Published : 25 Apr 2024, 08:44 PM
তথ্য সংগ্রহে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, যা চলছে মাস খানেক ধরে।
বৃহস্পতিবার এর প্রতিবাদে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত অর্ধ শতাধিক প্রতিবেদক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
কর্মসূচি চলাকালে অর্থনীতি বিটের প্রতিবেদকদের একটি সংগঠনের নেতৃত্বে দুই সাংবাদিক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করলেও বিষয়টির সুরাহা হয়নি। সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা আগের মতোই বহাল রয়েছে।
সংবাদকর্মীরা বলছেন, ব্যাংক খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি, ঋণ কেলেঙ্কারি, দুর্বল ব্যাংকের মার্জার, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকদের আমানতের টাকা না পাওয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের মধ্যে গভর্নরের নির্দেশে মাস খানেক আগে সাংবাদিক প্রবেশে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ অবস্থান কর্মসূচির মধ্যে নিষেধাজ্ঞার তুলে নেওয়ার দাবি জানাতে গভর্নরের সঙ্গে দেখা করতে যান অর্থনীতি বিষয়ক প্রতিবেদকদের সংগঠন ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
প্রায় ঘণ্টা খানেক আলোচনার পর প্রতিবেদকদের আগের মত বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধ প্রবেশের প্রস্তাবটি নাকচ করে দেন গভর্নর।
পরে রেফায়েত উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘অবাধ তথ্যপ্রবাহে বাধা হয় এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছি গর্ভনরকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সঠিক তথ্য আদান-প্রদানের অন্তরায়। আমরা গভর্নরকে বলেছি আগের মতো সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকে।’’
সাংবাদিক প্রবেশে গভর্নরের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সাংবাদিকরা ব্যাংকের নির্দিষ্ট অনুমতিপত্র (প্রবেশ পাস) নিয়ে শুধু মুখপাত্রের কাছে যেতে পারবেন। তবে কোনো কর্মকর্তা যদি সাংবাদিকদের পাস দেন, সেক্ষেত্রে তারা শুধু সেই কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন। তবে আগের মতো তারা অবাধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো বিভাগে প্রবেশ করতে পারবেন না।’’
আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব ভবনের নিচতলায় অভ্যর্থনা বিভাগে রাখা রেজিস্ট্রার বইয়ে পরিচয় লিখে সই করে বিশেষ ‘পাস’ নিয়ে ভেতরে যেতে পারতেন সংবাদকর্মীরা। অস্থায়ী এ পাস বের হওয়ার সময় ফেরত দিয়ে আসতে হত।
তবে গত এক মাস ধরে এই পাস ইস্যু করা বন্ধ রয়েছে গভর্নরের নির্দেশে। সাংবাদিকরা কোন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলছেন সেটিও নজরদারি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সাংবাদিকদের। চার ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক, পরিচালকসহ সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অলিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলতে।
এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর কয়েকদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। তখন প্রতিবাদের মুখে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিন বিকালে গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে ইআরএফ বিবৃতিতে বলেছে, গত ৫৩ বছর ধরে রিপোর্টাররা অবাধে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। এতে কখনও তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। হঠাৎ করে রিপোর্টারদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করায় ব্যাংকিং খাত নিয়ে ভুল রিপোর্টিং হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে, যা কোনোপক্ষেরই কাম্য নয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাধাহীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে করণীয় নির্ধারণে ইআরএফ এর সভাপতির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সংগঠনটি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলে বিবৃতিতে বলেছে।