Published : 30 Jul 2024, 12:57 AM
কামাল হোসেনের লাশ যখন ঝালকাঠি সদরের বাসন্ডা ইউনিয়নের আগরবাড়ি গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছায় তখন চারপাশে আঁধার নেমেছে। প্রকৃতিতে নেমে আসা স্তব্ধতা ভাঙে স্বজনদের আহাজারিতে।
কামালের তিন বছরের মেয়ে ইসরাত বোঝে না তার বাবা আর কোনোদিনই ঘুম থেকে উঠবেন না। তাই তো বাবার মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে মামা মো. মহিবুল্লাহকে বার বার বলছিল- ‘বাবা ওঠে না কেন, আমি আম খাব। আমাকে আম দিতে বল।’
সে দৃশ্য দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি সেখানে উপস্থিত কামালের আত্মীয়-স্বজন আর এলাকাবাসী। কামালের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না তারা।
কামালের শ্যালক মহিবুল্লাহ বলছিলেন, ঢাকায় বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’য়ের একজন পরিচালকের গাড়ি চালাতেন ৩৮ বছর বয়সী তার ভগ্নিপতি। থাকতেন ঢাকার বাড্ডার শাহজাদপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসায়।
আরও পড়ুন-
স্বামীকে হারিয়ে ছেলের জন্য চাকরি চাইছেন গণির স্ত্রী
মানুষ মানুষকে এভাবে মারতে পারে? প্রশ্ন জুয়েলের বাবার
তিনি বলেন, “২০ জুলাই সকালে নাস্তা খেতে ঘর থেকে বের হয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে কামাল মারা যায়। ২২ জুলাই ভোরে আমাদের বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।”
২০০৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠি সদরের বাসন্ডা ইউনিয়নের আগরবাড়ি গ্রামের ইসমাইল হাওলাদারের বড় মেয়ে সাদিয়া আক্তার রানীকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন কামাল। ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে একই প্রতিষ্ঠানের গাড়ির চালক ছিলেন তিন সন্তানের এ জনক।
দীর্ঘ সময় ধরে তিনি ঢাকায় থাকলেও তার স্ত্রী সাদিয়া দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকেন ঝালকাঠির শহরের কৃষ্ণকাঠি এলাকায়।
সোমবার সকালে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কামালের অফিসের পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে এখনও তাকে খুঁজে ফিরছে তার অবুঝ মেয়ে ইসরাত। বাবার কবরের কাছে গিয়ে বলে, “বাবা ওঠ, আমার জন্য আম নিয়ে এসো, আমি আম খাব।”
কামালের বড় ছেলে সামিউল ইসলামের বয়স ১৩ বছর। সে স্থানীয় স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। আর মেঝ ছেলে সাড়ে চার বছর বয়সী আব্দুল্লাহ স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে প্লে-গ্রুপের ছাত্র।
মহিবুল্লাহ জানান, তার ভগ্নিপতি দুই-তিন মাস পর পর বাড়িতে আসতেন। তখন সন্তানদের জন্য ফলসহ বিভিন্ন খাবার আনতেন। কোটা আন্দোলনের পরিস্থিতি ভালো হলেই বাড়ি আসার কথা ছিলো। কিন্তু ফিরলেন লাশ হয়ে; সাবাইকে অথৈ সাগরে ভাসিয়ে গেলেন।
আরও পড়ুন-
'লাঠি ফেলে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সেলফি', তারপরই হামলা, সিঙ্গাপুরে কেম
'কী অপরাধে কারা এমনে আমার মেয়েটাকে মারল'
তিনি বলেন, “তিন বছরের ইসরাত এখনও বোঝে না তাদের বাবা আর ফিরবেন না। তাই ঘুমিয়ে আছে ভেবে প্রতিদিন কবরের সামনে যায় বাবার ঘুম ভাঙাতে। আর বড় ছেলে সামিউল তো বাবাকে হারিয়ে শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।”
মহিবুল্লাহর সঙ্গে কথা শেষ করে সামিউলের সঙ্গে আলাপ শুরু হয়। বাবার প্রসঙ্গ আসতেই চোখে জল আসে তার।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ১৩ বছরের এ কিশোর বলেন, “বাবার অনেক স্বপ্ন ছিলো আমি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হব। কিন্তু বাবা আর নেই, আমার লেখাপড়ার খরচ এখন কে দেবে।”
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্বামীকে হারিয়ে শোকে পাথর কামালের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার রানী। বাবাহারা এই তিন সন্তানকে নিয়ে কিভাবে আগামী দিনগুলো পাড়ি দেবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না।
‘আমার সন্তানরা আজ বাবাহারা’- বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সাদিয়া।
তারপর চোখ মুছতে মুছতে বলেন, “আমি তো আমার ছেলে-মেয়েদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। ওদের নিয়ে আমি এখন কোথায় দাঁড়াবো?”
আরও পড়ুন-
একমাত্র উপার্জনক্ষম তাজুলকে হারিয়ে অসহায় পরিবার
'কতই না কষ্ট প্যায়ে আমার কলিজার টুকরা মারা গেছে'
নিস্তব্ধ রুদ্রদের বাড়ি, নির্বাক বাবা-মা
'বাবা, তোমার মনের আশা পূরণ করতে পারলাম না, মাফ করে দিও'
'আর কোনো বাবা-মায়ের কোল যেন এভাবে খালি না হয়
'তিন শিশুকে নিয়ে আমি কোথায় দাঁড়াব, এখন কে ওদের দেখবে?'
কোটা: সাঈদের পরিবারকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সহায়তা
কোটা: 'ও ভাইও হামাক এনা বোন কয়া ডাকো রে', সাঈদের বোনের আহাজারি
নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট কার্যালয়: 'ডাকাতি হইলেও তো এমন হয় না'
'লাঠি ফেলে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সেলফি', তারপরই হামলা, সিঙ্গাপুরে কেম