কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে, প্রার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে শহর। কোন দল থেকে কে মনোননয়ন পেতে যাচ্ছেন, সেই আলোচনাই এখন সর্বত্র।
Published : 11 May 2022, 10:21 AM
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৫ জুন হতে যাওয়া এই নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ যেমন বেড়েছে, তেমনি পিছিয়ে নেই বিএনপি নেতারাও। নিজ নিজ দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে কর্মী-সমর্থকরা মাঠ গরম রাখছেন।
আলোচনায় থাকা প্রার্থীদের মধ্যে আছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। প্রার্থী হতে আগ্রহী প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খানের ছেলে কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদ পারভেজ খান।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত
নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং শঙ্কার মধ্যে দলটির অনেক নেতাই স্বতন্ত্রভাবে ভোটে লড়াইয়ের কথা বলছেন।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন বর্তমান মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক
মনিরুল হক সাক্কু এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য কাউসার জামান বাপ্পি।
গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা
কুমিল্লা সিটিতে সর্বশেষ ভোট হয়েছিল ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৭ মে প্রথম সভা হয়। তাদের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে এ বছরের ১৬ মে।
সিটি করপোরেশনে মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে এবার তা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছিল গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়া কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম
সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে লড়তে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের আরফানুল হক রিফাতের নাম পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগরের সভাপতি ও কুমিল্লা সদরের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
তিনি বলেন, "রেজল্যুশন করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে আরফানুল হক রিফাতের নাম পাঠানো হবে। এটা দলীয় সিদ্ধান্ত, কারও একক সিদ্ধান্ত নয়। মহানগর আওয়ামী লীগ, ২৭ ওয়ার্ডের নেতৃত্ব, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ ও যুব মহিলা লীগ সর্বসম্মতিক্রমে মেয়র পদে দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে তার নাম প্রস্তাব করেছে।"
মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে শতভাগ আশাবাদের কথা জানিয়ে আরফানুল হক রিফাত বলেন, "আমি এখন দলের একক মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলের সব নেতাকর্মী আমাকে সমর্থক দিয়েছে। আশা করি, দল আমাকেই নৌকার মনোনয়ন দেবে। আমি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।"
মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান মিঠু
তবে তার ভাই মাসুদ পারভেজ খান ইমরান মনে করেন, গত দুটি নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পরিবারকে মূল্যায়ন করেছিলেন কিন্তু 'ষড়যন্ত্রের' কারণে জয় পাননি।
"আমি এবারও শতভাগ আশাবাদী, আমার পরিবারের ত্যাগের কথা বিবেচনা করে নেত্রী আমাকেই দলের মনোনয়ন দেবেন।"
মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিমের প্রত্যাশা 'দল' এবং 'প্রিয় নেত্রী' তাকে নগরবাসীর সেবা করার সুযোগ দেবেন।
বর্তমান মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু
অন্যদের তুলনায় নিজেকে যোগ্য প্রার্থী মনে করেন নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়ানো মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু।
"আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে আমি জীবন বাজি রেখে মাঠে ছিলাম। ২৩টি মামলার আসামি হয়েছি, সাত বারে ১৩ মাস জেল খেটেছি। এ ছাড়া তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সবাই আমার সঙ্গে আছে।“
জনগণ তাকে সেবক হিসেবেও দেখতে চায় বলে দাবি করেন এই নেতা।
ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপে থাকা কবিরুল ইসলাম শিকদার ও সাবেক ছাত্রনেতা কাজী ফারুক আহাম্মেদও দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদের কথা জানিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে।
কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার
এদিকে স্থানীয় সরকারে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। এ অবস্থায় দল নির্বাচনে না গেলে নাগরিক সমাজের ব্যানারে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু। এরই মধ্যে মাঠ গোছানোর কাজও শুরু করেছেন এই নেতা। তার পরিবারের সদস্যরাও ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
২০০৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে সাক্কু বিলুপ্ত কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেয়র ছিলেন। ২০১২ সালে কুমিল্লা সিটির করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে নাগরিক সমাজের ব্যানারে দাঁড়িয়ে নগরপিতা নির্বাচিত হন সাক্কু। সেবার তিনি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আফজল খানকে হারান। ২০১৭ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে আফজল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন সাক্কু।
নির্বাচন প্রসঙ্গে মেয়র সাক্কুর ভাষ্য, তিনি বিএনপি করলেও মেয়রের দায়িত্বে আছেন দুবার, সেজন্য তার কিছু 'ফলোয়ার'ও হয়েছে।
"বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও জনগণ যদি আমাকে চায়, তাহলে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেব। আমি এখনও মেয়রের পদে আছি। কুমিল্লার মানুষের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।"
মনোনয়ন প্রত্যাশী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য কাউসার জামান বাপ্পি জানান, দলীয় ব্যানারেও ভোটে দাঁড়ানোর ইচ্ছা আছে তার। আর দল ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান এই নেতা।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য কাউসার জামান বাপ্পির
কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, "বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে যাবে না, এটা প্রায় চূড়ান্ত। কিন্তু আমার কর্মী-সমর্থকরা আমাকে ধরেছে নির্বাচন করার জন্য।"
দলের নেতাকর্মীদের কথা ভেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান স্বেচ্ছাসেবক দলের এই নেতা।
প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসবাসের কুমিল্লা পৌরসভা ও সদর দক্ষিণ পৌরসভাকে একীভূত করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয় ২০১১ সালের ১০ জুলাই। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের আয়তন ৫৩ দশমিক শূন্য ৪ বর্গকিলোমিটার এবং ওয়ার্ড সংখ্যা ২৭।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কিছু তথ্য:
তফসিল ঘোষণা: ২৫ এপ্রিল
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ: ১৭ মে
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই: ১৯ মে
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ: ২৬ মে
প্রতীক বরাদ্দ: ২৭ মে
ভোট গ্রহণ: ১৫ জুন
মোট ভোটার: সংখ্যা ২ লাখ ৩২ হাজার ৬৩০ জন (২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত কুসিক নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিলো ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন।)
পুরুষ ভোটার: ১ লাখ ১৬ হাজার ১৯১
নারী ভোটার: ১ লাখ ১১ হাজার ৬০০ জন
তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার: ১ জন
সম্ভাব্য ১০৩ কেন্দ্রের ৬৪০টি বুথে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে।
আগামী ১৩ জুন প্রতিটি কেন্দ্রে মগ ভোটিংয়ের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
পুরনো খবর: