স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে দলের সবশেষ অবস্থান কী, এই প্রশ্নে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “কাউকে বাধা দেওয়া হবে না। আমাদের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উপর কোনো চাপ থাকবে না।”
Published : 12 Dec 2023, 12:38 AM
আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর আগেই নরসিংদী, ফরিদপুর, হবিগঞ্জসহ কিছু জেলার কয়েকটি আসনে ‘তর্কযুদ্ধ’, পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আর সমর্থকদের দুই পক্ষের মধ্যে নানা ঘটনায় জমে উঠেছে ভোটের মাঠ।
বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের বর্জনের মুখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এবার আগে থেকেই আলোচনায় ‘আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ যুদ্ধ’।
পাল্টাপাল্টি বক্তব্য বাদানুবাদ, দুই পক্ষের অনানুষ্ঠানিক ভোট প্রার্থনায় ফরিদপুর-৪ আসনটি সারা দেশেই পরিচিতি পেয়ে গেছে।
নরসিংদী সদরে নৌকা পেতে যাওয়া সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হিরু ও পৌরসভার দুইবারের মেয়র এবং দলের জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামানের সমর্থকদের মধ্যে এরই মধ্যে উত্তেজনা স্পষ্ট হয়েছে।
সারাদেশে এমন আসনের সংখ্যা শতাধিক, যেখানে এরই মধ্যে নৌকার প্রার্থী নিজ দলের ভেতরেই স্থানীয় পর্যায়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন।
এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে কেউ বর্তমান সংসদের সদস্য, কেউ সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য, কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান বা পৌরসভার মেয়রের পদ ছেড়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। ফলে নির্বাচন করার অতীত অভিজ্ঞতা তাদের আছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার যাচাইবাচাইয়ে বাদ পড়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি অংশ আপিলেও প্রার্থিতা ফিরে পাচ্ছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত কত আসনে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে লড়াই হয়, তা জানার জন্য মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী করার নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সবশেষ সিদ্ধান্ত কী- এই প্রশ্নে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহিত করা হয়েছে। কাউকে বাধা দেওয়া হবে না। আমাদের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উপর কোনো চাপ থাকবে না।”
বিএনপি না থাকায় আগামী নির্বাচনে লড়াই কাদের মধ্যে দেখছেন- এই প্রশ্নে রাজনৈতিক বিশ্লেষক শান্তনু মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাতীয় পার্টি অনেক জায়গায় হয়ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।”
আরও পড়ুন:
বেশি ভোট পড়লে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা আসবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বতন্ত্র ও নৌকার লড়াইয়ে ‘মল্লযুদ্ধ’ নয়: কাদের
বাকিগুলোতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের লড়াই দেখতে পারছেন কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এ জন্য আমাদের আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। যদি আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্রদের বসিয়ে না দেয়, তাহলে এক ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হবে।”
আওয়ামী লীগ নেতারা ঢালাওভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে সহিংসতার আশঙ্কাও করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, “অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র বা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হার মেনে নিতে চাইবে না। সেক্ষেত্রে সংঘাতের একটা শঙ্কা তো থেকেই যায়।”
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের একাংশের পাশাপাশি বিএনপি অনুসারীদের সমর্থন টানতে পারলে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবেন কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এই সুবিধাটা এলাকাকেন্দ্রিক। বিএনপির কট্টর সমর্থকরা ভোট দিতেই আসবে না। তবে সাধারণ বিএনপি সমর্থকরা অনেকে ভোটকেন্দ্রে যাবেন বলে মনে হয়। এক্ষেত্রে ভোটের আমেজ, প্রার্থীর এলাকা, প্রার্থীর কর্মীদের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক- এগুলো কাজ করতে পারে।”
স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে ভোট জমিয়ে তোলার কৌশল
এবার আওয়ামী লীগের শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মাঠে থাকতে উৎসাহ দেওয়া স্পষ্টতই ভোটের লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি এবং কেন্দ্রে ভোটার বাড়াতে ক্ষমতাসীন দলের কৌশল।
জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ভোট সারা দেশে সমানভাবে নেই। বৃহত্তর রংপুর ও সিলেট বিভাগে এক সময় তাদের আধিপত্য থাকলেও তা কমেছে।
নতুন দল তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম বা বিএসপির শক্তিও পরীক্ষিত নয়, ধর্মভিত্তিক দলগুলো কোনো আসনে কখনও একক শক্তিতে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দেওয়ার মত অবস্থানে যেতে পারেনি।
এর মধ্যেও এবার নির্বাচন নিয়ে আসনে আসনে ভোটারদের মধ্যে নানা হিসাব নিকাশের কারণ হল, শুরু থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাদের তৎপরতা।
আরও পড়ুন:
ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে কাজ করার নির্দেশ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সভায়
২০১৪ সালেও বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের মধ্যে যে কয়েকটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল, তার প্রতিটিতেই লড়াই ছিল নৌকার প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে।
সেই নির্বাচনে ১৫৩ আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পর ভোট হয় বাকি ১৪৭টি আসনে। এর মধ্যে ১৬টি আসনে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যারা মূলত আওয়ামী লীগেরই নেতা।
সেবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের স্বাগত জানায়নি আওয়ামী লীগ। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন।
গত ২৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণার দিন দলের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মনোনয়নপ্রত্যাশীকে গণভবনে ডেকে নিয়ে ‘বিশেষ বার্তা’ দেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণভবনে যাওয়া নেতারা জানান, শেখ হাসিনা সেদিন মূলত দুটি বার্তা দেন । প্রথমত, ডামি প্রার্থী রাখা; দ্বিতীয়ত, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাউকে ‘ডিস্টার্ব’ না করা।
এরপর বিপুল উৎসাহে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলনিরপেক্ষ হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতারা। তিনশ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা পড়ে ৭৪৭টি।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের যাচাই বাছাইয়ে তাদের মধ্যে ৪২৩ জন বাদ পড়ে যান। তবে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে অনেকে আবার প্রার্থিতা ফিরেও পাচ্ছেন।
আপিল শুনানির পর প্রথম দিন যে ৫৬ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৩২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
দ্বিতীয় দিন বৈধ ঘোষণা হয়েছে ৫১ জনের মনোনয়নপত্র। তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ২৬ জন।
এই আপিল শুনানি চলবে আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যত বেশি আসনে মনোনয়ন ফিরে পাবেন, নৌকা পাওয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জন্য চাপ তত বাড়বে।
নরসিংদীতে ভোটের হাওয়া গরম
জেলার ৫টি আসনের সব কটিতেই নৌকার প্রার্থীরা নিজ দলের একাংশের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন। সেখানে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট করে নির্বাচনে জয়ের কৌশলও জানেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে দুই ভাগ হয়ে গেছে এসব আসনে। কেউ নৌকার পক্ষে, কেউ বলছেন ‘নৌকার লোকরা পলাইবার জায়গা পাইব না’। যিনি এমন কথা বলেছেন, স্বাভাবিক চিত্র থাকলে তার নৌকার পক্ষে ভোট করার কথা ছিল।
নরসিংদী-১ আসনে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হিরুকে নৌকা প্রতীক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী দুইবারের পৌর মেয়র কামরুজ্জামানের দলে প্রভাব ব্যাপক। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
আরও পড়ুন:
‘হিরুর নৌকার লোকেরা পলাইবার জায়গা পাবে না’
কামরুজ্জামানকে পেটানোর হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর জেলে আছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন। অন্যদিকে ‘হিরুর (নৌকার প্রার্থী) লোকেরা পলাবার জায়গা পাবে না’ বক্তব্য দিয়ে মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ আছেন বিপাকে।
নরসিংদী-২ আসনে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপকে চ্যালেঞ্জ করেছেন এই আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য আহমদুল কবিরের বড় ছেলে আলতামাশ কবির। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য।
নরসিংদী-৩ আসনের সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূইয়া মোহন মনোনয়ন না পেয়ে ভোটের বাইরে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে ফজলে রাব্বি খানকে। সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা চ্যালেঞ্জ করেছেন তাকে।
নরসিংদী-৪ আসনে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনকে ‘দেখিয়ে দিতে চান’ মনোহরদী উপজেলার পাঁচবারের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বীরু বলেন, “মানুষ সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারলে আমাকে হারানো সম্ভব না। দুই উপজেলার মানুষই আমাকে ভালোবাসে।”
অন্যদিকে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “এই অঞ্চলে আমার দীর্ঘ দিনের রাজনীতি, জনগণ আমার সঙ্গে আছে বলেই এতবার নির্বাচিত হয়ে আসছি। এবারও নির্বাচিত হব।”
নরসিংদী-৫ আসনে পাঁচবারের সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু গত কয়েক বছর ধরেই দলীয় কোন্দলের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরীর পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজু বিরোধীরা। মিজানুরও উপজেলা নির্বাচনে জিতে জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়েছেন আগে।
ভাঙ্গার পর ‘স্পটলাইটে’ ফরিদপুর সদর
দশম সংসদ নির্বাচন থেকেই ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের লড়াই হয়ে আসছে। ২০১৪ সালে বিএনপির বর্জনের মধ্যেও নৌকা নিয়ে লড়া কাজী জাফর উল্যাহ ও স্বতন্ত্র মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে ভোট পড়ে ৫৩ শতাংশের বেশি। জেতেন নিক্সন।
২০১৮ সালেও মুখোমুখি হন দুই প্রার্থী, সঙ্গে ছিলেন বিএনপির খন্দকার ইকবাল হোসেন। সেবার নিক্সন জেতেন ৪৮ হাজার ভোটে। পাত্তাই পাননি বিএনপির প্রার্থী।
এবারও নিক্সন মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী। আওয়ামী লীগ প্রতীক দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাফর উল্যাহকেই।
এবার ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনও যোগ হয়েছে আলোচনায়। সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে শামীম হককে। ব্যবসায়ী নেতা এ কে আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতেই পাল্টে গেছে ভোটের হাওয়া। আওয়ামী লীগের একটি অংশ তার পাশে দাঁড়িয়ে গেছে।
ফরিদপুর-১ ও ২ আসনেও নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে আছেন।
আরও পড়ুন:
ফরিদপুরে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত ২০
ফরিদপুরে নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদেরকে মারধরের অভিযোগ
ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি শীপ্রা গোস্বামী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার ফরিদপুরের সব আসনেই ক্ষমতাসীন দলেই স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। এ কারণে নির্বাচনটি হবে উৎসবমুখর। আশা করছি ভোটারের উপস্থিতও ভালো থাকবে।”
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, “কেন্দ্র থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাহলে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের দোষ কোথায়? এতে বরং ভোটাররা বেশি কেন্দ্রে আসবে, তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও মূল্যায়িত হবে।”
দৃষ্টি থাকবে আরও যেসব আসনে
কিশোরগঞ্জ-১ আসনে তৈরি হয়েছে চমকপ্রদ ঘটনা। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নুর লিপি।
তারই আপন ভাই সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলাম সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বাছাইয়ে বাদ পড়ে গেলেও নির্বাচন কমিশনে আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন লিপির চাচাত ভাই সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুও।
আসনটিতে সম্ভাব্য শক্তিশালী প্রার্থী শরীফ আহম্মেদ সাদী। বাছাইয়ে তার মনোনয়নও বাতিল হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন তিনিও।
আরও পড়ুন:
সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল চান জাহিদ ফারুক
বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পনিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী। দুই নেতা পরস্পরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন।
ভোলা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন ২০০৮ সালে নৌকা নিয়ে জেতা জসিম উদ্দিন।
নবম সংসদ নির্বাচনের পর উচ্চ আদালতের রায়ে জসিম উদ্দিনের সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়, পরে উপনির্বাচনে সংসদে যান শাওন; দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনেও জেতেন।
পটুয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের নৌকার বিপক্ষে লড়বেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হাসিব আলম তালুকদার।
গাজীপুর-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান। তিনি এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগ এবার মনোনয়ন দিয়েছে তিনবারের সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকিকে।
সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল মমিন মণ্ডল। তার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী, যিনি এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী।
ইসির আপিলে চট্টগ্রামে নতুন সমীকরণ
চট্টগ্রাম-১ আসনে সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুব রহমান রুহেলকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়ে গিয়েছিল বাছাইয়ে। তিনি আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর এলাকায় তৈরি হয়েছে নতুন হিসাবনিকাশ।
চট্টগ্রাম-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম আল মামুন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী চন্দনাইশ উপজেলার সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার চৌধুরীর অনুসারীরা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পরোক্ষ প্রচার শুরু করে দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৮ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের নগর কমিটির কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামের লড়াইও জমে ওঠার আভাস আছে। বাছাইয়ে ছালামের মনোনয়ন বাতিল হলেও আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনজুর আলম চট্টগ্রাম-১০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পর আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন বাচ্চুর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।
মনজুর ২০০৯ সালে বিএনপির সমর্থনে মেয়র নির্বাচিত হলেও পরে ঘোষণা দিয়ে দল ছাড়েন। এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি।
চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগের এম এ লতিফের প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন, তার পক্ষ নিয়েছে নগর আওয়ামী লীগের একটি অংশ।
চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নৌকার আবু রেজা মো. নেজামুদ্দীন নদভীকে চ্যালেঞ্জ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এ মোতালেব। ভোটে আসতে তিনি সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন।
তার মনোনয়নপত্র জমার দিন কয়েক হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা গেছে। বাছাইযে বাতিল হলেও আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান।
বর্তমান সংসদ সদস্যরাও স্বতন্ত্র প্রার্থী
রাজশাহী-৪ আসনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুল হক।
সাতক্ষীরা-২ আসনে নৌকা না পেয়ে দলীয় প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবুর বিরুদ্ধে লড়াই করবেন দুই বারের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি।
যশোর-৪ আসনে মনোনয়ন না পেলেও ভোটের ময়দান ছাড়েননি সংসদ সদস্য রণজিত রায়। তার লড়াই হবে নৌকার এনামুল হক বাবুলের সঙ্গে।
আরও পড়ুন:
পঙ্কজের প্রার্থিতা বাতিল ও নিজেরটি ফিরে চেয়ে শাম্মীর আপিল
বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহমেদের বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। শাম্মীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে যাচাইবাছাইয়ে। নির্বাচন কমিশনে আপিলে ঝুলছে তার ভাগ্য।
ময়মনসিংহ-৩ আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদ। আওয়ামী লীগ এবার সেখানে প্রার্থী করেছে নীলুফার আনজুম পপিকে।
ময়মনসিংহ-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুস সালাম। বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আছেন লড়াইয়ে।
জামালপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। তাকে পাল্টে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে মো. মাহবুবুর রহমানকে।
গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজও স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনি লড়বেন নৌকার রুমানা আলীর সঙ্গে।
হবিগঞ্জ-২ আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খান ভোটে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র হিসেবে। তার লড়াই হবে নৌকার ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েলের সঙ্গে।
সুনামগঞ্জ-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। তিনি হারাতে চেষ্টা করবেন নৌকার রনজিত চন্দ্র সরকারকে।
ডাকসাইটে রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর সুনামগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করে তার স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তকে। এবার মনোনয়ন পেয়েছেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ। জয়া তার প্রয়াত স্বামীর আসনটি বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দিতে নারাজ।
কুমিল্লা-১ আসনে নৌকার টিকেট পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর। বর্তমান সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভুঁইয়া ছেড়ে দেননি ভোটের মাঠ। সঙ্গে দাঁড় করিয়েছেন স্ত্রী মাহমুদা আক্তারকেও।
আরও পড়ুন:
`কম্পিটিশন তো দূরের কথা পারলে সামনে দাঁড়া’, স্বতন্ত্র প্রার্থীকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার হুমকি
একই চিত্র কুমিল্লা-৮ আসনে। সংসদ সদস্য নাসিমুল আলম চৌধুরী নজরুল নৌকা না পেয়ে হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। দাঁড় করিয়েছেন স্ত্রী তাহমিনা চৌধুরীকেও। এখানে নৌকার প্রার্থী আবু জাফর মো. শফিউদ্দিন শামীম।
কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমও লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে সালাউদ্দিন আহমেদকে। খেলাপি ঋণের অভিযোগে মনোনয়ন বাতিল হলেও নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন তিনি।
একই আসনে দুই সংসদ সদস্য
সংসদ সদস্যরা পদে থেকে নির্বাচন করতে পারছেন দশম সংসদ নির্বাচন থেকে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর এখন ভোট হয় সংসদের মেয়াদের শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে। এই সময়ে সংসদ বসবে না, কিন্তু তা ভেঙেও দেওয়া হবে না।
এর আগ পর্যন্ত সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন হত, ফলে সংসদ সদস্যদের পদে থেকে ভোটের সুযোগ ছিল না।
আরও পড়ুন:
কুমিল্লা সদরে দুই সংসদ সদস্যের লড়াই
‘৯ হাজার ভোট পিটাইয়া দিব’, আওয়ামী লীগ নেতার ভিডিও
কুমিল্লা-৬ আসনে তিন বারের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারকে আবার প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। দলে তার এক সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রয়াত আফজল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। সীমা সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য।
মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম। তিনিও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য।
হবিগঞ্জ-১ আসনে নৌকার মুশফিক হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে লড়ছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী।
মন্ত্রীদেরও ছাড় নয়
গাজীপুর-১ আসনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল।
সিলেট-১ আসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে চ্যালেঞ্জ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান ভূইয়া। তিনি ভোটে দাঁড়াতে রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন।
নরসিংদী-৪ আসনে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনকে চ্যালেঞ্জ করেছেন মনোহরদী উপজেলার পাঁচবারের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু।
পিরোজপুর-১ আসনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমও পড়বেন লড়াইয়ে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য একেএমএ আউয়াল সেখানে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী।
যশোর-৫ আসনে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি ইয়াকুব আলী।
হবিগঞ্জ-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর সঙ্গে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইয়েদুল হক সুমন।
গত কয়েক বছরে সুমনের ব্যাপক পরিচিতি গড়ে উঠেছে। এলাকার তরুণরা তার পাশে। মাহবুব আলীর ভরসা চা বাগানের ভোট। এই ভোটের ৯৫ শতাংশের বেশি বরাবর নৌকায় পড়ে আসছে।
গাজীপুর-২ আসনে যুব ও ক্রীড়া প্রতি জাহিদ আহসান রাসেলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আলিম উদ্দিন বুদ্দিন ও মহানগর যুবলীগের যুগ্ন-আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম।
নেত্রকোণা-২ আসনে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়।
আরও পড়ুন:
স্বতন্ত্রের রেকর্ড: প্রতিদ্বন্দ্বিতার হাতিয়ার না শঙ্কার
নির্বাচনি আচরণবিধি: নৌকার প্রার্থী গোলাপকে তলব
আপিলের দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন যারা