Published : 25 Jul 2024, 11:06 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতার মধ্যে নিহত কামাল হোসেনের দুই ছেলে এক মেয়ে। হঠাৎ স্বামীকে হারিয়ে তার স্ত্রী সাদিয়া বেগম(রানু) এখন দিশেহারা।
কাঁদতে কাঁদতে এই নারীর প্রশ্ন, “আমার তিন ছেলে মেয়ে এতিম হয়ে গেল! আমি ওদের নিয়ে কোথায় দাঁড়াব, এখন কে ওদের দেখবে?”
সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অকূল পাথারে পড়া সাদিয়া আরও বলেন, “আমাদের সংসার চালানোর মত আর কেউ রইলো না। বাকি দিনগুলো কীভাবে চলবে কিছুই ভেবে উঠতে পারছি না।”
ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের বালকদিয়া গ্রামের মুনসুর হাওলাদারের ছেলে কামাল হোসেন ওরফে সবুজ (৩৮) ছিলেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের গাড়িচালক।
গত শনিবার সকালে বাড্ডার শাহজাদপুর এলাকার ভাড়া বাসা থেকে নাশতা খেতে বের হয়েছিলেন তিনি। তখন ওই এলাকায় কোটা আন্দোলন ঘিরে চলা সহিংসতার মধ্যে পড়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান কামাল।
খবর পেয়ে ঢাকা থেকে তার মরদেহ ঝালকাঠি নিয়ে যান স্ত্রী সাদিয়া বেগমের ভাই রিপন হাওলাদার।
রিপন জানান, কামাল ঢাকায় চ্যানেল আইয়ের গাড়ি চালাতেন আর ঝালকাঠি শহরে ভাড়া করা বাসায় তিন সন্তান নিয়ে থাকতেন স্ত্রী সাদিয়া। ঘটনার পর থেকেই সাদিয়া ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বাবার বাড়ি শহরতলীর আগরবাড়ি গ্রামে রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, কামালের তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে সামিউল ইসলাম (১৩) ঝালকাঠি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। এর পরের ছেলেটির বয়স সাত ও সবার ছোট মেয়েটির বয়স পাঁচ বছর।
রিপন বলেন, “আমার ভাগ্নে-ভাগ্নিরা বাবাহারা আর বোনটি এখন বিধবা হয়ে গেল। ওদের কান্না আর সহ্য করতে পারছি না।”
সোমবার সকালে সদর উপজেলার আগরবাড়ি এলাকায় শ্বশুরবাড়ি এলাকায় কামাল হোসেনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান রিপন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১৬ জুলাই দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারী এবং সরকার দলীয় সংগঠন ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
পরদিন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোটা সংস্কারের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে খুনের দায়ে জড়িতদের বিচার ও সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন' কর্মসূচি ঘোষণা আসে আন্দোলনকারীদের পক্ষে।
এই ‘শাটডাউন' কর্মসূচির প্রথম দিন থেকে সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। টানা সহিংসতায় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সারাদেশে কারফিউ ঘোষণা করে সরকার। পরে কমে আসে সংহিসতা।