Published : 05 May 2025, 09:22 PM
ফিলিপিনো কার্ডিনাল লুইস আন্তোনিও তাগলের সহজাত হাসি, সহজসাধ্য ভঙ্গি আর সাবলীল কথার জন্য তাকে কখনও কখনও ডাকা হয় ‘এশিয়ান ফ্রান্সিস’ নামে।
পেছনে আছে আরও কারণ। যেমন: আর্জেন্টিনার প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের মতো তাগলেও এসেছেন ইউরোপের ক্যাথলিক চার্চের ঐতিহ্যবাহী প্রভাব বলয়ের বাইরে অনেক দূরের এক দেশ থেকে।
একজন বহিরাগত হিসাবে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই রোমে তার আগমন। আগামী ৭ মে-তে নতুন পোপ নির্বাচন করতে গোপন কনক্লেভের জন্য সমবেত হচ্ছেন কার্ডিনালরা।
তাদের কারও কারও বিশ্বাস প্রায়ত পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকার কারণে তিনি পোপ হওয়ার দৌড়ে সামনের সারিতে উঠে আসতে পারেন।
বুকমেকারদের মতে, তাগলে এরই মধ্যে পছন্দের সারিতে দুই নম্বরে উঠে এসেছেন। তার আগে এ তালিকায় আছেন ভ্যাটিকানের কার্ডিনাল পিয়েত্রো প্যারোলিন।
নতুন পোপ হওয়ার সংক্ষিপ্ত তালিকায় যারা তাগলেকে রেখেছেন তারা বলছেন, কার্ডিনালরা যদি নতুন পোপ হিসাবে এমন কাউকে বেছে নিতে চান, যিনি পোপ ফ্রান্সিসের প্রগতিশীল ধারাই বজায় রাখবেন তাহলে লুইস অ্যান্তোনিও তাগলেই হবেন ফ্রান্সিসের সফল উত্তরসূরি।
তাগলেকে বেছে নেওয়ার মানে হবে ক্যাথলিকদের সামনে এ বার্তাই দেওয়া যে, চার্চ আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে চায়। তাই প্রয়াত পোপের সংস্কার গুটিয়ে নিতে পারে এমন কাউকে বেছে নেওয়া হয়নি।
তাগলে নির্বাচিত হলে, ইতিহাসে প্রথম এশিয়া থেকে কেউ পোপ হবেন। তাগলের সাবেক এক শিক্ষার্থী তার সম্পর্কে বলেছেন, “গরিবদের জন্য ভালবাসা এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে তিনি (তাগলে) সত্যিই পোপ ফ্রান্সিসের মতো।”
ম্যানিলার সাবেক আর্চবিশপ ৬৭ বছর বয়সী তাগলে দেখতে তার বয়সের চেয়েও তরুণ। তার ডাকনাম ‘চিতো’। এ নামের ডাকই তার পছন্দ।
তাগলে গত পাঁচ বছর ধরে ভ্যাটিকানের ‘ডিকাস্টারি ফর এভানজেলাইজেশন’-এর প্রধান, যা চার্চের মিশনারি কাজকর্ম দেখভাল করে। এই দায়িত্বের সুবাদে উন্নয়নশীল দেশের জাতীয় গির্জাগুলোর ওপর তার বিশাল প্রভাব রয়েছে।
তাগলে এর আগে ছিলেন ম্যানিলার আর্চবিশপ, আর তার আগে ফিলিপাইনের ইমুস শহরের বিশপ ছিলেন। খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ফিলিপিন্সে ডায়োসিস পরিচালনায় তিনি যাজকীয় অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন।
২০২০ সালে তাগলেকে ভ্যাটিকানে নিয়ে যান তৎকালীন পোপ ফ্রান্সিস। ফলে তার অভিজ্ঞতায় যোগ হয় আরেকটি পালক। সেই অভিজ্ঞতাই পোপ নির্বাচনে প্রার্থী হতে তাগলের জন্য সহায়ক হয়েছে।
তাগলের রোমে যাওয়ার সমালোচনা করেছিলেন ফিলিপিন্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে। তিনি বলেছিলেন, তাগলেকে ম্যানিলা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার কারণে।
তবে ফিলিপিন্সের বিশপ সম্মেলন এসব অভিযোগকে উদ্ভট বলে উড়িয়ে দেয়। ২০২৪ সালে কার্ডিনাল হওয়া পাবলো ভার্জিলিও ডেভিড বলেছিলেন, “এটি একেবারেই অবিশ্বাস্য রকমের উদ্ভট দাবি।”
তাগলেকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন অনেক কার্ডিনাল। চার্চ লিডারদের দৃষ্টিতে এশিয়া এখন ক্যাথলিক চার্চের উদীয়মান অঞ্চল। তাই অনেকেই এশিয়া থেকে একজন পোপ দেখতে চাইতে পারেন। আর তরুণরাও তাগলের মাঝে স্বস্তি খুঁজে পাবে।
২০১৪ সালে যখন পোপ ফ্রান্সিস ফিলিপিন্স সফর করেছিলেন, তাগলে ছিলেন তার আয়োজক। সেই সফর পোপীয় ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জমায়েত ঘটায়; একটি জমায়েতে অংশ নিয়েছিল প্রায় ৭০ লাখ মানুষ।
তাগলে কথা বলেন ইতালিয়ান, ইংরেজি, স্প্যানিশ ও তাগালগ ভাষায়। তিনি ভ্যাটিকানের জটিল প্রশাসনিক কাঠামোয় পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
তবে তাগলের একটি দুর্বল দিক হতে পারে তিন বছর আগেকার একটি ব্যবস্থাপনা কেলেঙ্কারি।
২০২২ সালে তাগলে ছিলেন ১৬২টি ক্যাথলিক ত্রাণ, উন্নয়ন ও সমাজ সেবা সংগঠনের ভ্যাটিকান-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক কনফেডারেশন ‘ক্যারিতাস ইন্টারন্যাশনালিসের’ সম্মানসূচক প্রধান। কেলেঙ্কারির কারণে তাগলেকে এই পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন ফ্রান্সিস।
‘ক্যারিতাস ইন্টারন্যাশনালিস’ এর শীর্ষ ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে বুলিং এর অভিযোগ ওঠায় পোপ ফ্রান্সিস এই ফেডারেশনের পুরো নেতৃত্বকেই বরখাস্ত করেছিলেন। যদিও তাগলের ভূমিকা ছিল কেবল প্রতীকী; তিনি দৈনন্দিন কাজকর্মে জড়িত ছিলেন না, এবং কর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন সম্মানিত।
ধর্মতত্ত্ববিদ হিসাবেও বিশ্বব্যাপী তাগলের সুনাম আছে। নব্বইয়ের দশকে জার্মান কার্ডিনাল জোসেফ রাতজিঙ্গারের (পরবর্তীতে পোপ বেনেডিক্ট ষোড়শ) নেতৃত্বে থাকা আন্তর্জাতিক আধ্যাত্মিক কমিশনের সদস্য ছিলেন তিনি।
তাগলের এক সময়ের শিক্ষক রেভ. জোসেফ কোমনচাক বলেন, “চিতো ছিল আমার ৪৫ বছরের শিক্ষকতার সেরা ছাত্রদের একজন।”
তার এক সহপাঠী রেভ. রবার্ট রেয়েস বলেন, “তার জীবনযাপন খুবই সাধারণ। ২০০১ সালে যখন তিনি বিশপ হলেন, তখন নিজের কোনও গাড়িও ছিল না।”
অনেক সংগঠনের ক্ষেত্রে ৬৭ বছর বয়স পড়ন্ত কাল হলেও ভ্যাটিকানে এখনও এই বয়সকে তুলনামূলকভাবে ‘তরুণ’ বলেই গণ্য করা হয়।
কারণ, কার্ডিনালরা দীর্ঘমেয়াদী পোপ চান না। ফলে সবমিলিয়ে তাগলে এই সময়ে হয়ে উঠেছেন পোপ পদে সম্ভাবনাময় একজন প্রার্থী।