মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগম সিদ্দিকী এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
Published : 06 Dec 2023, 10:24 PM
‘ভাই-ব্রাদারদের নিয়ে নৌকা প্রতীকের জন্য নয় হাজার ভোট ছাপ মেরে দেবেন’- মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার এক আওয়ামী লীগের এমন একটি ভিডিও বক্তব্য ছড়িয়েছে।
এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মৃধা বুধবার বলেছেন, তার সেই বক্তব্য খণ্ডিত প্রকাশ করা হয়েছে।
মাদারীপুর-৩ সংসদীয় আসনে (কালকিনি-ডাসার-মাদারীপুর সদর উপজেলার একাংশ) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। তিনি এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যও।
সেই নির্বাচন নিয়ে ২৯ নভেম্বর নেতাকর্মীদের সঙ্গে কালকিনি উপজেলার শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের মিয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে আলোচনার সময় সাবেক চেয়ার সিরাজুল এসব কথা বলেন। তখন সেখানকার কেউ এটি ভিডিও করেন।
মঙ্গলবার রাত থেকে তার সেই বক্তব্য ফেইসবুকে ছড়ায়; বুধবার সেটি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
২৬ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে সিরাজুলকে বলতে শোনা যায়, “…এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের ভোট আমি, ৯ হাজার ভোট আমি পিটাইয়া (ব্যালটে সিল) দিবো। আমি শিওর দিলাম। ভাই-ব্রাদারকে নিয়া। সবার সামনে প্রতিশ্রুতি দিলাম।
“হাতে-পায় ধরিয়া লাগলেও আমি পিটাইয়া দিবো। আমি একা নই, ভাই-ব্রাদারকে সঙ্গে নিয়া ভোট পিটাইয়া দিবো। এখানে এমপি হইলে আরও ৫-৭টা ইউনিয়নও পিটাইতে হবে।”
তার এই বক্তব্য নিয়ে এরই মধ্যে ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগম সিদ্দিকী সরকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
তাহমিনা বেগম সিদ্দিকী কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি এর আগে উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।
স্বতন্ত্র এই প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে এর আগে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন; যার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি নৌকার প্রার্থীকে তলব করেছিল।
আচরণবিধি লঙ্ঘনে গোলাপের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ স্বতন্ত্র তাহমিনার
আচরণবিধি ভঙ্গ কোথায় করলাম? প্রশ্ন গোলাপের
এরপর আওয়ামী লীগের প্রার্থীও স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে আরেকটি অভিযোগ দেন।
দুই প্রার্থীর এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যেই নৌকা প্রতীকের সমর্থক আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল হক মৃধার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা ছড়াল।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম সিদ্দিকীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহিন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এদিকে কালকিনিতে সিরাজ মৃধা নৌকা প্রতীকে ভোট পিটিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘোষণা দিয়েছেন।
“আসলে সিরাজুল মৃধার এই বক্তব্য হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই না। তিনি পাগল হয়ে গেছেন মনে হয়। কালকিনিতে এই ধরনের কোনো অন্যায় আমরা হতে দেব না। ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, আমরা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে সেই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই”, বলেন তৌফিকুজ্জামান শাহিন।
ভিডিও বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মৃধা বলেন, “ফেইসবুকে যে ভিডিও ছড়িয়েছে সেই ভিডিওতে আমার পুরো বক্তব্য আসেনি। ওই ভিডিওর আগে ও পিছে আরও কথা ছিল। আংশিক কথা ছড়িয়ে পড়েছে।”
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ বলেন, “এই ঘটনার একটি লিখিত অভিযোগ আমি পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটিকে পাঠানো হয়েছে।”