করা হয়।
Published : 18 Apr 2025, 07:49 PM
প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিদেশ গিয়ে যেসব সমস্যায় পড়েন, তার সিংহভাগই দেশের মাটি থেকে ‘তৈরি করে’ পাঠানো বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
শুক্রবার ‘ফরেন সার্ভিস দিবসের’ এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা যেসব কর্মী বিদেশে পাঠাই, তাদের ৮০ শতাংশ সমস্যা আমরা ঢাকা থেকে তৈরি করে পাঠাই। ২০ শতাংশ সমস্যা তৈরি হয় যাওয়ার পরে। কিন্তু সেই ১০০ শতাংশ সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব কিন্তু আমার মিশনগুলোর ওপর এসে পড়ে।
“অত্যন্ত স্বল্প লোকবল দিয়ে, আমার যদি ৫০ জন লোক থাকে সৌদি আরবে, আমি কী করে ১০ লাখ সমস্যা সমাধান করব? কাজেই, সমস্যাটা যেন কম হয়, সেটা ঢাকা থেকে শুরু করতে হবে।”
অনুষ্ঠানটি হয় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে। সেখানে বাংলাদেশের বিদেশি মিশনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন তৌহিদ হোসেন।
সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “আমি আমার সহকর্মীদেরকে বলব, যে লোকটা আপনাদের কাছে সহায়তার জন্য আসে, সে কিন্তু শখ করে আসে না।
“কিছু লোকজন সমস্যা সৃষ্টি করার জন্য এলেও বেশির ভাগ লোক আসে অত্যন্ত দুরবস্থার মধ্যে পড়ে। আপনাদেরকে আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে, সেই লোকটা যেন সহায়তাটা পায়।”
মিশনগুলোতে লোকবল বাড়ানোর পরিকল্পনায় উপদেষ্টা পরিষদের সায় থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের সম্পদের অভাব, আমাদের লোকবলের অভাব। ২০ লাখ থেকে এক কোটিতে উঠেছে আমাদের প্রবাসীর সংখ্যা। আমাদের লোকবল কতটুকু বাড়াতে পেরেছি আমাদের মিশনগুলোতে!”
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশি কূটনীতিকদের সাহসী ও গৌরবময় অবদানের স্মরণে ২০১২ সাল থেকে ১৮ এপ্রিল ফরেন সার্ভিস দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
১৯৭১ সালের এই দিনে কলকাতায় তৎকালীন উপ হাই কমিশনার এম হোসেন আলীর নেতৃত্বে সেখানকার ৬৫ জন বাংলাদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসকর্মী পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনের কার্যভার ত্যাগ করেন।
সেদিন পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম দূতাবাস প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবেই মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ কূটনৈতিক ফ্রন্ট যাত্রা শুরু করে।
পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশে পাকিস্তান মিশনের অনেক বাঙালি কর্মকর্তা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। কেউ কেউ মুজিবনগর সরকারের কাজে যুক্ত হন, অন্যরা বিদেশের মাটিতে জনমত গড়ে তোলেন।
এর ঠিক একদিন আগে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহাকুমার বৈদ্যনাথতলার আম বাগানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে।
একাত্তরের ১৮ এপ্রিল কূটনীতিকদের ওই বিদ্রোহের কারণে মুক্তিযুদ্ধে ভিন্নমাত্রা পাওয়ার কথা তুলে ধরে সাবেক রাষ্ট্রদূত তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের প্রতি কূটনীতিকদের আনুগত্য প্রকাশ মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে অন্যরকম মাত্রা পেয়েছিল। সারা বিশ্ব বিষয়টাকে সেভাবেই দেখেছে।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন বলেন, এ মুহূর্তে রাজনৈতিক পরিবর্তন ও প্রশাসনিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে আমরা একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছি। এ প্রেক্ষাপটে আমাদের সবার দায়িত্ব আরও বেড়েছে।
“বিশ্বমঞ্চে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা করা এবং কূটনৈতিক পেশাদারত্ব ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।”
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। অন্যদের মধ্যে ফরেন সার্ভিস একাডেমির মহাপরিচালক ইকবাল আহমেদ বক্তব্য দেন।