Published : 28 Jul 2024, 12:28 PM
শান্ত স্বভাবের রুদ্র সেন রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে যায়নি কখনও। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল সে একদিন প্রকৌশলী হয়ে ফিরবে। রুদ্র ফিরেছে ঠিকই তবে লাশ হয়ে। ছেলে ঘরে ফেরার পানে চেয়ে থাকা চোখে এখন একরাশ বেদনা;বাড়িজুরে কেবলই হাহাকার।
“রুদ্র একেবারেই যে চলে যাবে আমরা তা ভাবতেই পারছি না।” বলে ডুকরে কেঁদে ওঠেন ভাইকে চিরতরে হারিয়ে ফেলা বড় বোন সুস্মিতা সেন।
রুদ্র শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর সদর উপজেলার পাহাড়পুরে। রুদ্র থাকতেন, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সুরমা আবাসিক এলাকায়।
অবসরে যাওয়া কলেজ শিক্ষক সুবীর সেন ও শিখা বণিকের দুই সন্তানের মধ্যে রুদ্র ছিলেন ছোট। বড় বোন সুস্মিতা হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যিালয়ের ডক্টর অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন।
ভাই হারানোর শোকে কাতর সুস্মিতা বলছিলেন, “রুদ্র ছিল শান্ত প্রকৃতির। সে কোনোদিন কোনো রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে যায় নাই। মা-বাবা স্বপ্ন বুনেছিলেন তাদের ছেলে প্রকৌশলী হয়ে ফিরবে। কিন্তু ছেলের লাশ পেয়ে তারা নির্বাক হয়ে গেছে। আমাদের পুরো বাড়িটাই এখন স্তব্ধ, ফাঁকা হয়ে আছে।
“কি আর বলব ভাই, রুদ্র যে নেই, তা কি পূরণ করা সম্ভব।?”
কী ঘটেছিল?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে রুদ্র আহত হয়।
“পরে সহপাঠীদের সঙ্গে রুদ্র সন্ধ্যায় নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বের হয়। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুঁড়তে থাকে। জীবন বাঁচাতে ভেলায় করে খাল পার হতে গিয়ে পানিতে পড়ে মৃত্যু হয় তার।”
গালিব বলেন, “রুদ্র সেন শহীদ হয়েছে। আমরা তার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নামকরণ করেছি-‘শহীদ রুদ্র তোরণ’।”
কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. তামেজ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রুদ্রের ফুফার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা বলেছি, কোনোভাবে তার পরিবারকে সহযোগিতা করা যায় কি-না, বিভাগের শিক্ষকেরা মিটিং করে সেটা দেখব।”