Published : 04 May 2025, 11:55 AM
গাজা নিয়ে আলোচনায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অন্যতম মধ্যস্থতাকারী কাতারকে ‘উভয় পক্ষে খেলা বন্ধ করতে’ আহ্বান জানিয়েছে তেল আবিব।
শনিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কাতারের উদ্দেশ্যে বলেছে, “দ্বিমুখী বক্তব্যের মাধ্যমে উভয় পক্ষে খেলা বন্ধ করুন এবং সিদ্ধান্ত নিন কোন পক্ষে থাকবেন, সভ্যতার পক্ষে নাকি হামাসের পক্ষে।”
কাতার তেল আবিবের এ বক্তব্যকে ‘উসকানিমূলক’ অ্যাখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গাজায় যুদ্ধবিরতি পুনর্বহালে মিশর ও কাতারি মধ্যস্থতাকারীরা নানাভাবে চেষ্টা করলেও ইসরায়েল বা হামাস কেউই তাদের মূল দাবিগুলো থেকে পিছু হটার ব্যাপারে আগ্রহ তো দেখাচ্ছেই না, উল্টো সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থতার জন্য একে অপরকে দায়ী করছে।
গাজায় এখনও আটক ৫৯ জিম্মিকে ফেরত চাওয়া ইসরায়েল হামাসকে নিরস্ত্র করতে এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটির ভবিষ্যৎ সরকারব্যবস্থায় হামাস থাকবে না এমন নিশ্চয়তা চাইছে।
হামাস এসব শর্ত মানতে নারাজ। তারা দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের বিনিময়ে আটক জিম্মিদের একেবারে মুক্তি দিতে চাইছে।
“ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দেওয়া উসকানিমূলক বক্তব্য, যা রাজনৈতিক ও নৈতিক দায়িত্ববোধের ন্যূনতম মানদণ্ড থেকেও অনেক দূরে, তা জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করছে কাতার,” রোববার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে এমনটাই লেখেন কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি।
তিনি গাজা সংঘাতকে ‘সভ্যতা রক্ষার লড়াই’ হিসেবে উপস্থাপন করার সমালোচনা করেন এবং এই বক্তব্যের সঙ্গে ইতিহাসের সেই শাসনব্যবস্থাগুলোর তুলনা করেন, যারা ‘বেসামরিকদের ওপর করা অপরাধকে বৈধতা দিতে মিথ্যা ভাষ্যের আশ্রয় নিত।’
মধ্যস্থতা প্রক্রিয়াকে অন্যায়ভাবে সমালোচনা ও এর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে মন্তব্য করে আল-আনসারি যে ১৩৮ জিম্মি মুক্তি পেয়েছে তারা কি সামরিক অভিযান নাকি মধ্যস্থতায় মুক্তি পেয়েছে সেই প্রশ্নও তোলেন।
তিনি গাজায় শ্বাসরুদ্ধকর অবরোধ, বাসিন্দাদের পরিকল্পিতভাবে অনাহারে রাখা, ওষুধ ও আশ্রয় পেতে না দেওয়া এবং মানবিক সাহায্যকে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে সেখানে যে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সে কথাও উল্লেখ করেছেন।
শুক্রবার ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা গাজা ভূখণ্ডে বর্ধিত অভিযান পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। যুদ্ধ বন্ধ কিংবা হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় যে কোনো অগ্রগতি নেই, তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানিয়েছে তারা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে হামাস হাজারের বেশি লোককে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে বলে দাবি তেল আবিবের। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় সর্বাত্মক অভিযানে নামে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের টানা বিমান হামলা ও অভিযান ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটির ৫০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে ভাষ্য হামাস-পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের।
ইসরায়েলি অবরোধের কারণে যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ডটিতে এখনও ত্রাণও পৌঁছানো যাচ্ছে না, এই পরিস্থিতি বজায় থাকলে গাজায় শিগগিরই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।