Published : 31 Jul 2024, 12:03 AM
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সাভার ও নারায়ণগঞ্জে সহিংসতার মধ্যে গুলিতে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার দুই বাসিন্দা নিহত হয়েছেন।
একজন কাজ শেষে ফেরার পথে এবং অন্যজন কৌতূহলী হয়ে বাসার নিচে নেমে গুলিবিদ্ধ হন।
এদের মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সাদ মাহমুদ খান (১৩) সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের ধল্লা খানপাড়া গ্রামের মো. বাহাদুর খানের ছেলে। অপরজন মো. তুহিন আহমেদ (২৮) বাস করতেন তালেবপুর ইউনিয়নে। তিনি এ ইউনিয়নের ইসলামনগর গ্রামের শেখ বুদ্ধের মেয়ের জামাই। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুরে, বাবার নাম মো. সাইদুল ইসলাম।
শিশু সাদ মাহমুদের বাবা বাহাদুর খান বলেন, “সাভারের যাবালে নূর দাখিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল সাদ। ২০ জুলাই বাসার ছাদে ফুফাতো ভাই হাসিবুলের (১৩) সঙ্গে খেলা করার সময় সাভার নিউ মার্কেটের দিকে হঠাৎ ধোঁয়া দেখতে পায়। পরে কৌতূহলী হয়ে বাসার নিচে রাস্তায় নামে। তখন সেখানে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ হচ্ছিল। এ সময় পায়ে গুলি লেগে সাদ মাহমুদ ঘটনাস্থলেই পড়ে যায়।
“পথচারীরা ধরাধরি করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। এ মৃত্যুর জন্য পুলিশ দায়ী। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দাবি জানাই।”
বয়সে ছোট সাদ আন্দোলনের কিছু না বোঝার কথা তুলে ধরে তার বোন তাসলিমা নাজনীন বলেন, “সাদের বয়স কম। ওই দিন বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ধোঁয়া দেখে বাসার নিচে নামার পরই তার গায়ে গুলি লাগে। এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই আমরা।”
ধল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, “এরকম মৃত্যু কারো কাম্য না। এটা আসলেই দুঃখজনক। আমি তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।”
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জে নিহত তুহিন আহমেদের শ্যালক (স্ত্রীর চাচাতো ভাই) মো. সুজন শেখ বলেন, “নারায়ণগঞ্জে রাজমিস্ত্রির কাজ শেষে তুহিন আহমেদ বাসায় ফেরার পথে ১৮ জুলাই চিটাগাং রোড ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কাছে পেটে গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখান থেকে বিষয়টি স্ত্রী রিয়া আক্তার (২৪) ও পরিবারকে জানানো হয়। পরে তুহিনকে অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাইরে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেন তার সহকর্মী।”
সুজন শেখ বলেন, “বাড়িতে এনে অবস্থার অবনতি হলে ১৯ জুলাই সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তুহিনকে। সেখানে একটি অপারেশনও হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ জুলাই সাড়ে ১১টার দিকে তিনি মারা যান।
“পরে তার মরদেহ সিংগাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইসলামনগর কবরস্থানে জানাজা শেষে দাফন করা হয়।”
তুহিনের স্ত্রী রিয়া আক্তার বলেন, তার স্বামী রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। তিনি কোনো আন্দোলনে যাননি।
আরও পড়ুন:
পিবিআইয়ের পরিদর্শক মাসুদের 'শরীরজুড়ে ছিল কোপ আর রডের আঘাত'
'কী দোষ ছিল আমার ছেলের? সে তো হাসপাতালে ডিউটিতে যাচ্ছিল'
জিল্লুরকে 'বড় অফিসার' বানানো স্বপ্নই থেকে গেল বাবা-মায়ের
'যৌন হেনস্তা' করে, লাইটার দিয়ে মুখ পুড়িয়ে দেয়: নারী সাংবাদিক
'বাবা ওঠো, আমি আম খাব': কবরের সামনে ৩ বছরের ইসরাতের আকুতি
স্বামীকে হারিয়ে ছেলের জন্য চাকরি চাইছেন গণির স্ত্রী
মানুষ মানুষকে এভাবে মারতে পারে? প্রশ্ন জুয়েলের বাবার
'লাঠি ফেলে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সেলফি', তারপরই হামলা, সিঙ্গাপুরে কেম
'কী অপরাধে কারা এমনে আমার মেয়েটাকে মারল'
একমাত্র উপার্জনক্ষম তাজুলকে হারিয়ে অসহায় পরিবার
'কতই না কষ্ট প্যায়ে আমার কলিজার টুকরা মারা গেছে'
নিস্তব্ধ রুদ্রদের বাড়ি, নির্বাক বাবা-মা
'বাবা, তোমার মনের আশা পূরণ করতে পারলাম না, মাফ করে দিও'
'আর কোনো বাবা-মায়ের কোল যেন এভাবে খালি না হয়
'তিন শিশুকে নিয়ে আমি কোথায় দাঁড়াব, এখন কে ওদের দেখবে?'
কোটা: সাঈদের পরিবারকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সহায়তা
কোটা: 'ও ভাইও হামাক এনা বোন কয়া ডাকো রে', সাঈদের বোনের আহাজারি
নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট কার্যালয়: 'ডাকাতি হইলেও তো এমন হয় না'