কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচার শুরু করেছেন সদ্যবিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু; এ সময় তিনি তার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা এবং প্রচার মাইক ভাঙচুরের অভিযোগ করেছেন।
Published : 28 May 2022, 02:02 PM
শুক্রবার পছন্দের প্রতীক ‘টেবিল ঘড়ি’ পেলেও শনিবার সকাল থেকে প্রচারে বের হন এই স্বতন্ত্র প্রার্থী। বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নানুয়া দিঘীরপাড়ে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।
দুইবারের মেয়র বলেন, “শুক্রবার গভীর রাতে নগরীর চকবাজার, কাপড়িয়াপট্টি, দেশওয়ালীপট্টি, রাজগঞ্জ ও কান্দিরপাড় এলাকায় আমার নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে মুখোশধারী কয়েকজন। এ ছাড়া রাতে প্রচার শেষে ফেরার পথে আমার প্রচার মাইক ভাঙচুর করা হয়েছে নগরীর টিক্কারচর এলাকায়।”
“বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। রিটার্নিং কর্মকর্তা আমাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন। আমি লিখিত অভিযোগ দিব।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নাবী চৌধুরী দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত ‘নৌকা’, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলামকে ‘হাতপাখা’, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার ‘ঘোড়া’ এবং কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি কামরুল আহসান বাবুল ‘হরিণ’ প্রতীকে মেয়র পদে লড়ছেন।
সাক্কু সকালে নগরীর কাপড়িয়াপট্টি, দেশওয়ালীপট্টি ও কান্দিরপাড় এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় উন্নয়ন অব্যাহত রাখার জন্য আবারও তাকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
স্বতন্ত্র এ প্রার্থী বলেন, “১০ বছর মেয়রের চেয়ারে ছিলাম। এরপরও মানুষের ভালোবাসা আমার জন্য কমেনি। কারণ, আমি মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করেছি। আশা করছি, নগরীর মানুষ এবারও আমাকে হতাশ করবেন না।”
কুমিল্লা সিটিতে সর্বশেষ ভোট হয়েছিল ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব নেওয়ার পর সে বছরের ১৭ মে প্রথম সভা হয়। তাদের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে চলতি বছরের ১৬ মে।
সিটি করপোরেশনে মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে এবার তা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়ে দেয় গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়া কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
দুটি পৌরসভা নিয়ে ২০১১ সালের জুলাই মাসে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর এ পর্যন্ত দুটি নির্বাচন হয়েছে। ১০ বছর আগে প্রথম নির্বাচন নির্দলীয় প্রতীকে হলেও ২০১৭ সালে দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচন হয়। দুই নির্বাচনেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়ী হয় বিএনপিনেতা সাক্কু।
১৯ মে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ার পর স্বতন্ত্রভাবে ভোটে লড়তে একদিকে যেমন দুই নেতাই পদত্যাগের ঘোষণা দেন; ঠিক তেমনি দল থেকে তাদের চিরতরে বহিষ্কারের ঘোষণাও আসে।
২০১২ সালে কুমিল্লার প্রথম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন প্রভাবশালী নেতা আফজল খান নিজে। সেবার তিনি বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কুর কাছে হেরে যান। সাক্কু ৬৫ হাজার ৫৭৭ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। আফজল খান পান ৩৬ হাজার ৪৭১ ভোট।
এরপর ২০১৭ সালে মেয়র পদে প্রার্থী হন আফজল খানের মেয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমা। সে নির্বাচনেও সাক্কু ধানের শীষ প্রতীকে ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীক নিয়ে সীমা পান ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট।
এবার আফজল পরিবারকে বাদ দিয়ে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অনুগত হিসেবে পরিচিত রিফাতকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করলে বেঁকে বসেন কুমিল্লার ব্যবসায়ী নেতা মাসুদ পারভেজ খান ইমরান। মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিলে ভোটের সমীকরণ জটিল হয়ে পড়ে। পরে অবশ্য কেন্দ্রী নেতাদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে তিনি লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরে দাঁড়ান।
নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন ও পুরুষ ভোটার এক লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুইজন।
আরও পড়ুন: