Published : 04 May 2025, 06:14 PM
“হামার স্বামীকে হামি কী জবাব দিব, বলেছিল গরু দেখে রাখতে। কেন হামার এত বড় সর্বনাশ হলো।”
কিমারা বেগমের কান্না যেন কিছুতেই থামছে না। তার গোয়ালের তিনটি গরু একসঙ্গে মারা গেছে। এই গরুগুলোই ছিল পরিবারের সম্বল।
প্রতিদিনের মত রোববার সকাল ৯টার দিকে সুস্থ সবল তিনটি গরুকে ঘাস খেতে দিয়েছিলেন। সেই ঘাস তোলা হয়েছিল মাঠ থেকে। বেলা ১১টার দিকে দেখেন তিনটি গরু মরে পড়ে আছে।
এ দৃশ্য দেখে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেন কিমারা। তার কান্না শুনে আশপাশের মানুষ এগিয়ে আসে। এভাবে তিনটি গরু মারা যাওয়ায় তারাও হতভম্ব হয়ে যান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। কিমারা বেগম গ্রামের সাদিকুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার সময় সাদিকুল ক্ষেতে ধান কাটতে গিয়েছিলেন।
কিমারা জানান, তিনটি গাভীই সন্তানসম্ভবা ছিল। স্বামী অন্য কাজে ব্যস্ত থাকে বিধায় তিনি ও তার মেয়ে গরু তিনটি যত্নআত্তি করেন। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে দুটি গাভীর বাচ্চা হওয়ার কথা। অপরটি সাত মাসের গর্ভবতী।
তিনটি গরু নিয়েই অনেক স্বপ্ন ছিল কিমারার। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেছে বলে আফসোস করছিলেন তিনি।
তিনটি গরু একসঙ্গে মারা গেছে শুনে দেখতে এসেছিলেন গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, “গাই গরু পোষে, দুধ বিক্রি করে, খুব কষ্ট করে সংসার চালায় সাদিকুল ও কিমারা দম্পতি। এই গরুর দাম লাগতো তিন লাখ টাকার উপরে। পরিবারটির খুব ক্ষতি হল।”
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন শিবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন।
তিনটি গরুর একসঙ্গে মৃত্যুর কারণে হিসেবে তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এ ধরনের কচি ঘাসে প্রচুর নাইট্রেট জমে থাকে। অধিক পরিমাণে সেই ঘাস খেলে ‘নাইট্রেট পয়জনিং’ হয়। এতে গরু মারা যেতে পারে।
তিনি বলেন, “ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে । পরীক্ষার পর বিস্তারিত জানা যাবে।”
তিনটি গরুর মারা যাওয়ার খবর পেয়েছেন জানিয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, “খরার পর বৃষ্টি হলে কিছু কিছু ঘাস লকলকিয়ে বেড়ে যায়। কারণ, এই ঘাস তখন প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর ইউরিয়া জাতীয় সার পায়। এতে নাইট্রোজেনের আধিক্য থাকে।
“সেটা যখন গরু অধিক পরিমাণে খায় তখন গরুর ‘নাইট্রেড পয়জনিং’ হতে পারে এবং এ থেকে গরুর মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে।”
গরুর খামারি ও কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, “বৃষ্টির পর যে ঘাস দ্রুত লকলকিয়ে বেড়ে উঠে সেই ঘাস খুব বেশি গরুকে খেতে দেওয়া যাবে না।”