লালনের আগে এবং পরে সমাজবিকাশ ও সংস্কারে অনেক মনীষীর অবদান রয়েছে। তবে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে হিন্দু ও মুসলমানকে এক করার সহজ এবং মোক্ষম কথাগুলো সব থেকে জোরালোভাবে লালনের কথাতেই পাওয়া যায়।
Published : 01 May 2024, 05:18 PM
ঊনবিংশ শতকে লালন আমাদের বঙ্গমুল্লুকে মরে বেঁচে টিকে থেকে মুসলমান হিন্দুঘরের অন্নের সাধ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়লেন লালনের জাত কী? লালনের ধর্ম কী? জবাব এলো তার গানে। তিনি সৃষ্টি করলেন জগতের সেরা গানগুলোর একটি। বিষয় তাৎপর্যের গুরুত্ব বিবেচনায় পুরো গানটিই এখানে তুলে ধরছি:
“সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে
লালন বলে জাতের কি রূপ
দেখলাম না এই নজরে।।
সুন্নত দিলে হয় মুসলমান
নারীলোকের কি হয় বিধান।
বামন চিনি পৈতে প্রমাণ
বামনী চিনি কি করে।।
কেউ মালা কেউ তসবিহ গলে
তাইতে কি জাত ভিন্ন বলে।
আসা কিংবা যাওয়ার কালে
জাতের চিহ্ন রয় কারে।।
জগৎ জুড়ে জাতের কথা
লোকে গল্প করে যথাতথা।
লালন বলে জাতের ফাতা
ডুবাইছি সাধবাজারে।।”
এই গানেরই দুটি লাইন ফেইসবুকে প্রকাশ করার কারণে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে সঞ্জয় নামের এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেবার অভিযোগ আনা হয়েছে। এটাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে স্থানীয় জনতাকে উত্তেজিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। শেষতক পুলিশ বিদ্যুৎগতিতে ওই ব্যবসায়ীকে আটক করে জেলহাজতে ভরেছে।
এটাই প্রথম নয়। এর আগেও দেবাশিস নামের এক তরুণ লালনের গান ফেইসবুকে প্রকাশ করার কারণে একই রকম ঘটনা ঘটেছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে। শেষতক তা পুলিশ-আইন-আদালত হয়ে উচ্চ আদালতে গিয়ে সুরাহা হয়েছে। কিন্তু ভুক্তভোগী তরুণের হৃদয়ের ক্ষত শুকায়নি আজও। হয়তো শুকাবে না ইহকালেও। দেবাশিসের তুলনায় সঞ্জয় সৌভাগ্যবান। পরের দিনই তিনি জামিন পেয়েছেন।
লালনের গানের চরণ ফেইসবুকে দিয়ে কারাগারে যুবক, পরে জামিন
আরও বিশদ আলোচনায় যাবার আগে দুটি প্রশ্ন তুলতে চাই:
১. যাদের ধর্মীয় অনুভূতি এত ঠুনকো, কারণে-অকারণে যাদের আঘাত লাগে তাদের অনুভূতিকে জমা রাখার জন্য ‘অনুভূতি ব্যাংক’ উদ্ভাবন করা যায় কী? কিংবা তাদের জন্য অনুভূতি জাদুঘর করলে কেমন হয়?
২. দেশের নানা জায়গায় নানা সময়ে ধর্মীয় অনুভূতির অজুহাত নিয়ে একটার পর একটা অঘটন ঘটানোর উদাহরণ সামনে চলে আসছে। পুলিশি হস্তক্ষেপ ছাড়া ঘটনাগুলোর কোনো কূলকিনারা হচ্ছে না। শেষে না বিষয়টা এমন পর্যায়ে যায় যাতে আমরা একটি পুলিশি রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হই। তাহলে কি আমাদের সমাজব্যবস্থা পুরোটাই ভেঙে পড়ার উপক্রম? ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোসহ এত এত রাজনৈতিক সংগঠন ও তাদের সহযোগী, অঙ্গ এবং বন্ধুপ্রতিম মিলে কত কত কমিটি, নেতা-উপনেতা, পাতিনেতা, কর্মী-সমর্থক আমরা দেখি। তাদের ভূমিকাটা কী? পুলিশি উদ্যোগের আগে তো সামাজিক রক্ষাকবচ কিছু একটা থাকা দরকার। তা না হলে তো গ্রামে গ্রামে পুলিশ ফাঁড়ি দরকার হয়ে পড়বে।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ভাবনার দায়টা প্রথমত ক্ষমতাসীনদেরই নিতে হবে। টানা দেড় দশকের বেশি সময় ক্ষমতায় থেকে দায় অন্যদের ওপর চাপানোর সুযোগ খুব একটা থাকে না। তা শুনতে ভালোও লাগে না। মানুষ শুনতেও চায় না। রাজনৈতিক নেতারা আপ্তবাক্যের মতো বক্তৃতা করে যাবেন ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথা বলে যাবেন। আদতে জনজীবনে, সামাজিক বিবর্তনে তো সেই চেতনার প্রতিফলন আমরা খুব একটা দেখতে পাই না।
আজকে লালনের গান নিয়ে একটার পর একটা অঘটন ঘটানো হচ্ছে। অথচ রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে ক্ষমতাসীনসহ সকলেই চুপ। কালকে নজরুলকে নিয়ে একই ঘটনা ঘটবে, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে টানাটানি করবে। এক এক করে আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের অনেক কিছু টান দেবে। কবিতা, সাহিত্য, চিত্রকলা, নাট্যকলা, নৃত্যকলা— সবকিছুকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে। অথচ এই ঠুনকো ধর্মীয় অনুভূতি অন্যায়-অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতি আর যাবতীয় দুইনম্বরি এবং অনাচারের বিরুদ্ধে জেগে ওঠে না কেন? এই প্রশ্ন কি রাজনীতির দণ্ডমুণ্ডের কর্তাগণ ভেবে দেখেছেন? বেশি দূরে তাকাতে হবে না। এরকম ধর্মবাজি অনুভূতির ধোঁয়া তুলেই প্রতিবেশী একটি দেশে ঘটিবাটি গেরুয়া শাসন চালু হয়েছে। আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের তালেবানি উদাহরণ নাইবা তুললাম।
অনেকের স্মরণে থাকার কথা। বঙ্গবন্ধু বেতারে ফরিদা পারভিনের কণ্ঠে লালনের গান শুনে বলেছিলেন এই গানকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর তাগিদ ছিল সবকিছুকে বাঁচিয়ে রাখার, শুভবাদের পক্ষে সবকিছুকে ধারণ করার হিম্মত। আর তারই রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বহন করা আওয়ামী লীগের আমলে লালনকে কোন অজুহাতে এই তিক্ত বাস্তবতার মুখে পড়তে হচ্ছে বারবার।
দায়িত্বশীলদের উদ্দেশে বলতে চাই পূজা-পার্বণে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে, বৌদ্ধদের অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে আর খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উৎসব বড়দিনে গির্জায় গিয়ে ক্যামেরার সামনে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বুলি আওড়ালেই অসাম্প্রদায়িকতা কায়েম হয়ে যাবে না। তার কার্যকর প্রতিফলন থাকতে হবে দেশব্যাপী সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনতিক জীবনযাপনে।
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কতিপয় ধর্মবাজ ইউটিউবে, নানা জলসায় এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাইক লাগিয়ে যে হারে সাম্প্রদায়িক বয়ান মানুষের কানে উপর্যুপুরি ঢুকিয়ে দিচ্ছে সেখানে একটি সমাজের অসাম্প্রদায়িক হবার কতটুকু সুযোগ অবশিষ্ট থাকে?
এখানে একটি সত্য স্মরণ করা দরকার। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে যেমন ধর্মহীনতা নয়, তেমনি অসাম্প্রদায়িক সৃজনশীল সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রকাশকেও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হিসেবে নেবার কোনো কারণ স্বাধীন বাংলাদেশে থাকতে পারে না। আপনি যে ধর্মের অজুহাতই সামনে নিয়ে আসুন না কেন।
ঊনবিংশ শতকে লালন দ্বিধাবিভক্ত বাঙালিকে হিন্দু ও মুসলমানের ভাগরেখা থেকে এক করার চেষ্টা করেছেন।মানুষকে মানুষ বলে চিনতে চেয়েছেন বলে, লিখেছেন “এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে।/ যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান/ জাতি গোত্র নাহি রবে।” লালনের সময়ও কম কণ্টকাকীর্ণ ছিল না। তবে তিনি শেষতক প্রাণে বাঁচতে পেরেছিলেন। আমার একটা জিনিস ভাবতে ভয় হয় আজকের এই সময়ে ধর্মীয় অনুভূতির তকমায় ধন্য ধন্য বঙ্গসন্তানেরা কী লালনকে প্রাণে বাঁচতে দিতেন? পরলোকগত লালনের কথার অনুভূতিই তারা নিতে পারছেন না। ঢাকার বিমানবন্দর চত্বরে লালনকে নিয়ে নির্মিত লালন ভাস্কর্যটিও ধর্মীয় অনুভূতির ঠিকাদারদের চাপের মুখে কর্তৃপক্ষ সরিয়ে নিয়েছে। তাহলে শরীয়তপুরের আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধর্মীয় অনুভূতিওয়ালাদের দোষ দিয়ে কী হবে?
আমরা নিকট ইতিহাসের খুব একটা পেছনে যেতে চাই না। কারণটা কী? ইতিহাসের পাঠ নিতে এত ভয় কীসের? লালন যে সময়ে জীবনের বাজিতে হিন্দু-মুসলমান ঘাত-প্রতিঘাতের পরে সিদ্ধিতে পৌঁছলেন আর কাজেকর্মে, কথায় ও গানে দেখালেন মানুষই সব, মানুষেই ধর্ম। সব মানুষ একই জাত, মানবজাতি, মানবধর্ম। লালনের আগে এবং পরে সমাজবিকাশ ও সংস্কারে অনেক মনীষীর অবদান রয়েছে। তবে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে হিন্দু ও মুসলমানকে এক করার সহজ এবং মোক্ষম কথাগুলো সব থেকে জোরালোভাবে লালনের কথাতেই পাওয়া যায়। আর এই কারণেই কী ধর্মকানা অনুভূতিপ্রবণ একদল ধর্মবাজের লালনকে নিয়ে এত ভয়? লালনের গানে কেন ও কীভাবে তাদের ধর্মীয় অনুভূতি খান খান হয়ে যায়?
লালন পরবর্তী সময়ে ভারতবর্ষের রাজনীতিতে শুভবাদের পক্ষে মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে সোহরাওয়ার্দী আর বঙ্গবন্ধু হয়ে আমাদের এই ভুবঙ্গের রাজনীতি হিন্দু-মুসলমানের বিভাজনের উর্ধ্বে উঠে বাঙালি ও বাঙালিত্বকে আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেছে, মানুষ হবার ব্রত নিয়েছে। চেতনায় পালক লেগেছে ধর্মনিরপেক্ষতার। তার সুন্দর উদাহরণ ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ঠিক একটু আগে ১৯৬০-এর দশকে একজন অসাম্প্রদায়িক বাঙালি লেখক তাৎপর্যপূর্ণ একটি সাহিত্যকর্ম রচনা করেছিলেন। শওকত ওসমানের ‘ক্রীতদাসের হাসি’ উপন্যাসটির কথা বলছি।
সম্প্রতি ঢাকাস্থ রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের প্রধান সাইদুর রহমান লিপনের নাট্যরূপে এবং নির্দেশনায় এই উপন্যাসের সুন্দর একটি নাট্যপ্রদর্শনী হয়ে গেছে ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায়।
১৯৬০ এর দশকে আমাদের দেশে পাকিস্তানি জেনারেল আইয়ুব খানের শাসনামলে বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করা হয়েছিল। নিষিদ্ধ হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এমন একটি কঠিন সময়ে শওকত ওসমান রূপকের আশ্রয় নিয়ে বাগদাদে আব্বাসীয় খিলাফতের পঞ্চম খলিফা হারুনর রশীদের শাসনামলকে উপজীব্য করে ১৯৬১ সালে লিখলেন ‘ক্রীতদাসের হাসি’ উপন্যাসটি।
খলিফা হারুনের ক্রীতদাস ছিলেন তাতারী নামের সুদর্শন উচ্ছ্বল এক তরুণ। তাতারীর সঙ্গে প্রেম প্রাসাদের এক সুন্দরী পরিচারিকার। পরিচারিকা সম্রাজ্ঞীর সমর্থন ও সহযোগিতায় গভীর রাতে তাতারীর সঙ্গে নির্জনে অভিসারে আসে। নিশীথে তাদের অভিসারের মুহূর্তে তাতারীর উচ্ছ্বল হাসি খলিফার গোচরে আসে। তা খলিফার ভাবনার কারণ হয়। তিনি তাতারীকে ঈর্ষা করেন। এক পর্যায়ে তাতারীর প্রণয়ীকে তিনি জোরপূর্বক তার কব্জায় নিয়ে নেন।
দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে তাতারীর আশ্রয় হয় খলিফার প্রাসাদে একজন রাজকীয় মেহমান হিসেবে। তার হাসি আর থাকে না। রাজকীয় আতিথেয়তাও তিনি উপেক্ষা করেন তাচ্ছিল্যের সঙ্গে। রাজার হুকুমে হাসবে না রাজঅতিথি কত বড় বুকের পাটা তাতারীর। তাতারীর দ্রোহ ‘দাস কেনা যায়, কিন্তু তার হাসি কেনা যায় না’, যত বড় খলিফাই তিনি হন। একজন ক্রীতদাসের মানুষ হিসেবে সার্বভৌমত্বের জয় এখানেই। এরপর তাতারীর পরিণতি যা হবার তাই হয়েছে ঈর্ষাকাতর ক্ষমতাধর খলিফা হারুনের প্রাসাদে।
১৯৬২ সালে প্রকাশিত উপন্যাসটিতে রূপকের আশ্রয় নিয়ে শওকত ওসমান নিগৃহীত অবহেলিত বঞ্চিত নিপীড়িত বাঙালির পক্ষে আইয়ুব খানকে আদতে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন। কিন্তু অবাক করার ব্যাপার হলো এই আইয়ুব খানই ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সরকারের প্রেসিডেন্ট পুরস্কার দিয়েছিলেন শওকত ওসমানকে। এর পেছনে দুই ধরনের গল্প কথিত আছে। একটি গল্প হচ্ছে আইয়ুব খান ‘ক্রীতদাসের হাসি’ উপন্যাসটির তাৎপর্য জেনেও না জানার ভান করেছেন, বুঝেও না বোঝার ফন্দি করেছেন।
এর পরের কথনটি এরকম: আইয়ুব খান আদতে উপন্যাসটির তাৎপর্য এবং রূপকের আড়ালের কটাক্ষ ধরতেই পারেননি। তবে তা যাই হোকে, শওকত ওসমানের কপাল ভালো, তিনি কোনো ফ্যাকড়ার মধ্যে পড়েননি।
একবিংশ শতকে এসে স্বাধীনতার ছয় দশকে পা দিয়ে আমরা বারবার কেন ফ্যাকড়ার মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। কার্টুন আঁকলে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে, পয়লা বৈশাখ উদযাপন করলে ধর্মবাজদের পিলে চমকে যায়, বাউলের গানে একদল তাদের অনুভূতিতে ফুটো খুঁজে পান। ধর্মীয় অনুভূতিওয়ালাদের সমস্যা লালনকে নিয়ে, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে, নজরুলকে নিয়ে, আহমদ শরীফকে নিয়ে, শামসুর রাহমান আর হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে। এরকম অনুভূতির লাগাম যদি এখন টেনে ধরা না হয়, একদিন এই অনুভূতিওয়ালা ন্যাকা ভণ্ডরা লালনকে আক্রমণেই থেমে থাকবে না। একসময় টান দেবে জাতির গোটা অস্তিত্ব নিয়েই।
আমাদের এই সময়ে সেই অর্থে অষ্টম শতকের বাগদাদের খলিফা হারুনের কিংবা ১৯৬০-এর দশকের আইয়ুব খানের শাসনামলের মাজেজা না থাকলেও, নাটকটির প্রাসঙ্গিকতা অন্য তাৎপর্য বহন করে। এখন আমাদের টাকাওয়ালা পদ-পদবি আর ক্ষমতার স্পর্শে প্রশাসনের ভেতরে এবং বাইরে নানা স্তরে অনেকের হাবেভাবে কাজেকর্মে আর আমলনামায় এক-একজন এক-একটা ‘মাইক্রো বাদশা হারুন’ হয়ে যান।
এরকম একটা পরিস্থিতিতে ঊনবিংশ শতকে লালনের অনন্যসাধারণ সৃষ্টি ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে’ গানটিও বাঙালির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে। অনুভূতির এই নিষ্ঠুর খেলা বন্ধ হওয়া দরকার। তিক্ত এই বাস্তবতায় আমাদের ‘অনুভূতির নিরাপত্তায়’ নীতিনির্ধারকরা কী করণীয় ঠিক করেন তার ওপর নির্ভর করবে বাঙালির অসাম্প্রদায়িকতার কি রূপ এই জগতে।